জুন ২৭: গতকাল বুধবার বিকেলে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, বেইজিংয়ের গণমহাভবনে, ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সঙ্গে এক সাক্ষাতে মিলিত হন। প্রধানমন্ত্রী ফাম গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরামে অংশ নিতে চীনে আসেন।
সাক্ষাতে সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন ভিয়েতনামের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক শক্তিশালী করতে, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা বাড়াতে, বাস্তবসম্মত নিরাপত্তা-সহযোগিতা জোরদার করতে, বিভিন্ন খাতে বাস্তবসম্মত সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। আর এসবের লক্ষ্য, বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ভিয়েতনামের সাথে সহযোগিতা চালানো।
প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন-এর মাধ্যমে, ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুয়েন ফু চাও এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ভো ফান থুয়ং-কে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান সি চিন পিং। তিনি উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক পরিবর্তনের মধ্যেই চীন ও ভিয়েতনাম দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। কৌশলগত তাত্পর্যসহ অভিন্ন ভবিষ্যতের চীন-ভিয়েতনাম সমাজ গড়ে তোলা উভয় দেশের আধুনিকায়নের চাহিদার সাথে সংগতিপূর্ণ, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সহায়ক, এবং বিশ্বে সমাজতন্ত্রের বিকাশের জন্য ইতিবাচক।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, চীন অব্যাহতভাবে সংস্কারকে গভীরতর করবে এবং চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন প্রচারের ওপর জোর দেবে, যা উভয় পক্ষের জন্য অর্থনীতি ও বাণিজ্য, আন্তঃসংযোগ এবং ডিজিটাল অর্থনীতির মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের নতুন সুযোগ এনে দেবে।
তিনি বলেন, উভয় পক্ষের উচিত উচ্চ-স্তরের বিনিময় বজায় রাখা, যৌথভাবে "বেল্ট অ্যান্ড রোড" উদ্যোগ বাস্তবায়নে নিজ নিজ ভূমিকা রাখা, দুই দেশের মধ্যে সংযোগের স্তর উন্নত করা, এবং দুই দেশের মধ্যে ব্যবহারিক সহযোগিতার মান উন্নত করা। বেইজিং আরও চীনা কোম্পানিকে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বাড়াতে উত্সাহিত করতে ইচ্ছুক এবং আশা করে যে, ভিয়েতনামও চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি ন্যায্য, ন্যায়সঙ্গত ও বৈষম্যহীন ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
সি বলেন, দুই দেশের উচিত, দুই পক্ষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের মূল্যবান সম্পদের সদ্ব্যবহার করা; বিনিময় শক্তিশালীকরণে সীমান্ত প্রদেশগুলোকে সহায়তা করা; কৃষি, শিক্ষা, চিকিত্সা ও অন্যান্য জীবিকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা; বেসরকারি ও যুব বিনিময় প্ল্যাটফর্মগুলোর ভালো ব্যবহার নিশ্চিত করা; যথাযথভাবে সামুদ্রিক সমস্যাগুলো হ্যান্ডেল করা; যৌথভাবে সমুদ্রে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা; এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা যৌথভাবে রক্ষা করা।
জবাবে ফাম মিন চিন সাধারণ সম্পাদক নুয়েন ফু চাও এবং প্রেসিডেন্ট ভো ফান থুয়ংয়ের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে সৌহার্দ্যপূর্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ভিয়েতনাম ও চীন পরস্পরের ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু। দুটি দেশেই কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব সমাজতন্ত্র কায়েম আছে। ভিয়েতনাম চীনকে শক্তি ও সমৃদ্ধির উন্নয়নে, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চীনের দ্বিতীয় শতবর্ষের লক্ষ্য অর্জনে, এবং বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সমর্থন করে। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কর্তৃক প্রস্তাবিত বৈশ্বিক উদ্যোগকে সমর্থন করেন, আরসিইপি চুক্তিতে চীনের যোগদানকে সমর্থন করেন, এবং অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর রাজনীতিকরণের বিরোধিতা করেন। ভিয়েতনাম চীনের নতুন তত্ত্ব, নতুন অনুশীলন এবং পার্টি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন অর্জন থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে ইচ্ছুক এবং সমাজতান্ত্রিক পথ মেনে চলা ও সাধারণ উন্নয়ন অর্জনের জন্য চীনের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
ভিয়েতনামের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন ও উন্নয়নে মূল্যবান সহায়তা প্রদানের জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের অবস্থানকে সমর্থন করে, ‘এক-চীন নীতি’ দৃঢ়ভাবে মেনে চলে, এবং ভিয়েতনাম ও চীনের মধ্যে কৌশলগত পারস্পরিক আস্থা ও বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে এবং কৌশলগত তাত্পর্যের একটি অভিন্ন ভবিষ্যতের সমাজ গড়ে তুলতে চায়।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গত বছরের ভিয়েতনাম সফর ছিল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ভিয়েতনাম এই সফরের সময় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করতে, ক্রমাগত রাজনৈতিক পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে, বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে, যুব বিনিময়কে উত্সাহিত করতে, জনমতের একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করতে, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করতে, এবং সঠিকভাবে মতপার্থক্য মোকাবিলায় চীনের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। (স্বর্ণা/আলিম/লিলি)