২৪তম শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা এসসিও শীর্ষসম্মেলন গত ৪ জুলাই কাজাখস্তানের আস্তানায় অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিভিন্ন দেশের নেতারা একত্রিত হন। এবারের সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস-সহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা অংশগ্রহণ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।
উল্লেখযোগ্য দিক:
বেলারুশ এবার এসসিও-তে যোগদান করেছে। বেলারুশকে সংস্থার ১০ম পূর্ণ সদস্য হিসাবে গ্রহণ করা হয়। একটি পর্যবেক্ষক দেশ থেকে সংস্থার সদস্য হয় বেলারুশ। এই সম্প্রসারণ সংগঠনের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই: ডক্টর জয়শঙ্কর শীর্ষসম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ পাঠ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে সন্ত্রাসবাদ যে কোনো রূপে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। মোদি আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপের আহ্বান জানান এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও নিয়োগ রোধ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এসসিও সম্প্রসারণ: শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা মূলত ২০০১ সালে চীন, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, রাশিয়া ও তাজিকিস্তান-সহ পাঁচটি সদস্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ধাপে ধাপে সংস্থায় ভারত, পাকিস্তান, ইরান যুক্ত হয়। এখন বেলারুশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এভাবে সংস্থাটি একটি উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
কৌশলগত নথি ও ঘোষণাপত্র
শীর্ষ সম্মেলন আস্তানা ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছে এবং জ্বালানি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, অর্থ এবং তথ্য নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫টি কৌশলগত নথি অনুমোদন করেছে। সংস্থার সদস্য দেশগুলো কাজাখস্তান দ্বারা প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ন্যায়বিচার, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ঐক্যের উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। আস্তানা ঘোষণা বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনে সংস্থার ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছে।
অন্যান্য রেজোলিউশন ও চুক্তি:
সংস্থার রাষ্ট্র প্রধানদের কাউন্সিলে সদস্যরা বেশ কয়েকটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
২০২৫-২০২৭ সাল নাগাদ সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলায় সহযোগিতা কর্মসূচি। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মাদকবিরোধী কৌশল এবং এর সাথে সম্পর্কিত অ্যাকশন প্রোগ্রাম। ২০৩০ সাল পর্যন্ত শক্তি খাতে সহযোগিতার কৌশল এবং ২০৩০ সাল নাগাদ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলের কর্ম পরিকল্পনা।
সংস্থার প্রকল্পের কার্যক্রমে অর্থায়ন ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্য। সংরক্ষিত এলাকা এবং ইকো-ট্যুরিজম খাতে সহযোগিতার উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এবং কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সংস্থার সদস্য দেশের সরকারগুলির মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষা সহযোগিতায় সম্মত হয়েছে।
চীন পরবর্তী মেয়াদের জন্য সংস্থার পালাক্রমিক সভাপতি রাষ্ট্র। সাত বছর পর ফের চীন এ দায়িত্ব গ্রহণ করছে। সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এবং এর মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
আস্তানায় ২৪তম এসসিও শীর্ষসম্মেলন আঞ্চলিক রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বেলারুশ সংস্থাটির ১০ম সদস্য হিসাবে যোগদান করেছে৷ শীর্ষসম্মেলনে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রচার, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠনে এসসিও’র ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে বেশ কিছু কৌশলগত নথি ও ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আঞ্চলিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এসসিও। সংস্থাটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নিবেদিত। এসসিও'র মাধ্যমে আঞ্চলিক অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা করে; যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সংগঠনটি প্রসারিত এবং শক্তিশালী হওয়ার সাথে সাথে আঞ্চলিক রাজনীতি এবং অর্থনীতির ভবিষ্যত গঠনে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।