‘সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা+’ শীর্ষসম্মেলনে সি’র বক্তৃতা
2024-07-05 14:36:22


জুলাই ৫: প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, স্থানীয় সময় গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেলে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায়, ‘শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা+’ শীর্ষসম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন  এবং ‘শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার ভালো পরিবার গড়ে তুলতে একসাথে কাজ করা’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন।

ভাষণে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, প্রথমবারের মতো, ‘শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা+’ শীর্ষক শীর্ষসম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। ভালো বন্ধু ও নতুন অংশীদারদের নিয়ে আলোচনা করতে সবাই একত্রিত হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, এ সংস্থার ধারণা নতুন যুগের পরিস্থিতিতে খুবই জনপ্রিয় এবং সদস্যরাষ্ট্রগুলোরও সারা বিশ্বজুড়ে অনেক বন্ধু রয়েছে। তিনি বলেন,

“বিশ্ব এখন একটি পরিবর্তনশীল যুগে দাঁড়িয়ে আছে। মানবজাতির অগ্রগতির পাশাপাশি, অনিরাপত্তা, অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তাও রয়েছে। আমাদের উচিত, ‘শাংহাই চেতনা’ মেনে চলা; এমন উন্নয়নপথ অনুসরণ করা, যা আমাদের নিজেদের জাতীয় পরিস্থিতি ও অঞ্চলের বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ; এবং যৌথভাবে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার জন্য একটি ভালো পরিবার গড়ে তোলা, যাতে সকল দেশের মানুষ শান্তিতে বাস করতে পারে, কাজ করতে পারে, এবং সুখী হতে পারে।”

সি চিন পিং তার বক্তৃতায় পাঁচ-দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেন। এই পাঁচটি দফা হচ্ছে: প্রথমত, ঐক্য ও পারস্পরিক আস্থার অভিন্ন পরিবার গড়ে তুলতে হবে। ‘শাংহাই চেতনা’ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি এই সংস্থার সাধারণ মূল্যবোধ এবং সর্বদা অনুসরণযোগ্য। আমাদেরকে অবশ্যই একে অপরের উন্নয়নপথকে সম্মান করতে হবে, মূল স্বার্থ রক্ষায় একে অপরকে সমর্থন দিতে হবে, মতপার্থক্য দূর করতে হবে, ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে, এবং কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যমে পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে হবে। চীন প্রস্তাব করছে যে, সদস্যদেশগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা বিনিময় জোরদার করবে এবং উপযুক্ত সময়ে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার রাজনৈতিক পার্টি ফোরাম আয়োজন করবে;

দ্বিতীয়ত, একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সাধারণ পরিবার গড়ে তুলতে হবে। সব দেশ নিরাপদ থাকলেই প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। নিরাপত্তা-সহযোগিতার প্রক্রিয়া ও উপায় উন্নত করা, নিরাপত্তার হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য একটি বিস্তৃত কেন্দ্র ও এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ ত্বরান্বিত করা, একটি মাদকবিরোধী কেন্দ্র গড়ে তোলা, গোয়েন্দা আদান-প্রদান জোরদার করা, এবং যৌথ অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন;

তৃতীয়ত, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অভিন্ন আবাসভূমি গড়ে তুলতে হবে। চীন ২০২৫ সালকে ‘শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার টেকসই উন্নয়নের বছর’ হিসাবে মনোনীত করার প্রস্তাব করেছে এবং "বেল্ট অ্যান্ড রোড"-এর উচ্চ-মানের যৌথ বাস্তবায়নের জন্য সকল পক্ষের সাথে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। পেইতৌ স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করতে এবং চাঁদে আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণে অংশ নেওয়ার জন্য চীন সকল পক্ষকে আহ্বান জানায়। চীন শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা ডিজিটাল এডুকেশন অ্যালায়েন্স প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে এবং এসসিও দেশগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জায়গা দিতে ইচ্ছুক;

চতুর্থত, সুপ্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্বের একটি অভিন্ন স্বদেশ গড়ে তুলতে হবে। ছিংতাও গ্রিন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম এবং উইমেনস ফোরামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সকল পক্ষকে স্বাগত জানায় চীন। আগামী পাঁচ বছরে চীন এসসিও দেশগুলোকে এক হাজার তরুণ-তরুণীর সফর বিনিময়ের সুযোগ দেবে;

পঞ্চমত, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের একটি সাধারণ পরিবার গড়ে তুলতে হবে। একটি সমান ও সুশৃঙ্খল বহুমেরুর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের জন্য যৌথভাবে সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতা চর্চা করা এবং বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত করতে হবে, এবং এর জন্য শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা শক্তি যোগাবে।

সি চিন পিং আরও বলেন, “চীন এই সংস্থায় তার অংশীদারদের সাথে একসাথে কাজ করতে এবং আরও দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে সামনে এগিয়ে  যেতে ইচ্ছুক। তবে, এসব দেশকে ‘শাংহাই চেতনা’ অনুসরণ করতে হবে। এতে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হবে।” (জিনিয়া/আলিম/ফেই)