সংবাদ পর্যালোচনা: চীনের চন্দ্রাভিযানে ছাংএ-৬ বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে
2024-06-29 17:48:39


সম্প্রতি চীনের ছাংএ্য-৬ রিটার্নারটি চাঁদের ‘অন্ধকার দিক’ থেকে প্রথমবারের মতো নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড। চাঁদ থেকে সংগৃহ করা নমুনা, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের অনুষ্ঠান গত শুক্রবার বেইজিংয়ে আয়োজন করা হয়। গত ৪ঠা জুন চীনের ছাংএ্য-৬ প্রোবটি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়র করে। চাঁদ গবেষণায় চীনের অগ্রগতি বিশ্বের মহাকাশ গবেষণায় নতুন শক্তি যুগিয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের অনুষ্ঠানে।

চাঁদের অন্ধাকার পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর পিয়ান চিকাং বলেছেন, এই মিশনে ‘তিনটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি’ ও ‘একটি বিশ্ব রেকর্ড’ হয়েছে। ছাংএ্য-৬ মিশন চীনের মহাকাশ ইতিহাসে প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে উন্নত চন্দ্র অন্বেষণ মিশন। এটি চাঁদের ‘অন্ধকার দিক’ থেকে বিশ্বে প্রথম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নমুনা সংগ্রহ করেছে। ছাংএ্য-৬ মিশন ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা, ফ্রান্স, ইতালি ও পাকিস্তানের সাথে সহযোগিতা করেছে। এ মিশনে অনেক মূল্যবান বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। এদিকে, ছাংএ্য-৬ মিশনের আওতায় চাঁদ থেকে সংগৃহীত নমুনা  যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার বেইজিংয়ে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ছাংএ্য-৬ মিশনের সাফল্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে মহাকাশ শিল্পের অগ্রগতির ব্যাপারে তাঁর নেতৃত্বে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাপক আগ্রহের প্রতিফলন ঘটেছে। চাঁদের অন্ধকার দিক থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনার ঘটনা বিশ্বে প্রথমবার হয়েছে। এটি মহাকাশবিজ্ঞান তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে চীনকে শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পথে আরেকটি যুগান্তকারী সাফল্য।

এর আগে গত ৪ঠা জুন চীনের ছাংএ্য-৬ প্রোবটি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে উড্ডয়ন করে। নমুনা সংগ্রহের পর ল্যান্ডারটির বহন করা একটি চীনা জাতীয় পতাকা চাঁদের দূর দিকে প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হয়। তার আগের দিন অর্থাৎ ৩ জুন চাঁদের দূরবর্তী পূর্বনির্বাচিত অবতরণ এলাকায় চীনের ছাংএ্য-৬ চাঁদ অনুসন্ধানকারী যান সফলভাবে অবতরণ করেছিল। এটি চীনের মহাকাশ অনুসন্ধান এবং মানবজাতির শান্তিপূর্ণ মহাকাশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

মূলত, চাঁদের নমুনা বলতে সাধারণত "লুনার রেগোলিথ" বোঝায়। যা চাঁদের পৃষ্ঠের ওপরের স্তর- বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে গঠিত। এতে আছে চূর্ণ পাথর ও চূর্ণ শিলা। আছে মিনারেলস তথা সিলিকা, এলুমিনিয়া, আয়রন অক্সাইড, ম্যাগনেসিয়া, এবং ক্যালসিয়াম অক্সাইড। আরও আছে মাইক্রোমেটিওরয়েডের আঘাতে সৃষ্ট গ্লাস পার্টিকলস, যা লুনার রেগোলিথের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

উল্লেখ্য যে, চীন মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বর্তমান বিশ্বে অন্যতম প্রধান মহাকাশশক্তি হিসেবে পরিচিত। চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (CNSA), বিভিন্ন সফল মিশন পরিচালনা করেছে, যা চীনকে মহাকাশ গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে নিয়ে এসেছে। চীনের মহাকাশ অভিযানের মধ্যে চাঁদ অনুসন্ধানের কিছু উল্লেখযোগ্য মিশন সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

ছাংএ্য মিশন চীনের চাঁদ অভিযান প্রকল্প; যা চাঁদের দেবী ছাংএ্যর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিশন পরিচালনা করা হয়। ছাংএ্য-১ উৎক্ষেপণ করা হয় ২৪ অক্টোবর, ২০০৭ সালে। যা চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে চাঁদের মানচিত্র তৈরি করে। ছাংএ্য-২ উৎক্ষেপণ করা হয় ১লা অক্টোবর, ২০১০ সালে। এ মিশনে চাঁদের পৃষ্ঠের আরও বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি এবং গভীর মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর ছাংএ্য-৩ ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয়। যা চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ এবং রোভারের মাধ্যমে সরাসরি চাঁদের নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে।

ছাংএ্য-৪ উৎক্ষেপণ করা হয় ৭ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে। যা চাঁদের অদৃশ্য পার্শ্বে প্রথম সফল অবতরণ করে এবং ২টি রোভার পরিচালনা করে। উল্লেখ্য যে, এটি ছিল বিশ্বের প্রথম মিশন যা চাঁদের অন্ধকার পার্শ্বে প্রথম অবতরণ করে। এরপর ২০২০ সালে ২৩ নভেম্বর ছাংএ্য-৫ উৎক্ষেপণ করা হয়। যা চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে। এ মিশনে চাঁদ থেকে ২ কেজি রেগোলিথ সংগ্রহ করা হয় এবং সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীতে ফেরত আনা হয়।

২০২৭ সালের মধ্যে ছাংএ্য-৭ ও ছাংএ্য-৮ উৎক্ষেপণ করা হবে। যা চাঁদের বেস নির্মাণের জন্য প্রযুক্তিগত পরীক্ষা চালাবে।

চীন মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে এবং চাঁদ অভিযানের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। চাঁদ অভিযানের পাশাপাশি চীন মঙ্গল, বৃহস্পতির চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা মিশনেরও পরিকল্পনা করছে। চীনের মহাকাশ গবেষণার এই অগ্রগতি বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।