চীনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্মিত মক্কা মেট্রো এবং এবারের হজ
2024-07-01 11:13:03

গত ১৯ জুন চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেড (সিআরসিসি) কর্তৃক সৌদি আরবে নির্মিত ‘মক্কা মেট্রো পিঙ্ক লাইন’ বরাবরের মতো এবারের হজের সময়ও হাজিদের পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ নিয়ে দশ বার হজে এই লাইনের সফল ব্যবহার হয়েছে। বলা হচ্ছে, নকশার দিক দিয়ে প্রকল্পটি সর্বাধুনিক এবং অপারেশন মডেলের দিক দিয়ে সবচেয়ে জটিল।

১৩ জুন ভোর ঠিক ৪টা থেকে পরবর্তী ৭ দিন ও ৬ রাত এ লাইনে টানা ট্রেন চলাচল করেছে। এ সময় বাইরের তাপমাত্রা ছিল কমবেশি ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উক্ত সময়ে তথা মোট ১৫৮ ঘন্টায়, ২ হাজার ২০৬টি ট্রেন, ৫০ সহস্রাধিক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে এবং যাত্রী বহন করেছে ২০ লাখ ৯৪ হাজার।

২০১০ সালে মক্কা মেট্রো পিঙ্ক লাইন আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এর পর এ লাইন ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল, এবং ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাফল্যের সাথে আড়াই কোটির বেশি হাজি পরিবহন করে। সিআরসিসি’র মক্কা মেট্রো পিঙ্ক লাইন প্রকল্প মধ্যপ্রাচ্যে চীনা নির্মাণ-শিল্পের প্রতীকে পরিণত হয়েছে এবং চীন-সৌদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করেছে।

“মক্কা মেট্রো পিঙ্ক লাইনের কারণে আমাদের হজযাত্রা আরও সুবিধাজনক ও সুষ্ঠু ছিল। আমি এবং আমার বন্ধু একবার এ লাইনের সুবিধা ভোগ করেছি।” সৌদি আরবের জেদ্দার যাত্রী ফয়সেল মেট্রোর অভিজ্ঞতা গ্রহণের পর এমন কথা বললেন।

চলতি বছর হজের সময় তাপমাত্রা ছিল অনেক বেশি। আর্দ্রতাও ছিল বেশি। এ অবস্থায় যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় প্রতিটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। সেসময় প্লাটফর্মগুলোতে দিনরাত ২৪ ঘন্টা জলীয় বাস্প ছড়ানো হয়। এর লক্ষ্য ছিল প্ল্যাটফর্মের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা আরামদায়ক পর্যায়ে রাখা। এ ছাড়া, সিআরসিসি একাধিক ভাষায় যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনার ব্যবস্থা করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে, এবং সার্বিকভাবে রিয়েল-টাইম তথ্য আপগ্রেড করার মাধ্যমে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে।

জানা গেছে, সিআরসিসি স্থানীয় কর্মীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে, বিগত দশ বছর ধরে, তাদের জন্য কাস্টমাইজড প্রশিক্ষণের উপকরণ সরবরাহ করে; পদ্ধতিগত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়। উক্ত সময়ে ‘চীনা শিক্ষক’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায়, প্রায় ৬০ হাজার বিদেশীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সময় প্রকল্পে ৬ শতাধিক উচ্চ-স্তরের প্রযুক্তি-কর্মী গড়ে তোলা হয় এবং অনেক বিদেশী কর্মী ব্যবস্থাপক পদে কাজ করার সুযোগ পান।

তা ছাড়া, সিআরসিসি প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ ও বাহিক্য সম্পদ পুনর্বিন্যাস করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে, চীনের শিল্পচেইন, সরবরাহ চেইন ও পরিষেবা চেইন এখানে নিয়ে আসা হয়। প্রকল্পের সাথে জড়িত দলটি আন্তর্জাতিক সম্পদ বন্টনব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে, চায়না রেলওয়ে বেইজিং গ্রুপ কোং লিমিটেড ও সিমেনসের মতো ৩০টির বেশি দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ অপারেশন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। ট্রানজিট অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে সিআরসিসি বিশ্বমানের দক্ষতা প্রদর্শন করেছে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে। (প্রেমা/আলিম)