এগিয়ে যান এবং বাতাসে দৌড়ান - ইয়েরসেন শিভারের "চ্যাম্পিয়নশিপ স্বপ্ন"
2024-07-06 20:25:30

বরফের মধ্যে ঘোড়ার পিঠে চড়ে আটজন যুবক একে অপরকে ধাওয়া করছিল, এক টুকরো ভেড়ার চামড়ার জন্য ক্রমাগত লড়াই করছিল তারা। পাশ থেকে একজন সওয়ার এসে ভেড়ার চামড়া ছিনিয়ে নিয়ে যায়! দর্শকরা করতালি আর উল্লাসে ফেটে পড়েন।

এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ইভেন্ট তিয়াওইয়াং (ভেড়া ধরা)-এর একটি প্রদর্শনী; যা উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং অঞ্চলের ইলি কাজাখ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সিনইউয়ান জেলার নালাথি পর্যটন এলাকায় দেখা যায়। তিয়াওইয়াং-এ অংশগ্রহণকারী তরুণরা সবাই নালাথি চ্যাম্পিয়ন ঘোড়া দল সমবায় থেকে এসেছে।

এখানে আসা অনেক পর্যটকই কৌতূহলী হবেন, কেন অশ্বারোহী দলকে "চ্যাম্পিয়ন" বলা হয়। এটি অশ্বারোহী দলের অধিনায়ক ইয়েরসেন শিভারের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু হয়েছিল।

ইয়েরসেন শিনইউয়ান জেলার একজন স্থানীয় কাজাখ যুবক। তার শারীরিক গঠন খুব ভাল এবং ছোটবেলা থেকে ক্রীড়া খাতে তার প্রতিভা দেখা যায়। তিনি বলেন: "নালথি তৃণভূমির ভালো পরিবেশ আমাকে একটি চমত্কার শরীর দিয়েছে। আমি মাত্র দুই বছর বয়সে ঘোড়ায় চড়া শুরু করি। যখন আমার বয়স ১২ বছর, তখন আমি মধ্যম ও দূরপাল্লার দৌড় শুরু করি, তখন থেকে ক্রীড়া জগতে প্রবেশ করি।"

যখন তিনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছিলেন, তখন ইয়েরসেন তার শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের নির্দেশনায় পেশাদার শারীরিক প্রশিক্ষণের পথে যাত্রা করেন। সিনচিয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়, তিনি টানা চার বছর সিনচিয়াং ইউনিভার্সিটি গেমসে ৫০০০ মিটার এবং ১০,০০০ মিটার দূর-দূরত্বের দৌড়ের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড খেলা ছাড়াও, ইয়েরসেন ক্রস-কান্ট্রি দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতার, ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং এবং অন্যান্য খেলাধুলায় জড়িত হন এবং কয়েক ডজন গণক্রীড়া এবং প্রতিযোগিতামূলক ক্রীড়া ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন।

তার চমত্কার ফলাফলের কারণে, ইয়েরসেনকে ২০১৯ সালে চাইনিজ ন্যাশনাল ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং দলে নির্বাচিত করা হয়। কঠিন প্রশিক্ষণের পর, তিনি বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিতে ২০২০ সালে চাইনিজ ন্যাশনাল ক্রস-কান্ট্রি স্কিইং ট্রেনিং দলে প্রবেশ করেন এবং দলে প্রথম স্থান অধিকার করেন। দুর্ভাগ্যবশত, ইনজুরির কারণে, বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের জাতীয় দলের চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে যান। তা সত্ত্বেও, তিনি এখনও চীন জাতীয় ক্রস-কান্ট্রি স্কি সেন্টারে টেস্ট স্কেটার হিসাবে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে অবদান রাখেন।

শীতকালীন অলিম্পিকের পর, ইয়েরসেন অবসর নেন এবং দেশের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

২০২৩ সালের মার্চ মাসে, ইয়েরসেন নালাথি চ্যাম্পিয়ন ঘোড়া টিম কোঅপারেটিভ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এক সময়ে দরিদ্র গ্রামের গ্রামবাসীদের সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি স্থানীয় গ্রাম দলীয় শাখা এবং নালাথি সিনিক এরিয়া ম্যানেজমেন্ট কমিটির সহায়তায়, ঘোড়া টিম কোঅপারেটিভ গঠন করে নালাথি এরিয়াল গ্রাসল্যান্ড সিনিক এরিয়া থিয়ানমুথাইতে পর্যটকদের সেবা দেন। আশেপাশের পশুপালকরা তাদের নিজস্ব ঘোড়া নিয়ে যায় এবং পর্যটকদেরকে নির্ধারিত রুট অনুযায়ী ঘোড়ায় চড়ার অভিজ্ঞতা দেয়। "পিক ট্যুরিস্ট মরসুমে, বৃহত্তম ঘোড়ার দলটিতে ২০০ ঘোড়া হয়।" ইয়েরসেন বলেছিলেন।

সেলিকপোলি নুরলানবাই, তায়াসু গ্রামের অধিবাসী, একসময় গ্রামের একজন দরিদ্র পরিবারের সদস্য ছিলেন। তিনি ইয়েরসেনের আমন্ত্রণে অশ্বারোহী দলে যোগ দেন। এই গ্রীষ্মের শীর্ষ পর্যটন মৌসুমে, তার মাসিক আয় ১০,০০০ হয়। যদিও নালাথি সিনিক এলাকায় শীতকালে যাত্রী কম থাকে, তবুও তিনি প্রতি মাসে ৬০০০ থেকে ৭০০০ ইউয়ান উপার্জন করতে পারেন।

অবসর নেওয়ার পর, ইয়েরসেনের এখনও "চ্যাম্পিয়নশিপের স্বপ্ন" আছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রথম শীতকালীন গেমসে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের প্রাক-ম্যাচ প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য, নালাথি যুব স্কি দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইেরসেন স্কি দলের প্রধান কোচ হন। স্থানীয় সরকার স্কি দলকে বিনামূল্যে স্কি সরঞ্জাম সরবরাহ করে এবং প্রশিক্ষণের স্থানের জন্য স্নো-প্রেসিং সরঞ্জাম সরবরাহ করে।  সরকার ক্রীড়াবিদদের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট খরচও বহন করেছিল। ইয়েরসেনের মতে, স্কি দলের শিশুরা দ্রুত উন্নতি করেছে এবং তাদের মধ্যে দুজন যথাক্রমে বেইজিং দল এবং সিনচিয়াং দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছে এবং পেশাদার ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠেছে।

 

"ঘোড়া দলটিকে 'চ্যাম্পিয়ন' বলা হয়, যার অর্থ সেরা পরিষেবা প্রদান করা এবং মনোরম স্থানের পরিষেবার মান উন্নয়নে অবদান রাখা।" ইয়েরসেন বলেন। একই সাথে, তিনি এটাও আশা করেন যে, যুব স্কি দল সব স্তরে স্কিইং ইভেন্টে চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারে।

একজন দূর-দূরান্তের দৌড় চ্যাম্পিয়ন এবং ক্রস-কান্ট্রি স্কিয়ার থেকে একজন স্কি কোচ এবং আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একজন নেতা- ইয়েরসেন তার পরিচয়ের রূপান্তর সম্পন্ন করেছেন। তিনি একা দৌড়ানো থেকে একদল লোককে "দৌড়াতে" নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যও অর্জন করেছেন। নালাথি গ্রাসল্যান্ডে শীতকাল দীর্ঘ তুষারক্ষেত্রে রূপালি রঙে আচ্ছাদিত হয়। ইয়েরসেন এবং তার ঘোড়ার দল আরও ভাল আগামীকালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

 (স্বর্ণা/তৌহিদ)