বহু টেবিল টেনিস তারকা তৈরি করে কলকাতা ছেড়ে দেশে ফিরেছেন কোচ ইন ওয়েই
2024-06-28 16:22:13

১৫০জন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তৈরি করার পর চীনে ফিরে আসলেন সত্তরোর্ধ্ব কোচ ইন ওয়েই। তিনি চীনের ছেংতু ক্রীড়া ইনস্টিটিউটের ক্রীড়া বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতে টেবিল টেনিস কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইন ওয়েই ভারতীয়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রথম চীনা টেবিল টেনিস কোচদের একজন। তিনি টেবিল টেনিস কোচ হিসাবে প্রথমে ভারতে যান ১৯৯২ সালে। তখন তিনি যুবক ছিলেন।

১৯৯৫ সাল থেকে আজমের পেট্রোলিয়াম স্পোর্টস পেট্রোলিয়াম বোর্ড একাডেমি (PSPBA) এর প্রশিক্ষক হিসাবে, ইন ওয়েই তার চাকরি শুরু করেন এবং একাডেমির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন। তার প্রশিক্ষণে বেড়ে উঠেছেন ভারতের ভবিষ্যতের টেবিল টেনিস তারকা, সৌম্যদীপ রায়, শিবাজি দত্ত, এ অমলরাজ, জুবিন কুমার, অনল কাশ্যপ, আমান বলগু, দেবেশ কারিয়া, সৌম্যজিৎ ঘোষ, হার্মিট দেসাই এবং মানব ঠক্কর-সহ আরও অনেকে।

চীনে ফিরে আসার পর ২০০৪ সালে তিনি আবারও ফিরে যান ভারতে। তখন তাঁর গন্তব‌্য ছিল কলকাতা। স্পোর্টস অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া’র (SAI)  জাতীয় টেবিল টেনিস একাডেমিতে কোচ হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। টানা চার বছর কলকাতায় থেকে বহু কিশোর-কিশোরীকে টেবিল টেনিস শেখানোর পর ফিরে আসেন চীনে। ২০১৯ সালে ফের কলকাতায় আগমন তাঁর। সল্টলেকের ‘সাই’-এ থেকে তিনি টেবিল টেনিস শিক্ষা দিতে শুরু করেন। শুধু কলকাতা বা এই রাজ্যের শিক্ষার্থীরাই নয়, উত্তর-পূর্ব ভারত, অসম, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ‌্য থেকে ছাত্রছাত্রীরা ‘সাই’-এ আসে টেবিল টেনিস (Table tennis) শিখতে। সকাল ও সন্ধ‌্যা- দু’বেলায়ই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের টেবিল টেনিস শেখান ইন ওয়েই। সেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে চ‌্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

বয়স বেশি হলেও, প্রতিদিন তিনি প্রযুক্তিগত দিকগুলির সর্বশেষ নিবন্ধগুলি অধ্যয়ন করেন, ভিডিও দেখেন এবং সব সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলি দেখেন।

তার ছাত্ররা ওয়েইকে তার বিপুল ক্রীড়া সংক্রান্ত কৌশলগত জ্ঞানের জন্য প্রশংসা করে। “তাঁর ক্রীড়া-কৌশলগত জ্ঞানের ভাণ্ডার প্রচুর। যখনই আমার পারফর্মেন্স ভালো থাকে না, তখনই আমি তাকে ফোন করি বা গিয়ে তার সাথে দেখা করি” বলেছেন ভারতের সাবেক ১ নম্বর টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জুবিন কুমার। "তিনি জানেন কিভাবে প্যাডলারের স্ট্রোকগুলিকে উন্নত বা সংশোধন করতে হয়। আমার বর্তমান সফলতার জন্য তার কাছে সম্পূর্ণভাবে ঋণী” বলেছেন জুবিন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পিএসপিবিএ-তে ইন ওয়েইয়ের সাথে ছিলেন।

 অনল কাশ্যপ, আসামের অন্যতম শীর্ষ প্যাডার, ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে পিএসপিবিএ-তে প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। একাডেমিতে সে সময়ের কথা স্মরণ করে বলেন, “ওয়েইয়ের সাথে প্রশিক্ষণ সেশনগুলি ভালভাবে সংগঠিত হয়েছিল। এটি খুব দরকারি ছিল, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত দিকগুলিতে। PSPBA এবং জনাব ওয়েই না হলে আমি জাতীয় পর্যায়ে থাকতাম না” বলেন কাশ্যপ। তিনি ১৯৯৫-২০০১ সাল থেকে একাডেমির সঙ্গে ছিলেন।

খেলোয়াড়, জুবিন ও কাশ্যপের যে উষ্ণ বন্ধুত্ব এবং শ্রদ্ধা ওয়েইয়ের জন্য রয়েছে তা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, “আমরা এখনও ওয়েই এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। তিনি আমাদের সময় দেন, খেলা সম্পর্কে কথা বলেন এবং আমাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। এটি একটি জীবনব্যাপী সম্পর্ক। এটা ভাঙ্গা যাবে না।”(স্বর্ণা/তৌহিদ)