‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৭৬
2024-06-26 00:55:09


এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। চীনের স্টোন ফরেস্ট মুগ্ধ করেছে বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট নিশাতকে 

২। ঘুরে আসুন দৃষ্টিনন্দন ইয়ুননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

৩। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার চাওছিং 


বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৭৬তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।


১। সাক্ষাৎকার পর্ব- চীনের স্টোন ফরেস্ট মুগ্ধ করেছে বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট নিশাতকে 

শ্রোতা এই পর্যায়ে শুনবো চীন ঘুরে বেড়ানো একজন বাংলাদেশির কথা । তিনি সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহর ঘুরে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যালসে সিনিয়র প্রডাক্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। স্বাগত জানাচ্ছি আনিকা ফারজানা নিশাতকে। 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? – 

নিশাত- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি, আপনাদের অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ। 

আপনি তো সম্প্রতি চীনে ঘুরতে গিয়েছিলেন। আমরা জানতে চাই আপনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন?

 

নিশাত- সম্প্রতি আমি আমাদের অফিসের একটি বিজনেস কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করতে কুনমিংয়ে গিয়েছিলাম। আমরা ৯১জনের একটি টিম গিয়েছিলাম। যেহেতু আমরা একটি অফিসিয়াল ট্যুরে গিয়েছিলাম তাই খুব বেশি জায়গায় ঘুরার সুযোগ হয়নি। তবে আমরা কুনমিং শহর থেকে কিছুটা দূরে স্টোন ফরেস্ট দেখতে গিয়েছিলাম। এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এতো অসম্ভব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেয় এই জায়গা মুগ্ধ করেছে আমাকে। পাশাপাশি ওখানকার স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের পোশাক পরে ছবি তুলেছি।

এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

নিশাত- আমরা সেখানে সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা ছিলাম এবং যেটুকু সময় ছিলাম আমরা পুরোপুরি উপভোগ করেছি। সেখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়েছি। সব মিলিয়ে স্টোন ফরেস্টের পুরোটা সময় আমাদের সবার খুব ভালো সময় কেটেছে। 


আপনি প্রথমবারের মতো চীনে গিয়েছেন। এবারের ভ্রমণে কোন বিষয়টা বেশি ভালো লেগেছে.?

নিশাত- অফিসিয়াল কাজে এর আগেও আমি বেশকিছু দেশে গিয়েছে,যেমন- মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড দুবাই, সিঙ্গাপুর। তবে এইবার চীন প্রথম। এখানকার অভিজ্ঞতা একদম অন্যরকম ছিলো। আমরা যখন চায়না গিয়েছি তখন চাইনিজ নিউ ইয়ার প্রায় শেষের দিকে। তাদের নিউ ইয়ারের উদযাপনের কিছু ছিটেফোটা আমরা দেখেছি। সত্যিকথা বলতে একদমই অন্যরকম। এতো বর্নাঢ্য আয়োজনে এই উৎসব উদযাপন করে সেটা স্বচক্ষে দেখেছি। এছাড়া চায়নার আবহাওয়া খুব ভালো লেগেছে। 

 

আবার যদি চীনে যাওয়ার সুযোগ হয়, তাহলে কোথায় যাবেন?

নিশাত- চায়না তো অনেক বড় দেশ। এবারের ট্যুরে তাদের সংস্কৃতির ট্রেইলার আমরা দেখতে পেয়েছি। আবার যদি যাওয়ার সুযোগ হয় তবে বেইজিং, কুয়াংচৌ এবং সাংহাইতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। 

 

আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

নিশাত - আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য । 


সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম 


২। ঘুরে আসুন দৃষ্টিনন্দন ইয়ুননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

চীনের অন্যতম বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইয়ুননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়। চীনে ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। ইয়ুননান প্রদেশে বাস করেন অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এথনিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ভাষা, ইতিহাস বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ১৯৫১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। 

 

সূচনা লগ্নে এটি ছিল ইন্সটিটিউট। পরবর্তিকালে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। একটি হলো কুনমিং সিটির প্রাণকেন্দ্রে উহুয়া ক্যাম্পাস। অন্যটি শহরের প্রান্তে ছাংকুং জেলায় অবস্থিত।

ছাংকুং ক্যাম্পাসটি বেশি বড় এবং এর ল্যান্ডস্কেপও অসাধারণ সুন্দর। এখানে রয়েছে ইয়েহুয়া লেক। লেকটিকে ঘিরে একদিকে গাছের সারি, অন্যদিকে সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ। লেকের ওপর দৃষ্টিনন্দন একটি কাঠের সাঁকো রয়েছে। লেকের আরেকদিকে রয়েছে হাঁটা পথ ও প্রশস্ত চত্বর। 

ক্যাম্পাসটি উঁচু পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত। উচুঁ নিচু পাহাড়ি পথের চারপাশে বাগান। ল্যাভেন্ডার ফুলের বাগান রয়েছে। আরও রয়েছে জাকারান্দা, পিওনি, গোলাপ, চেরি, পিচ ও অন্যান্য ফুলের বাগান। গ্রীষ্মকালে জাকারান্দা ফুলের শোভায় পুরো ক্যাম্পাস পার্পেল রঙে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শরতে গিনকো গাছের সোনালি পাতা অপরূপ শোভার সৃষ্টি করে। 

ক্যাম্পাসের ভিতরে একটি এথনিক মিউজিয়াম রয়েছে যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও কারুশিল্পের কিছু অনন্য নিদর্শন রয়েছে। 


ইয়ুননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নের জন্য রয়েছে সাউথ এশিয়ান কলেজ। এখানে বাংলা ভাষার বিভাগও আছে। 

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি, সামাজিক আচরণ, ইতিহাসসহ নানা বিষয়ে অধ্যয়ন ও গভীর গবেষণা করা হয়। দেশবিদেশের খ্যাতনামা শিক্ষকরা এখানে শিক্ষাদান করে থাকেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ভবনটির স্থাপত্য অত্যন্ত সুন্দর। 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর ছাদ লাল রঙের এবং স্থাপত্যে একটা বিশেষ ধারা অনুসরণ করার ফলে দূর থেকেই ক্যাম্পাসটি চোখে পড়ে। ক্যাম্পাসের উল্টোদিকে রয়েছে বড় দুটি পার্ক। ক্যাম্পাসে প্রায়ই সাংস্কৃতিক মেলা বসে। 

উহুয়া ক্যাম্পাসটিও বেশ সুন্দর। ঐতিহাসিক কয়েকটি ভবনিএখানে রয়েছে। দুটি ক্যাম্পাসের কাছেই রয়েছে সাবওয়ে স্টেশন। দুটি ক্যাম্পাসের মধ্যে শাটল বাসের ব্যবস্থাও রয়েছে।  

 

ছাংকুং ক্যাম্পাসের ভিতরে পাহাড়ের চূড়ায় একটি পাঁচ তারকা হোটেল রয়েছে। সেমিনার ও অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এই হোটেলে বিদেশ ও চীনের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অতিথিরা থাকতে পারেন। হোটেলের লবিতে একটি ময়ূরের ভাস্কর্য রয়েছে যা অত্যন্ত সুন্দর। 

ইয়ুননান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েহুয়া লেকে যখন কালো রাজহাঁসের ঝাঁক ভেসে বেড়ায় তখন চম্ৎকার দৃশ্য সৃষ্টি হয়। লেকের কাছাকাছি একটি অশ্বারোহণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এখানে ঘোড়ায় চড়া শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রীষ্মের শেষে এই ক্যাম্পাস সবচেয়ে চোখ জুড়ানো রূপ গ্রহণ করে। 

প্রতিবেদন-শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম 


৩। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আঁধার চাওছিং 


দিন দিন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে প্রিয় পর্যটন এলাকা হয়ে উঠেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নীলাভূমি দক্ষিণ পশ্চিম চীনের চাওছিং শহর। প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এ শহরে আছে প্রাচীন নানা স্থাপত্য নিদর্শন। এছাড়া সমৃদ্ধ ও উর্বর কৃষি ব্যবস্থা এ শহরকে করেছে কৃষি-বাণিজ্যিকের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে গ্রামীণ পর্যটনেরও বিকাশ ঘটছে এখানে।

 

 


খ্রিষ্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় এই শহর। ৫৮৯ সাল থেকে এটি পরিচিটি পায় তুয়ান নামে। এরপর পাঁচশ’ বছরের ব্যবধানে এই শহর হয়ে ওঠে উন্নত প্রিফেকচার হিসেবে। বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডের শহরগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এলাকা জুড়ে রয়েছে চাওছিং। 


২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে, এখানকার বাসিন্দা ৪১ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৪। চারদিকের পাহাড় বেষ্টিত সমতল ভূমির শহর এই চাওছিং। সমতল ভূমি হওয়ায় সমৃদ্ধ ও উর্বর কৃষির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে এটি। 


কৃষিপণ্যের পাশাপাশি স্থানীয় পণ্য বাজারজাতকরণে আছে নদী বন্দর। কুয়াংচি প্রদেশের সাথে বানিজ্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই নদী বন্দর। এছাড়া শহরের নিউ পোর্ট চীনের ২৮টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ বন্দরের একটি। 


 


চাওছিংয়ের উন্নত পরিবহন নেটওয়ার্কে আছে রেলওয়ে ও এক্সপ্রেসওয়ে সেবা। ফলে চাওছিংয়ের সাথে কুয়াংচৌ’র সংযোগ স্থাপন করেছে। ফলে এ শহরের স্বচ্ছ পানির চাংক্সি হ্রদ আকর্ষণ করে পর্যটকদের। 


প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া 


ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী