আকাশ ছুঁতে চাই ৭৬
2024-06-28 02:05:26

 


১. কারুশিল্প কু এমব্রয়ডারি 

২. পোর্সেলিন 

৩.লায়ন ডান্স

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

কু এমব্রয়ডারির ঐতিহ্যের ধারক কারুশিল্পী নারী ছিয়ান ইয়ুয়েফাং 

নতুন দ্যুতি ছড়াচ্ছে শাংহাইয়ের শতাব্দি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কু এমব্রয়ডারি। কু এমব্রয়ডারি মূলত নারীদের হাতের কাজ হিসেবে বিখ্যাত। একজন নারী ইনহেরিটর এই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। 

 

 অবৈষয়িক সংস্কৃতির অংশ এই বিশেষ ধরনের নকশি কাজে নতুন চিন্তাভাবনাও এনেছেন তিনি। আধুনিক বিশ্বে এই এমব্রয়ডারি কাজের চাহিদা বাড়ছে। কিভাবে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটানো সম্ভব হলো সে বিষয়ে রয়েছে একটি প্রতিবেদন। 

 


শাংহাইয়ের কু এমব্রয়ডারি গবেষণা কেন্দ্র। এখানে অতি সূক্ষ্ম কাজের মাধ্যমে কাপড়ের বুকে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে অসাধারণ সৌকর্যমণ্ডিত নকশা। চীনের বিভিন্ন স্থানের ও জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে বিভিন্ন রকম ঐতিহ্যবাহী এমব্রয়ডারি। তবে কু এমব্রয়ডারিই একমাত্র নকশীকাজ যা একটি পরিবারের নামে নামকরণ করা হয়েছে। শত শত বছরের প্রাচীন এই শিল্প আধুনিক বিশ্বেও তার চমক ধরে রেখেছে। এর পিছনে অবদান রয়েছে এই ঐতিহ্যের ধারক কারুশিল্পী নারী ছিয়ান ইয়ুয়েফাং এর। 

 

ছিয়ান ইয়ুয়েফাং বলেন, ‘সুইগুলো তুলির চুলের মতো সূক্ষ্ম, রংগুলো পেইন্টিংয়ের মতো, স্টিচগুলো চুলের ডগার মতো নরম, এটাই কু এমব্রয়ডারির মতো তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।’  

 

শাংহাইয়ের সোংচিয়াং জেলার এমব্রয়ডারি গবেষণা কেন্দ্রে কু এমব্রয়ডারির ইনহেরিটর ছিয়ান ইয়ুয়েফাং এবং একদল কারুশিল্পী কিছুদিন আগে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন। ড্রাগনবোট উৎসবের আগে তাদের এমব্রয়ডারি করা স্যাশে বা ছোট থলির ছিল ব্যাপক চাহিদা।

 


ছিয়ান ইয়ুয়েফাং বলেন, একবার হাত উঠাতে হয় আরেকবার নামাতে হয়। সুতাটা একবার পিছনে একবার সামনে টানতে হয়। এটা করতে অনেক ধৈর্য ও নিষ্ঠা লাগে।

 

মিং রাজবংশের সময় (১৩৬৮-১৬৪৪ সাল) সোংচিয়াং কু এমব্রয়ডারির উদ্ভব ঘটে। এর আরেক নাম পেইন্টেড এমব্রয়ডারি’। এই নকশীকাজ কখনও মেশিনে করা সম্ভব নয়। ছিয়ান ইয়ুফাং এই শিল্পের ষষ্ঠ প্রজন্ম। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তিনি এই এমব্রয়ডারি নিয়ে কাজ করছেন।  এই নকশিকাজ মূলত নারীদের শিল্পকর্ম। 

ছিয়ান ইয়ুয়েফাং জানান, ‘ হাতের এমব্রয়ডারির জায়গা কখনও মেশিন নিতে পারবে না। কু এমব্রয়ডারিকে বুঝতে হলে পেইন্টিং বুঝতে হবে। আমরা আমাদের আবেগ এই সুঁচের কাজের মধ্য দিয়ে কাপড়ের বুকে ফুটিয়ে তুলি।’

ছিয়ান তার এই নকশী কাজের দক্ষতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। 

 

সোংচিয়াং জেলার  সোংচিয়াং কালচারাল অ্যাকটিভিটি সেন্টারের পরিচালক, ফেং ইয়েফ্যং জানান‘ কু এমব্রয়ডারি সোংচিয়াংকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। এই কারুশিল্পকে রক্ষার মাধ্যমে আমরা সংস্কৃতিকে রক্ষা করছি এবং পরবর্তি প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি।’ 

আগে কু এমব্রয়ডারি শুধু জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারিগুলোতে রাখা হতো। এখন এটাকে আধুনিক করা হয়েছে। ব্যাগ, অলংকার, আধুনিক স্টাইলের পোশাকে এই নকশাকে জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে। এরফলে দৈনন্দিন ব্যবহার্য সামগ্রীতে এই নকশীকাজ জনপ্রিয় হচ্ছে এবং পৌছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। 

কু এমব্রয়ডারি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের একজন নকশা শিল্পী চিন চিথিং বলেন,‘যখনি আমি নকশার মাধ্যমে একটি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করি মনে হয় যেন এই শিল্পের মূলস্রষ্টার সঙ্গে কথা বলছি।  এমন একটি অবৈষয়িক কারুশিল্প যেটি এত বছর ধরে টিকে রয়েছে, এমন শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িত হতে পেরে আমি গৌরব বোধ করছি।

 

এভাবেই শত শত বছরের প্রাচীন শিল্প কু এমব্রয়ডারি নারীর হাত ধরে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে যাচ্ছে, ছড়াচ্ছে নতুন আলো। 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া 

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

পোর্সেলিনের প্রতি ভালোবাসা 

চীনের পোর্সেলিন শিল্পের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশেষ করে নানছাং এর চিংত্যচেন সিটিকে বলা হয় পোর্সেলিনের রাজধানী। পোর্সেলিনকে ভিত্তি করে অনেকে গড়ে নিয়েছেন নিজের জীবিকা। শুনবো এমন এক নারীর কথা। 

চীনের চিয়াংসি প্রদেশের চিংত্যচেন শহর। দুই হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পোর্সেলিন শিল্পের প্রসার ঘটেছে। এখানকার তৈরি পোর্সেলিন বিশ্ববিখ্যাত । এই পোর্সেলিনের আকর্ষণে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চল থেকে অনেকে এসেছেন এখানে । আবার বিদেশ থেকেও অনেক পোর্সেলিন ভক্ত এখানে এসে নিজ হাতে পোর্সেলিন তৈরি করছেন। 

 

চীনের নারী আই ফুলিং। ৩৬ বছর বয়সী এই নারী ৯ বছর আগে বেইজিংয়ের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ভালো বেতনে চাকরি করতেন। পোর্সেলিনের প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে এই শহরে চলে আসেন। এখানে নাইট মার্কেটে তিনি একটি ফ্রি স্টল নেন। থাকতেন ইয়ুথ হস্টেলে। 

এখন তার নিজের দোকান হয়েছে। প্রতি মাসে দোকানে বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ই্উয়ান।

ক্যামিলে কামি একজন ফরাসী নারী। তিনি সিরামিকসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে চিংত্যচেন আসেন। এই শহরের দুহাজার বছরের প্রাচীন এই সৌকর্যময় শিল্পকে ভালোবেসে এ শহরেই বসতি গড়েছেন তিনি।

এইভাবে চিংত্যচেন শহরে পোর্সেলিনকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছেন অনেক নারী। 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ



চীন মাতাচ্ছে মেয়েদের লায়ন ডান্স দল 

চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির এক অনন্য প্রকাশ সিংহ নাচ বা লায়ন ডান্স। চীন জুড়ে লায়ন ডান্সের রয়েছে অনেক দল। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশে রয়েছে বিশেষ একটি দল যে দলের সব সদস্যই নারী। এই দলের কথা শুনবো  প্রতিবেদনে। 

 

চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ সিটি। বাজনার তালে তালে এখানে চলছে জমজমাট লায়ন ডান্স। এই লায়ন ডান্স পরিবেশন করছে মেয়েরা। তাদের দক্ষতা ও নৈপুণ্যে অবাক হচ্ছে দর্শক। 

 

কুয়াংতোং প্রদেশের এই মেয়েদের লায়ন ডান্স দলটি সম্প্রতি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এই দলের সব সদস্যই নারী। ২০১৮ সালে হেইসিংথাং নামের এ দলটি যাত্রা শুরু করে। সে সময় দলের সদস্যদের বয়স ছিল ১১ বছর থেকে ১৮ বছর । 

 

প্রথাগতভাবে মনে করা হয় লায়ন ডান্স মূলত পুরুষের কাজ। কারণ এটি বেশ কঠিন পরিশ্রমের কাজ যার জন্য শারীরিক শক্তির প্রয়োজন। যেমন সিংহের কস্টিউমের ওজন ১০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এই কস্টিউম পরে অনেক উঁচু থেকে লাফ দেয়ার বিষয় রয়েছে। আরও রয়েছে সহশিল্পীকে কাঁধের উপর তুলে নেয়ার বিষয়। তাই প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মূলত পুরুষরাই এই নাচটি পরিবেশন করেন। কিন্তু নারদের দলটি যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গেই সিংহ নাচ পরিবেশন করছে। এর পিছনে অবশ্য বেশ কয়েক বছরের কঠোর পরিশ্রম রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে তারা বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছে। 

 

কিন্তু কেন নারীরা এই কঠোর অনুশীলনের কষ্ট স্বীকার করছেন? একজন সদস্য বলেন, স্রেফ ভালোবাসা থেকে তিনি এ কাজটি করেন। এটা তার শখ। আরেকজন বলেন লায়ন ডান্সে যে শক্তিমত্তা ও শুভ অনুভূতি রয়েছে সেটি তার ভালো লাগে।

 

লায়ন ডান্সের এই নারী দল এ বছরের বসন্ত উৎসবের সময় কুয়াংতোং প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে পারফর্ম করেছেন। দর্শকরা সাদরে গ্রহণ করেছেন তাদের। তারা প্রমাণ করেছেন লায়ন ডান্সের মতো কঠিন এবং পুরুষ প্রাধান্যের শিল্পেও নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে নারী। 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: আফরিন মিম 

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ