বেনিনে তুলা চাষের আধুনিকায়নে চীনা প্রযুক্তির ব্যবহার
2024-06-24 11:10:33

জুন মাস বেনিনের বর্ষাকাল। তুলা চাষের উপযুক্ত সময় এটি। গ্রামবাসী ডোনাশিয়ান এডজিন কৃষিযন্ত্র দিয়ে জমির মাটি আলগা করার জন্য প্রস্তুত। চীনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনিও উপকৃত হয়েছেন। চীনের সাহায্যে কৃষির যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা তিনিও ভোগ করছেন। তিনি জানান, কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যাপকভাবে কর্মঘন্টা বাঁচায়। তিনি ৬ হেক্টর জমিতে কম সময়ে তুলা চাষ করেন।

পারাকৌ বেনিনের গুরুত্বপূর্ণ তুলা উত্পাদন অঞ্চলগুলোর অন্যতম। তুলাচাষ স্থানীয় কৃষকদের প্রধান আয়ের উত্স। ২০১৩ সাল থেকে চীনের সাহায্যে বেনিন বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সাহায্য প্রকল্পের তৃতীয় পর্বের কাজ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয়েছে। দশ-বার বছর ধরে চীনা বিশেষজ্ঞরা, বেনিনের স্থানীয় পরিস্থিতি অনুসারে, তুলার উন্নত বীজের প্রজনন, চাষপ্রযুক্তি ব্যবহার, কৃষি খাতে প্রশিক্ষণ, এবং কৃষিযন্ত্রপাতি পরিচালনাসহ বিভিন্ন কাজ করে আসছেন। ফলে, স্থানীয় তুলার উত্পাদনের পরিমাণ ও গুণগত মান সুস্পষ্টভাবে উন্নত হয়েছে এবং বেনিনের তুলাচাষের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া বেগবান হয়েছে।

কৃষিবিদ শেন চিওয়ান প্রকল্পের প্রথম ও তৃতীয় পর্বের কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি নিজের চোখে স্থানীয় তুলাচাষীদের জীবনের বিরাট পরিবর্তন দেখেছেন। প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার সময় তাঁর ক্যাম্পিং সাইটের পাশে শুধু কয়েকটি খড়ের ঘর ছিল। এখন গ্রামবাসীদের প্রায় সবার নতুন করে নির্মিত ইট ও টালির ঘর আছে।

আকিলু আর্টস একজন সুপরিচিত তুলাচাষী। ২০১৮ সাল থেকে তিনি প্রকল্পের জন্য কাজ করতে শুরু করেন। তিনি কৃষিযন্ত্রপাতির ব্যবহার ও তুলাচাষ প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং গুদামরক্ষক থেকে পর্যায়ক্রমে উত্পাদন সুপারভাইজার পদে উন্নীত হন।

আর্টস একটি ছোট ট্রাক্টর কিনেছেন। তিনি আরও বেশি কৃষিযন্ত্রপাতি কেনার জন্য টাকা জামাচ্ছেন। তিনি আশা করেন, চীনা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আরও বেশি তুলাচাষের জ্ঞান আহরণ করে, তিনি নিজে গ্রামবাসীদের তা শেখাবেন, যাতে তাদের তুলার উত্পাদন আরও বাড়ে।

তৃতীয় পর্ব প্রকল্পের প্রধান শৌ শিয়াওইয়ং বলেন, ২০২১ সালে শুরু হবার পর থেকে তৃতীয় পর্ব প্রকল্পের আওতায় মোট ২২টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্থানীয় তুলাচাষের মেরুদণ্ডে পরিণত হয়েছেন।

শৌ শিয়াওইয়ং বলেন, “আমরা স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য নতুন কৃষিযন্ত্র, নতুন সরঞ্জাম ও নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি। বেনিনের তুলার মান উন্নত ও আপগ্রেডিংয়ে সাহায্য দিচ্ছি আমরা। আশা করা যায়, তুলাচাষের যান্ত্রিকীকরণ বেনিনের মধ্যাঞ্চলের অন্যান্য জায়গা ও উত্তরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে এবং তুলার উত্পাদন অনেক বাড়বে। পাশাপাশি, আরও বেশি কৃষক কৃষির যান্ত্রিকীকরণের প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে, নিজেদের জীবন উন্নত করতে পারবে।”

গ্রামের প্রধান ইয়েভেস কোবা বলেন, সাহায্য প্রকল্পের ফলে গ্রামের অনেক মানুষ নতুন বাড়ি নির্মাণ এবং মোটরসাইকেল বা গাড়ি কিনতে পেরেছেন। তুলা উত্পাদনে যন্ত্রের ব্যবহার একদিকে যেমন উত্পাদন বাড়িয়েছে, অন্যদিকে স্থানীয়দের জীবনমান উন্নত করেছে।

তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ শুরু হবার আগে, গ্রামে তুলাচাষী পরিবার ছিল এক শ’র কম। চীনা প্রযুক্তি আসার পর এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে গ্রামে ৩ শতাধিক পরিবার তুলা চাষ করছে।

চীনা বিশেষজ্ঞদের সাথে গ্রামবাসীদের গভীর মৈত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গ্রামে স্কুল নির্মিত হয়েছে এবং স্থানীয় শিশুদেরকে স্কুলের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও সাইকেল সরবরাহ করা হয়েছে। কোবা বলেন, চীনা বিশেষজ্ঞরা তাদের গ্রামের জীবন আরও সুন্দর করতে সাহায্য করছেন। প্রকল্পটি অব্যাহতভাবে চলতে থাকবে বলে তিনি আশা করেন। (প্রেমা/আলিম)