১০ জুন বিকেলে, বেইজিংয়ে বাংলাদেশের যুব প্রতিনিধিদলের চীন সফরের সমাপনী অনুষ্ঠানটি জমকালোভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে প্রতিনিধিদলের চীনে ১০ দিনব্যাপী সফরের সফল সমাপ্তি ঘটে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়াবিষয়ক বিভাগের রাষ্ট্রদূত ওয়াং ফু খাং, সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ও চায়না স্টাডিজ সেন্টারের (বাংলাদেশ) একাডেমিক কমিটির চেয়ারম্যান ছেন তুং শিয়াও, দা একাডেমি অফ কনটেম্পরারি চায়না অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড স্ট্যাডিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফান তা ছি, এবং চায়না ফরেন ল্যাঞ্জুয়েজিস পাবলিশিং অ্যাডমিনিস্ট্রিশনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের উপ-পরিচালক রেন ফাং ফেন সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে সনদ বিতরণ করেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের রাষ্ট্রদূত ওয়াং ফু খাং প্রথমে প্রতিনিধিদলের চীন সফরকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকেই পরস্পরের ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু, এবং ভালো অংশীদার ছিল ও আছে। দুই দেশের নেতাদের কৌশলগত দিকনির্দেশনায়, চীন-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং এতে নতুন প্রাণশক্তি যুক্ত হয়েছে। দুই
দেশ তাদের কৌশল পরিকল্পনাকে একত্রিত করেছে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইদ্যোগ বাস্তবায়নকাজ ত্বরান্বিত করেছে, এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ সহযোগিতা করেছে। এতে দু’দেশের জনগণই উপকৃত হয়েছে ও হচ্ছে। চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়ন, চীনের মহান পুনরুত্থানের স্বপ্ন ও বাংলাদেশের "সোনার বাংলা" স্বপ্ন বাস্তবায়নের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করেছে। দেশ ও জনগণের সম্পর্ক নির্ভর করে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ওপর, আর মানুষে মানুষে পারস্পরিক বন্ধুত্ব নির্ভর করে হৃদয় থেকে হৃদয়ে যোগাযোগের ওপর। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চায়না স্টাডিজ সেন্টার একটি নতুন বন্ধন গড়ে তুলেছে। তরুণরা দু’দেশের উন্নয়নের ভবিষ্যত, সেইসাথে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যতও বটে। বাংলাদেশের আধুনিকায়নের পথের অংশীদার হিসেবে কাজ করবে চীন। চীন ও বাংলাদেশ শিক্ষা, সংবাদমাধ্যম, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশকরেন।
ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পরারি চায়না অ্যান্ড দা ওয়ার্ল্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর ফান তা ছি বলেন, এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এসেছেন এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের উত্তরাধিকারের দায়িত্ব বহন করছেন। চীনে এই সফরের সময়, প্রতিনিধিদল চীনের সবুজ উন্নয়ন ও পরিবেশগত শাসনের ধারণার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে; চীনের তৃণমূল সামাজিক শাসনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে; এবং সকল দিক থেকে চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকীকরণের পথ ও শাসনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে। বর্তমানে, চীন ও বাংলাদেশ আধুনিকায়নের উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে। দু’দেশকেই অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে, নিজস্ব জাতীয় অবস্থার সমন্বয় সাধন করতে হবে, এবং বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। চায়না রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য, দুই দেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতার পারস্পরিক শিক্ষাকে জোরদার করা; দুই দেশের মধ্যে শাসনের অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নের জ্ঞান ভাগাভাগির কাজ জোরদার করা; কেন্দ্রের একাডেমিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে গবেষণাকাজ চালিয়ে যাওয়া। এর মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা যায় এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়বস্তুকে আরও সমৃদ্ধ করা যায়। সংলাপ, আলোচনা, মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এবং অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা বাড়ানোও সম্ভব। কেন্দ্রটি তার সম্পদের সুবিধার সম্পূর্ণ ইতিবাচক ব্যবহার করবে এবং চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে ভবিষ্যতের সহযোগিতার জন্য উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাবে। আশা করা যায় যে, চীন ও বাংলাদেশের তরুণরা পারস্পরিক বিনিময়কে শক্তিশালী করবে, একে অপরের কাছ থেকে শিখবে, এবং একটি অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার কাজে অবদান রাখবে।
সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট এবং চায়না স্টাডিজ সেন্টারের (বাংলাদেশ) একাডেমিক কমিটির চেয়ারম্যান ছেন তুং শিয়াও অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তৃতা দেন। তিনি বাংলাদেশি তরুণদেরকে বিশ্বকে মাথায় রাখতে, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে, ও দায়িত্বশীল হতে উত্সাহিত করেন। তিনি বলেন: প্রথমত, দেখা হচ্ছে বিশ্বাসের ভিত্তি। দেখা শেখার সর্বোত্তম উপায়। হাজার হাজার বই পড়া ও হাজার হাজার মাইল ভ্রমণ করা এবং মাঠ পর্যায়ের গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিনিধিদলের চীন সফর তাদের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বৈচিত্র্যময় ও গতিশীল চীনকে বুঝতে এবং চীনের উন্নয়নের পথকে আরও ভালোভাবে অনুভব করতে ও বুঝতে সাহায্য করেছে। আসল চীনকে বোঝার একমাত্র উপায় হল চীনে আসা এবং নিজের চোখে দেখা। দ্বিতীয়ত, আমরা যখন তিন জনের সঙ্গে একসাথে থাকি, তখন অবশ্যই অন্যদের কাছ থেকে ভালো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। গভীরভাবে বিনিময়ের মাধ্যমে, আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি, একে অপরের শক্তি থেকে শিখতে পারি এবং একসাথে অগ্রগতি অর্জন করতে পারি। তৃতীয়ত, আপনারা মূল উদ্দেশ্য ভুলবেন না। যুবক-যুবতীদের একটি বিস্তৃত বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, এবং উচ্চ লক্ষ্য থাকা উচিত। তাদের কেবল চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত নয়, মানবসমাজ ও বিশ্বশান্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত। চায়না রিসার্চ সেন্টার চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের জন্য একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উচ্চ-মানের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
ইনস্টিটিউট অব কনটেম্পরারি চায়না অ্যান্ড দা ওয়ার্ল্ডের গবেষণা ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের পরিচালক চাং চিউ আন সভায় সভাপতিত্ব করেন। শাংহাই ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রের পরিচালক এবং চায়না স্টাডিজ সেন্টারের (বাংলাদেশ) পরিচালক লিউ চং ই, চীন আন্তর্জাতিক প্রকাশনা গ্রুপের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের উপ-পরিচালক ফেং ইন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের তৃতীয় সচিব হু শিয়াও ফেই, চায়না স্টাডিজ সেন্টারের (বাংলাদেশ) নির্বাহী পরিচালক লি হং মেই, শাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সায়েন্টিফিক রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা চু শি ছেং, ইনস্টিটিউট অফ কনটেম্পরারি চায়না অ্যান্ড দা ওয়ার্ল্ডের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের কর্মকর্তা কুও চিয়া ইউয়ে, এবং চীন আন্তর্জাতিক প্রকাশনা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ বিভাগের ছিয়াও শিন সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। (স্বর্ণা/আলিম)