বিজ্ঞানবিশ্ব ৭৭তম পর্ব
2024-07-01 18:29:16

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৭৭তম পর্বে যা থাকছে:

 

 

১। এমআরআই প্রযুক্তিতে দারুণ সাফল্য অর্জন চীনা বিজ্ঞানীদের

২। চীনের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সম্মাননা পেলেন দুজন বিজ্ঞানী

৩। নাক ডাকার সঙ্গে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক

 

এমআরআই প্রযুক্তিতে দারুণ সাফল্য অর্জন চীনা বিজ্ঞানীদের

মাল্টি-নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) প্রযুক্তিতে দারুণ সাফল্য অর্জন করেছেন চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল। এর ফলে এখন থেকে ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

এমআরআই হলো চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি ইমেজিং পদ্ধতি, যা শরীরের অভ্যন্তরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও টিস্যুর বিস্তারিত ছবি তৈরি করে। এটি রেডিও তরঙ্গ এবং শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে কাজটি করে।

২০২৩ সালে স্টেট টেকনোলজিকাল ইননোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় পুরস্কার জয়ী হয় এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রকল্পটি। ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং এর সক্ষমতা আরও বিকশিত করার ফলে বর্তমানে ফুসফুসের ইমেজিং দ্রুত এবং পরিষ্কার হয়েছে।

এমআরআই দিয়ে শরীরের ভেতরকার কোমল টিস্যুর পার্থক্যগুলো ভালো করে বোঝা সম্ভব। প্রথাগত এমআরআই সিস্টেমটি মানব ফুসফুসে সিগন্যাল সোর্স হিসেবে পানির প্রোটন ব্যবহার করা হতো এর ফলে ফুসফুস বাতাসে ভরা থাকায় এর অধিকাংশ স্থান ইমেজিংয়ে ‘ব্লাইন্ড স্পট’ হিসেবে দেখা যেত।

মানুষের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পানি, যার অর্থ মানুষের শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পানি থাকে (পানির প্রতিটি অণুতে থাকে হাইড্রোজেন এবং হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস হচ্ছে প্রোটন)। শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলে প্রোটনগুলো চৌম্বকক্ষেত্রের দিকে সারিবদ্ধ হয়ে যায়, তখন নির্দিষ্ট একটি কম্পনের বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ পাঠানো হলে এই প্রোটনগুলো সেই তরঙ্গ থেকে শক্তি গ্রহণ করে তাদের দিক পরিবর্তন করে এবং এই প্রক্রিয়াটিকে বলে নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স। পদার্থবিজ্ঞানের এই চমকপ্রদ ঘটনাটির ওপর ভিত্তি করে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এমআরআই যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে।

চীনের বিজ্ঞান একাডেমির ইনোভেশন একাডেমি ফর প্রিসিশন মেজারমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এপিএম) এর সভাপতি চৌ সিন জানান, যখন কোনও চিকিৎসক রোগীর ফুসফুসের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করেন, তখন ছবির একটি বড় অংশ সম্পূর্ণ কালো দেখায় যদিও অঙ্গটির প্রাসঙ্গিক অংশগুলোর বায়ুচলাচল ফাংশন ভালভাবে কাজ করে। ফলে শ্বাস নেওয়ার পর তা ফুসফুসের অ্যালভিওলি বা বায়ু থলিতে পৌঁছেছে কি না তা বলা অসম্ভব ছিল।’

গবেষক চৌয়ের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি এক দশকেরও বেশি সময়ের চেষ্টার পর সফল হয়েছে। তাদের গবেষণা অনুসারে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত “জেনন গ্যাস” শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে মাত্র ৩ দশমিক ৫ সেকেন্ডে মানব ফুসফুসের একটি ত্রি-মাত্রিক এমআরআই পাওয়া যায়।ৎ

চৌ সিন জানান, নতুন মাল্টি-নিউক্লিয়ার এমআরআই সিস্টেম উজ্জ্বল সিগন্যাল সরবরাহ করে, যা ফুসফুসকে স্পষ্ট করে। এর অর্থ হল ফুসফুসের সেই অংশগুলোকে স্পষ্ট করা যাবে যা আগে অদৃশ্য ছিল, ফলে এখন থেকে ফুসফুসের প্রতিটি অংশ কীভাবে কাজ করে তা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব।

নতুন সিস্টেমের সাহায্যে চিকিৎসকরা চিত্রে গ্যাসটি ফুসফুসের কোথায় পৌঁছায় তা দেখতে সক্ষম হবেন, কারণ নতুন প্রযুক্তি রোগীর ফুসফুসের ক্ষুদ্রকাঠামো এবং গ্যাস চলাচলের কার্যকারিতা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে সক্ষম।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

 

চীনের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সম্মাননা পেলেন দুজন বিজ্ঞানী

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অসামান্য অবদান রাখায় চীনের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সম্মাননা পেলেন ফটোগ্রামমেট্রি ও রিমোট সেন্সিং বিশেষজ্ঞ লি ডেরেন এবং কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিসিস্ট সুয়ে ছিখুন। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পুরস্কার সম্মেলনে’ চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এ দুজন প্রবীণ বিজ্ঞানীকে পুরস্কার প্রদান করেন।

১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন লি ডেরেন। তিনি চীনের বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, আন্তর্জাতিক ইউরেশীয় বিজ্ঞান একাডেমি, আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান একাডেমির গবেষক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফটোগ্রামমেট্রি এবং রিমোট সেন্সিং সোসাইটির সদস্যও ছিলেন লি।

তিনি ভূ-স্থানিক তথ্য ক্ষেত্রে বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ। জিও স্পাশিয়াল ক্ষেত্রে লির তাত্ত্বিক, সমন্বিত উদ্ভাবনের জন্য চীনকে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পৃথিবী পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তিতে চীনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য লি ডেরেন তার কর্মজীবন উৎসর্গ করেছেন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবী পর্যবেক্ষণে চীনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রেখেছেন বিখ্যাত ফটোগ্রামমেট্রি এবং রিমোট সেন্সিং এ বিশেষজ্ঞ। স্যাটেলাইট রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে উচ্চ-নির্ভুল গ্লোবাল পজিশনিং ও ম্যাপিং প্রযুক্তিতে অগাধ জ্ঞানের কারণে লি বেশ আলোচিত। 

তিনি রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট ইমেজগুলোর নির্ভুলতা প্রক্রিয়াকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাও কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে একটি দল সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়, নির্ভুল বিমানবাহী এবং স্থল পরিমাপ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। এই অর্জনগুলো চীনের নির্ভুল এবং উচ্চ-রেজোলিউশনের পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়েছে।

গবেষণার পাশাপাশি উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এবং পিএইচডি সুপারভাইজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন লি। তিনি উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটি, তথ্য প্রকৌশল, জরিপ, মানচিত্রায়ন এবং রিমোট সেন্সিং সংক্রান্ত স্টেট কী ল্যাবরেটরির একাডেমিক কমিটি এবং ভৌগোলিক স্থানিক প্রযুক্তি কলাবরেটিভ ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক।

বিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখায় এর আগে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড, জাতীয় উচ্চশিক্ষা পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ১০টি মনোগ্রাফ প্রকাশ করেছেন এবং ৪৭০ টি জার্নাল প্রকাশ করেছেন, যার মধ্যে ১৮৩টির প্রথম লেখক তিনি। এছাড়াও ২৭০টি কনফারেন্স পেপার প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে সর্বোচ্চ সম্মাননা পাওয়া ঘনীভূত পদার্থ পদার্থবিদ্যার একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী সুয়ে ছিখুন ১৯৬২ সালের ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি টোপোলজিকাল ইনসুলেটর এবং কোয়ান্টাম অস্বাভাবিক হল এফেক্ট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার জন্য বাকলে পুরস্কার লাভ করেছেন।

 

তার দল কোয়ান্টাম অ্যানোমালাস হল প্রভাবের প্রথম পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ করেছে। এছাড়াও হেটারোস্ট্রাকচার সিস্টেমে ইন্টারফেস-বর্ধিত উচ্চ-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিভিটি আবিষ্কার করেছে, যা উচ্চ-তাপমাত্রার সুপারকন্ডাক্টিভিটির গবেষণায় একটি নতুন দিক উন্মুক্ত করেছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

নাক ডাকার সঙ্গে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক

 

ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সঙ্গে হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমের মধ্যে নিয়মিত নাক ডাকা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ এবং নিয়ন্ত্রণহীন হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বেশি।

 

 

হাইপারটেনশন হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তনালীতে রক্তচাপ খুব বেশি বেড়ে যায়। এটি হৃদযন্ত্রকে গুরুতর ক্ষতি করে হৃদরোগ, স্ট্রোকএর মতো সমস্যা ডেকে আনতে পারে। নাক ডাকা রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়। হার্ট ফেইলিউরের ঝুঁকি বেশি হয়। এমনকি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

 

গবেষণায় পর্যবেক্ষণের সময় ১২ হাজার ২৮৭ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে প্রতি রাতের ২০ শতাংশের বেশি সময় ধরে নাক ডেকেছেন মাত্র ১৫ শতাংশ ব্যক্তি। যাদের নাক ডাকার মাত্রা বেশি ছিল তাদের সিস্টোলিক রক্তচাপ নাক না ডাকা মানুষের চেয়ে ৩ দশমিক ৮ মিমিএইচজি (মিলিমিটার পারদ) এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৪ দশমিক ৫ মিমিএইচজি (মিলিমিটার পারদ) বেশি ছিল। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা মধ্যবয়সী এবং তাদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ ছিলেন পুরুষ।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী প্রায় ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন প্রাপ্তব্যস্কের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রাপ্তব্যস্কদের প্রায় ৪৬ শতাংশই তা জানেন না।

 

| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- নাসরুল্লাহ রাসু

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী