২ জুলাই: জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন বেইজিং সফর হবে ‘আরেকটি ঐতিহাসিক সফর’, যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। ২ জুন, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন চীনা দূতাবাসে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবি’র সাংবাদিকদের এ’কথা জানান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, চীন এবং বাংলাদেশ ঘন ঘন বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময় প্রত্যক্ষ করেছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা গভীর করেছে। এবারের সফর নিয়ে উভয়পক্ষের গভীর প্রত্যাশা রয়েছে।
কয়েকদিন আগে, ২৭ জুন, বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাতাদের আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের দ্রুত সমাপ্তি ও উদ্বোধনের আগে আট বছরের কঠোর পরিশ্রমের জন্য ঠিকাদারের প্রশংসা করেন। আলোচনাকালে সেতুর ঠিকাদার প্রতিনিধি এবং চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ব্যুরোর পদ্মা সেতু প্রকল্প বিভাগের পার্টি ওয়ার্কিং কমিটির সম্পাদক হে শিউ শেং প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
বৈঠকে যোগদানকারী চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ব্যুরোর পদ্মা সেতু প্রকল্পের উপ-ব্যবস্থাপক শিয়ে শুয়ে ছিয়াং বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের সাথে সেই আনন্দের কথা স্মরণ করেন যখন ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর, পদ্মা সেতুর প্রথম স্টিল গার্ডার সফলভাবে স্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এখনও নির্মাণ প্রক্রিয়াটি বিশদভাবে মনে রেখেছেন, নির্মাণ প্রক্রিয়া চলাকালীন বিভিন্ন বৈশ্বিক-পর্যায়ের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য ঠিকাদারদের প্রশংসা করেন এবং উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশ সরকার সেতুর ঠিকাদারদের বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে ভুলবে না।”
২০২২ সালের ২৫ জুন, চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ব্যুরো দ্বারা নির্মিত বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর উপরের সড়ক যোগাযোগ চালু হয়। বাংলাদেশী সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, গত দুই বছরে সেতুতে যানবাহনের মোট সংখ্যা ১২.৩৩ মিলিয়নে পৌঁছেছে এবং সেতুর টোল থেকে রাজস্ব ১৬.৩ বিলিয়ন টাকা ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর, বাংলাদেশে পদ্মা সেতু রেলওয়ে যোগাযোগ প্রকল্পের প্রথম অংশটি যান চলাচলের জন্য চালু করা হয়। যা ঢাকা থেকে যশোর যাওয়ার সময় ১০ ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টায় কমিয়ে দেয়। এটি বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ১.৫% বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটাকে মানুষ আদর করে ‘ড্রিম রোড’ বলে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প ছাড়াও, দু’দেশের সহযোগিতায় নির্মিত কর্ণফুলী নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, মূল চার ঘন্টার ড্রাইভটি ২০ মিনিটে সংক্ষিপ্ত করা গেছে। চীনা উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ, নির্মাণ এবং পরিচালনায় ঢাকা বিমানবন্দর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজধানীতে বিমানবন্দরের কাছে যানযট পরিস্থিতিকে অনেকটাই সহজ করেছে। পদ্মা পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র ৪০ লাখ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারে। চীনা কোম্পানির সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রকল্প বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন অবস্থার কার্যকরভাবে উন্নতি এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সাথে সাথে, বাংলাদেশের অবকাঠামো সড়ক পরিবহনের উন্নয়নে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বিপুল সংখ্যক ডিজাইনার, প্রকৌশলী, নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পেশাদার প্রতিভাকে প্রশিক্ষিত করেছে।
চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং চীনও ‘দ্বিতীয় শতবর্ষ’ লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন যেমন বলেন, “চীন সবসময়ই বাংলাদেশের উন্নয়ন-যাত্রায় অংশীদার হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” আমরা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের অপেক্ষায় রয়েছি!
(স্বর্ণা/হাশিম/লিলি)