যা রয়েছে এবারের পর্বে
১. টিবেটান অ্যান্টিলোপ: ওরা এগিয়ে চলেছে
২. বিরল পরিযায়ী পাখি চায়নিজ রুবিথ্রট
৩. বিশ্বের প্রথম ক্রোকোডাইল লিজার্ড গবেষণা কেন্দ্র চীনে
নিবিড় সবুজ অরণ্য। পাখির ডানা মেলার শব্দ। নীল আকাশ। দূষণহীন সমুদ্র। আমাদের নীল গ্রহকে আমরা এমনভাবেই দেখতে চাই ।পরিবেশ ও প্রতিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব সেই নির্মল প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।
সুপ্রিয় শ্রোতা মানুষ ও প্রকৃতি অনুষ্ঠান থেকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। বিশাল দেশ চীনের রয়েছে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য। পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার ফলে চীনে জীববৈচিত্র্য যেমন বাড়ছে তেমনি উন্নত হচ্ছে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা চীনসহ পুরো বিশ্বের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বাস্তুতন্ত্র নিয়ে কথা বলবো।
টিবেটান অ্যান্টিলোপ: ওরা এগিয়ে চলেছে
চীনের টিবেটান এন্টিলোপ প্রজাতির হরিণরা ছিংহাই মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে চলেছে। কেন এই হরিণরা পরিযায়ন করে শুনুন সেই গল্প।
একটি হরিণ এগিয়ে যাচ্ছে তার পিছু নিয়েছে হিংস্র নেকড়ে। হরিণটির গর্ভে রয়েছে শিশু। তাই সে জোরে এগুতে পারছে না। নেকেড়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু চমকপ্রদভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায় আহত মা হরিণ। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাণীদের আশ্রয় কেন্দ্রে। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠে সে। এইভাবেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভূমিকা রেখে চলেছেন চীনের প্রকৃতি কর্মীরা।
টিবেটান অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণরা এগিয়ে যাচ্ছে হোহ সিল প্রাকৃতিক সুরক্ষিত এলাকার দিকে। সেখানে তারা নিরাপদে সন্তানের জন্ম দিবে। চীনের প্রথম শ্রেণীর সুরক্ষা তালিকায় থাকা টিবেটান অ্যান্টিলোপ প্রজাতির হরিণদের পরিযায়ন মৌসুম এখন তুঙ্গে। দলে দলে টিবেটান এন্টিলোপ উত্তর পশ্চিম চীনের হোহ সিল জাতীয় প্রাকৃতিক সুরক্ষিত বনভূমির দিকে হেঁটে যাচ্ছে।
টিবেটান অ্যান্টিলোপ প্রজাতির এক বিচিত্র স্বভাব রয়েছে। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে গর্ভবতী অ্যন্টিলোপরা দলে দলে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে হোহ সিল নেচার রিজার্ভ পার্ক এলাকায় যায়। সেখানে চোং লেকের আশপাশে তারা সন্তান জন্ম দেয়। আবার অগাস্ট মাসে তারা শাবকসহ ফিরে আসে।
এই পরিযায়নের সময় তারা ছিংহাই-সিচাং মহাসড়ক পার হয়। এসময় যেন তারা নিরাপদে মহাসড়ক পার হতে পারে সেদিকে কড়া নজর রাখে দায়িত্বশীল কর্মীরা। এবছর এখন পর্যন্ত ২৫০০ মেয়ে অ্যান্টিলোপ এই মহাসড়ক পার হয়ে হোহ সিল এলাকায় গেছে।হোহ সিল রিজার্ভ প্রশাসনের উদাওলিয়াং সুরক্ষা স্টেশনের ডেপুটি ডিরেকটর কারমা ইয়াংফেল বলেন, ‘চলতি বছর টিবেটান এন্টিলোপদের পরিযায়ন শুরু হয়েছে ৭ মে। এটা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এই সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ অ্যান্টিলোপ ছিংহাই-সিচাং মহাসড়ক পার হয়।’
যথাযথ ট্রাফিক কনট্রোল ব্যবস্থার ফলে হরিণগুলো নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। যানবাহনকে এ সময় ওদের থেকে দূরে রাখা হয়। পর্যটকরা দূর থেকে হরিণদের দেখতে পারেন। কিন্তু খুব বেশি কাছে গিয়ে তাদের বিরক্ত করার কোন রকম সুযোগ নেই। দায়িত্বশীল কর্মীরা ওদের উপর নজর রাখে। দূরবীন দিয়ে দেখা হয় হরিণের পাল মহাসড়কের কাছে এসেছে কিনা।
ওরা নিরাপদে সড়ক অতিক্রম করে চরে যায় হোহ সিল ভূমিতে। সেখানে তারা সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের শক্তপোক্ত করে তোলে। আবার আগস্ট মাসে শরৎকাল এলে শুরু হয় নিজের নিজের ভূমিতে ফিরে আসা। প্রধানত ওরা ছিংহাই মালভূমি অঞ্চলে শাবকসহ ফিরে আসে।
চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিচাং, সিনচিয়াং এবং ছিংহাই প্রদেশে মূলত এই টিবেটান অ্যান্টিলোপদের বসবাস। একসময় এরা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তিন দশকের বেশি আগেই অবৈধ শিকার বন্ধ করা হয়। এদের বসবাস নিরাপদ করার জন্য আরও অনেক পদক্ষেপ নেয় চীন সরকার। এখন টিবেটান অ্যান্টিলোপ আর বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী নয়।
চীনের প্রথমশ্রেণীর রাষ্ট্রীয় সুরক্ষায় থাকা এই সুন্দর প্রাণীটির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল
বর্তমানে সারা বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, যার প্রভাব আগামীর দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে।
একটি বসবাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই আমাদের অনুষ্ঠান মানুষ ও প্রকৃতি।
বিরল পরিযায়ী পাখি চায়নিজ রুবিথ্রট
বিরল প্রজাতির পরিযায়ী পাখি চায়নিজ রুবিথ্রট। যদিও এ পাখিটির কোনও বাংলাদেশি নাম নেই। তবে কেউ কেউ একে ‘লালগলা’ নামে ডেকে থাকেন। শুনবো এই মিষ্টি কণ্ঠের পাখির গল্প।
চায়নিজ রুবিথ্রট। ছোট এই পরিযায়ী পাখিটি শীতকালে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আসে। সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এদের দেখা যায়। একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে, ঝোপঝাড়, বনভূমি, চা বাগান এবং বাগানে এদের দেখা মেলে। তবে বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সংলগ্ন জলাভূমি ছাড়া আর কোথাও ‘চাইনিজ রুবিথ্রট’ পাখিটিকে পাওয়া যায় না।
পাখিটি অত্যন্ত লাজুক। বনপ্রান্ত বরাবর ঘন ঝোপঝাড়, চা-বাগান, জলাভূমি ও স্যাঁতসেঁতে ঘাসবনে একাকী বা জোড়ায় লেজ উঁচিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। ভয় পেলে মুহূর্তেই ঝোপঝাড়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। পোকামাকড়, শূককীট, শামুক, টিকটিকি ইত্যাদি খায়।
শাখাচারী এ পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে আলাদা। মাথাসহ পুরুষের দেহের ওপরটা জলপাই বাদামি। কপাল ও ভ্রু সাদা। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী সাদামাটা। গলা ও চিবুকে লাল ছোপ নেই; বরং তা সাদা। দেহের ওপরটা বাদামি। দেহতল ধূসরাভ। স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে চোখ কালচে বাদামি, চঞ্চু কালো ও পা কালচে।
মে থেকে আগস্ট প্রজননকাল। এ সময় মূল আবাসভূমির পাথরের মধ্যে কিংবা ঝোপঝাড়ের নিচে বড়সড় বাসা বানায়। ডিম পাড়ে চার থেকে ছয়টি, রং লালচে দাগ-ছোপসহ নীলচে-সবুজ। ডিম ফোটে ১৪ দিনে।ছানাগুলো উড়তে শেখে প্রায় ১৬ দিনে। আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।
চায়নিজ রুবিথ্রট প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ। এদের আবাসস্থল রক্ষা করা এবং টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
প্রকৃতি সংবাদ
বিশ্বের প্রথম ক্রোকোডাইল লিজার্ড গবেষণা কেন্দ্র চালু হলো চীনে
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে রয়েছে প্রকৃতি সংবাদ। দুর্লভ সরীসৃপ ক্রোকোডাইল লিজার্ড নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞান কেন্দ্র চালু হয়েছে চীনে। এই গবেষণা কেন্দ্র বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে সম্প্রতি খোলা হয়েছে দুর্লভ সরীসৃপ ক্রোকোডাইল লিজার্ড নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞান কেন্দ্র ।
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে কুয়াংসি তাইকুইশান শিনিসরস ক্রোকোডিলারাস নামের এই রিজার্ভ। আগ্রহীরা এখানে এসে এই বিরল প্রজাতি সম্পর্কে জানতে পারবে। আবার গবেষকরাও নিজেদের মতো করতে পারবেন গবেষণা।
ক্রোকোডাইল লিজার্ড চীনের একটি প্রথম শ্রেণির সুরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত। এটি অত্যন্ত বিপন্ন। ধারণা করা হয় বিশ্বব্যাপী এখন মাত্র এক হাজার ৪০০টি ক্রোকোডাইল লিজার্ড আছে, যার মধ্যে ৫০০টি আছে তাকুইশান রিজার্ভে। কৃত্রিমভাবে প্রজনন করা ক্রোকোডাইল লিজার্ডও রয়েছে এখানে।
প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। আমাদের প্রিয় এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকের রয়েছে কিছু ভূমিকা। আসুন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসি। গ্রামে কিংবা শহরে যেখানেই আমরা থাকি না কেন, আমাদের আশপাশের জীবজন্তু ও পাখিদের রক্ষায় ভূমিকা পালন করি। ঘরের অনেক খেলে দেয়া খাবার দিয়েও পশুপাখির প্রতি সদয় ব্যবহার করা সম্ভব। পথের বিড়াল কুকুর, ব্যালকনিতে উড়ে আসা পাখিদের খাবার দিয়ে তাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে পারি। আর নতুন বৃক্ষ রোপণ করি। আমাদের মায়ের মতো পরিবেশকে রক্ষা করি। এই আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আগামি সপ্তাহে আবার কথা হবে। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও পরিকল্পনা ও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ