‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৭৬ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. চীনের প্রযুক্তি-চালিত উন্নয়নের ধারণা পেতে বিদেশি যুবদলের চীন সফর
২. সংস্কৃতি জানতে চীন ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২৭ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
৩. চীনা তরুণ অভিনেতা ইউ শি জনপ্রিয় কেন
১. চীনের প্রযুক্তি-চালিত উন্নয়নের ধারণা পেতে বিদেশি যুবদলের চীন সফর
প্রযুক্তিতে বিশ্বে চীনের অবস্থান শীর্ষে আছে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দেশটির এই অগ্রগতির পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম ও জানা অজানা অসংখ্য মানুষের সৃজনশীল প্রচেষ্টা। আর এই প্রযুক্তি চালিত উন্নয়নের ধারণা নিতে একদল বিদেশি তরুণের অংশগ্রহণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘’২০২৪ ফিউচার ক্লোজ-আপ’’।
বেইজিংয়ে এক সপ্তাহব্যাপী উচ্চ-স্তরের যুব বিনিময় কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি শেষ হয় এই আয়োজন। এটি দেশের প্রধান শহরগুলো ভ্রমণ করার মাধ্যমে চীনা প্রযুক্তি-চালিত উন্নয়নের আভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানার সুযোগ করে দেয়।
চায়না ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশনস গ্রুপ সেন্টার ফর দ্য আমেরিকা, হংকং ফেডারেশন অফ লিয়াওনিং অ্যাসোসিয়েশন এবং চীনের টেক জায়ান্ট টেনসেন্টের বিপণন ও জনসংযোগ বিভাগের যৌথ আয়োজনে ২০২৪ ফিউচার ক্লোজ-আপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রযুক্তি-চালিত উন্নয়ন ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে চীনের সাফল্যকে ডিকোড করতে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জার্মানি এবং ইতালি সহ ২১টি দেশ ও অঞ্চলের মোট ২৭ জন যুব প্রতিনিধি বেইজিং, শেনয়াং এবং সিয়ংআন নিউ এরিয়া ভ্রমণ করেন।
এদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ উদ্যোক্তা, প্রযুক্তি পেশাদার, পণ্ডিত এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী। সফরের সময়, গ্রুপটি দেশের উদ্ভাবনের উপর প্রাধান্য দেয়া নতুন গুণমান উৎপাদনকারী শক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
সফরের সময়, প্রতিনিধিরা শেনইয়াংয়ের কারখানাগুলো পরিদর্শন করেন, প্রযুক্তিগত বহুমুখিতা এবং শিল্পের পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে জানতে পারেন। তারা চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিদর্শন করেন এবং বেইজিংয়ের প্রায় একশো কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল সিয়ংআন নতুন এলাকার পাইইয়াংতিয়ানের পরিবেশ সুরক্ষা প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করেন।
এই আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানে "গ্লোবাল ইয়ুথস পারসপেক্টিভস অন চায়না টেকনোলজিক্যাল ইনোভেশন" শিরোনামের একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। সারা বিশ্বের তরুণরা ই-কমার্স, স্মার্ট ফ্যাক্টরি এবং ৫ জি কে চীনা উদ্ভাবনের মূল ক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা আরও মনে করেন, কার্যক্রমগুলো চীনা এবং বিদেশী যুবকদের জন্য চীনের উচ্চ-মানের উন্নয়ন এবং নতুন মানের উত্পাদনকারী শক্তি সম্পর্কে জানতে দেশটির জোরালো উন্মুক্তকরণ অভিযানের মধ্যে সহায়ক।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. সংস্কৃতি জানতে চীন ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২৭ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যুবকদের মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রচারের লক্ষ্যে চলতি বছর বেশ কয়েকটি ক্যাম্পিংয়ের আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচীরই অংশ হিসেবে জুনে চিয়াংসু প্রদেশ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়।
সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪টি স্টেটের ৪২৭ শিক্ষক-শিক্ষার্থী চীন ভ্রমণ করেছেন। এ সময় তারা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চীনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি তারা চীনা ভাষা, ইতিহাস সম্পর্কেও ধারণা লাভ করেন।
মূলত চীন-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী, দুই দেশের তরুণদের মধ্যে বোঝাপড়া এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এমন আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সফরকালে উভয় দেশের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা ঐতিহাসিক থাইছেং সিটির প্রাচীরের উপর দিয়ে হাঁটেন এবং একটি স্থানীয় স্কুলে প্রথাগত পদ্ধতিতে প্রাচীরের ইট তৈরির অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
ঘুরতে আসা এক শিক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতার কথা জানান, "আমি এটা সম্পর্কে আগে কখনো জানতাম না। এটি একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি চীনের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও প্রাণবন্ত সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি।‘’
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষক ব্রায়ান্ট কারটিস এই সফরে মুগ্ধ হয়েছেন বলে জানান। ভবিষ্যতে আবার চীনে আসার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চিয়াংসু প্রদেশের ১৩টি শহরও পরিদর্শন করেন।
প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার
সম্পাদক: রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. চীনা তরুণ অভিনেতা ইউ শি জনপ্রিয় কেন
উদীয়মান তরুণ চীনা অভিনেতা ইউ শি। ২০১৬ সালে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। ২০২৩ সালে, চীনের এপিক ফ্যান্টাসি ফিল্ম "ক্রিয়েশন অফ দ্য গডস আই: কিংডম অফ স্টর্মস"-এ অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি শুটিং সেটে মুখোমুখি হন সিএমজির সঙ্গে। কথা বলেন নানা বিষয়ে। তার মতে, একজন অভিনেতার উচিত সাফল্য অর্জনের চিন্তা দূর করে শুধু কাজে মনোযোগ দেওয়া। অভিনয়ে নিজের সেরাটা দিয়ে দিতে পারলেই একটি ভালো পারফরমেন্স উপহার দেওয়া সম্ভব।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'টু দ্য ওয়ান্ডার' নামের জনপ্রিয় সিরিজে ইউ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন। সিরিজটি মূলত সিনচিয়াংয়ের আলতাইয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য তুলে ধরে এবং স্থানীয় মেষপালকদের লোকপ্রথা গুলো খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে।
জনপ্রিয় মিনি-সিরিজটি বিখ্যাত চীনা লেখক লি চুয়ানের পুরস্কার পাওয়া প্রবন্ধ 'মাই আলতাই'-এর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। নির্মল আলতাই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে নির্মিত আট পর্বের সিরিজটি একটি নতুন অনুভূতির গল্প তুলে ধরে। লি'র সাহিত্য রচনার শৈলীর সঙ্গে সাথে মৃদুমন্দ কৌতুকের আবহ মিশিয়ে আত্ম-উপলব্ধি, প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক এবং উত্তর সিনচিয়াংয়ের মেষপালকদের সহজ কিন্তু দৃঢ় মানসিকতার জীবন যাপন তুলে ধরা হয়েছে।
সিরিজটিতে মূল চরিত্রের নাম বাতায়। বাতায় একজন কাজাখ ছেলে। তার ভূমিকায় অভিনয় করে ইউ । আলতাইয়ের সৌন্দর্যে দারুণ মুগ্ধ ইউ। বাতায় চরিত্রে অভিনয় করে জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং বোধ আরও গভীর হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
ইউ সি, অভিনেতা বলেন,
“নিশ্চিতভাবে 'বাতায়' আমার অভিনয় জীবনের একটি অন্যতম চরিত্র হয়ে থাকবে। চরিত্রটি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই সিরিজে আমরা গ্রীষ্মকালীন সময়ে খামারগুলোর সৌন্দর্য যেমন উপভোগ করতে করেছি তেমনি শীতের নিজস্ব এবং নির্জন সৌন্দর্যও উপভোগ করেছি। লি চুয়ান এই নির্জনতাকে উষ্ণতার সাথে মিশিয়ে উপস্থাপন করেছেন। সিরিজে একটি সংলাপ আছে: 'খাড়া দেয়ালের মতো জীবনেও মানুষের বুক উচিয়ে বাঁচা উচিত,' এটি কেবল এই সিরিজে চারণভূমির যে যাত্রাপথ সেটাকেই নির্দেশ করে না, বরং বিভিন্ন পরিবেশ এবং জীবনধারার সকল সময়কেই বোঝায়। জীবনের কঠিন অবস্থা এবং চ্যালেঞ্জগুলোই হলো এই খাড়া পথ। কেউই সহজে তার পুরো জীবন পার করতে পারে না। কিন্তু এই খাড়া ঢালু পথ সত্ত্বেও আমরা ইতিবাচক থাকতে পারি এবং জীবনযাপন করতে পারি।
শুটিং প্রসঙ্গে ইউ পরিচালক থেং ছং ছং-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তার মতে তিনি তাকে গভীর অনুপ্রেরণা খুঁজে বের করার এবং জীবনের বাস্তব চিত্র আরও সত্যিকারভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন।
‘আমি কোনো চরিত্রকে আগে নিজে ধারণ করে তারপর নিজের মতো করে তুলে ধরতে পছন্দ করি। শুটিং চলাকালে কিছু মুহূর্তে দারুণ অনুপ্রেরণা জেগে উঠত। এ জন্য একটি বিশেষ ধন্যবাদ পেতেই পারেন পরিচালক। আমার বিশ্বাস, চারণভূমিতে বাস করা ছেলের চরিত্রটি দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেবে।
গেল বছর চীনের বক্স অফিসে ঝড় তোলা সায়েন্স ফিকশন 'ক্রিয়েশন অব দ্য গডস আই: কিংডম অব স্টর্মস'-এ তার কাজের কথাও স্মরণ করেন ইউ ।
"হতাশ হবেন না। কোনো প্রজেক্ট আয় করবে কিনা কিংবা জনপ্রিয় হবে কিনা এই চিন্তায় হারিয়ে গেলে, আপনি সৃষ্টিশীল কাজের ওপর মনোযোগ হারাবেন। 'ক্রিয়েশন অব দ্য গডস'-এর রিহার্সালের সময় আমি মনোযোগ দিয়ে প্র্যাকটিস করতাম । আমাকে ভাগ্যবান বলতে পারেন, যে একটি ভালো চরিত্র পেয়েছি। আবার কম বাজেটের টিভি সিরিজ 'টু দ্য ওয়ান্ডার' গল্পটি আমাকে জীবনের মূল্যবোধ নিয়ে দারুণ কিছু শিখিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওটাও জনপ্রিয় হলো।’
১৯৯৬ সালের ২২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা ইউ সি। বেইজিং ফিল্ম অ্যাকাডেমিতে অভিনয় বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে টেলিভিশন নাটক "হুয়াংপু চিয়ানচিয়া" -তে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শুরু করেন তার অভিনয়ের ক্যারিয়ার। বর্তমানে তিনি চীনের টিভি নাটকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছেন।
প্রতিবেদক : হোসনে মোবারক সৌরভ
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী