আকাশ ছুঁতে চাই ৭৫
2024-06-20 18:46:40

১. লাল প্রাসাদের স্বপ্নকে জনপ্রিয় করছেন নারী

১. তরুণ প্রজন্মের কৃষক নারী তু মংইউয়ান

৩. জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে চীনের নারী চেং লেইলি

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে  স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

লাল প্রাসাদের স্বপ্নকে জনপ্রিয় করছেন নারী

চীনের চিরায়ত সাহিত্য থেকে পাঠ করে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে এই সাহিত্যের আবেদন অনেক মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছেন একজন নারী। এর মাধ্যমে তিনি যেমন চিরায়ত সাহিত্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দেয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করছেন তেমনি নিজেও পেয়েছেন সাফল্য ও জনপ্রিয়তা। ব্যতিক্রমী এই নারীর কথা শুনবো প্রতিবেদনে।

চীনের ক্লাসিক সাহিত্য ‘লাল প্রাসাদের স্বপ্ন’ বা এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন থেকে অভিনয় করছেন একজন নারী।  লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এই গল্প শুনছে অসংখ্য মানুষ। চীনের চিরায়ত এই সাহিত্যকর্মকে এভাবেই অসংখ্য মানুষের কাছে  পৌঁছে দিচ্ছেন শিয়াওওয়েই।

 

                                           

পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের চিনান সিটি। এখানকার একজন লাইভ স্ট্রিমার সিয়াওওয়েই। তিনি চিরায়ত চীনা সাহিত্য এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন থেকে গল্প উপস্থাপন করেন।

লাইভ স্ট্রিমার সিয়াওওয়েই বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি রোজগার তেমন বলার মতো নয়। আমি মাত্র কয়েক ডজন ইউয়ান দিনে আয় করতে পারি। কখনও কখনও একশ বা দু’শ ইউয়ান আয় হয়। তবে সাহিত্য পড়ার মাধ্যমে আমার নিজের যন্ত্রণার উপশম হয়। সেজন্য আমি সবার সঙ্গে এই চিরায়ত সাহিত্য ভাগ করে নিতে চাই যেটা আমাকে শান্তি দিয়েছে। আর এটা হলো ‘এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন’।’

ছিং রাজবংশের সময়কার(১৬৪৪-১৯১১) এক অনন্য সাহিত্যকর্ম এ ড্রিম অব রেড ম্যানশন। চীনা ভাষায় এর নাম হোং লও মং। উপন্যাসটি প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয় ১৭৯১ সালে। চীনের চারটি সেরা ক্ল্যাসিক উপন্যাসের অন্যতম হোং লও মং এর লেখক ছাও সুয়েছিন এই মহাকাব্যিক উপন্যাসে চারটি অভিজাত পরিবারের উত্থান পতনের কাহিনী তুলে ধরেছেন। এই উপন্যাস অবলম্বনে টিভি সিরিয়াল ও চলচ্চিত্র হয়েছে।

এই উপন্যাসের একজন বড় ভক্ত সিয়াওওয়েই লাইভে একাধারে গল্পকথাক ও অভিনয়শিল্পী। তিনি বইটির কাহিনী বর্ণনা করেন, বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। ফিল্মিং, ভিডিও এডিটিং, চিত্রনাট্য লেখা, মেকআপ সবই তিনি নিজেই করেন। গত দুই বছরে তিনি তিনশর বেশি চরিত্রে একাই অভিনয় করেছেন।

কেন তিনি এই কাজটি করছেন। মূলত বিষণ্নতা ও ব্যর্থতা থেকে জীবনের মোড় ফেরানোর জন্যই এই বইকে বেছে নিয়েছেন তিনি। মাত্র দুই বছর আগে তার জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে। তিনি একজন উদ্যোক্তা ছিলেন। তার ব্যবসায় ক্ষতি হয়। আর্থিক ক্ষতি, ব্যবসায় ব্যর্থতা সবমিলিয়ে বিষন্নতায় আক্রান্ত হন তিনি। এ সময় হোং লও মং উপন্যাসটি পড়ে শান্তি পান এবং ব্যর্থতা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেন তিনি।

সিয়াওওয়েই বলেন, ‘আমার সব অর্থ নষ্ট হয়েছে। কিভাবে আমি এর সম্মুখীন হবো? অনুভব করছিলাম যে আমি একজন পুরোপুরি ব্যর্থ মানুষ।’

এ সময়েই বইটি তার জীবনে নতুন আশার আলো জ্বেলে দেয়।

সিয়াওওয়েই বলেন, ‘বই পড়ার মাধ্যমে, হোং লও মং পড়ার মাধ্যমে এবং আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে পড়ার মাধ্যমে আমি ধীরে ধীরে আমার বিষণ্নতা থেকে বের হয়ে আসি। সুতরং প্রাচীন জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে আমি জানি বই হলো মনের আশ্রয় এবং এমন স্বান্ত্বনা যা আমরা চিরদিন সাথে রাখতে পারি।’

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সিয়াওওয়েই এবং তার স্বামী লাইব্রেরিতে গিয়ে  হোং লও মং সংক্রান্ত বই নিয়ে আসতেন। তারা এ বিষয়ে পড়াশোনা করে ইতিহাসের সেই সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করেন। এখন প্রতিদিন সকাল ৭টায় সিয়াওওয়েই ঘুম থেকে ওঠেন। তার বিষয়বস্তু বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। এর ফলে তার উপস্থাপনা আরও বেশি প্রফেশনাল হয়ে ওঠে।

সিয়াওওয়েই তার পাঠ, বিশ্লেষণ এবং অভিনয়ের মাধ্যমে অসংখ্য নেটিজেনের মন জয় করেছেন। বর্তমানে চিকটকের চীনা ভার্শন দোওইনে তার ১ লক্ষ ১০ হাজার অনুসারী রয়েছে। মানুষের মনের ক্ষত সারাতে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে, আশার সঞ্চার করতে  চিরায়ত সাহিত্যের  শক্তি প্রমাণ করেছেন চীনের নারী সিয়াওওয়েই।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা ফয়সল আবদুল্লাহ

 

তরুণ প্রজন্মের কৃষক নারী তু মংইউয়ান

কৃষক বাবার কৃষক কন্যা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে তিনি  মাটির টানে ফিরে এসেছেন কৃষিকাজে। হ্যনান প্রদেশের বাসিন্দা তু মংইয়ুয়ানের এই কৃষি খামারের সাফল্য লাভের কাহিনী শুনবেন প্রতিবেদনে।

 

মধ্য চীনের হ্যনান প্রদেশ। ফিংতিনশান সিটির লুশান কাউন্টি, কুয়ানমিয়াতোও গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। এই দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠে হারভেস্টার মেশিন চালাচ্ছেন এক তরুণী। তিনি তার বাবার সঙ্গে যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন খামার। এই তরুণীর নাম তু মংইউয়ান। ২২ বছর বয়সী এই নারী ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। তারপর চাকরি বা শহরে বাস করাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু মাটির প্রতি গভীর টান রয়েছে তু মংইয়ুয়ানের। তিনি সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে ফিরে যাবেন। 

তু মংইউয়ান বলেন, মাটির প্রতি তার গভীর ভালোবাসা। তিনি গ্রামে ফিরে আসেন কারণ তিনি জন্মস্থানের ঋণ শোধ করতে চান, এই মাটির উন্নয়নে কাজ করতে চান। বাবার কৃষিখামারে কাজ শুরু করেন তু। এখানে তিনি শুরু করেন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

 তিনি কৃষি পণ্য অনলাইনে বিক্রি শুরু করেন। তিনি তার ক্যামেরায় গ্রাম জীবনের ছবি তোলেন। তিনি স্থানীয় কৃষিপণ্য অনলাইন প্লাটফর্মে বিক্রি শুরু করেন। এর ফলে স্থানীয় কৃষিপণ্যের বিক্রি বেড়ে যায়। চলতি বছর এপ্রিল মাসে তু ট্র্যাকটর এবং কমবাইন হারভেস্টার চালানোর লাইসেন্স পেয়েছেন। তিনি শুধু নিজের খামারের নয়, গ্রামবাসীকেও সাহায্য করছেন। তাদের ফসল তোলার জন্য হারভেস্টার মেশিন চালাচ্ছেন তু। তু বলেন, প্রতিদিন আমি দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছি। গ্রামবাসীদের গমের ফসল তুলতে সাহায্য করছি। তবে ব্যস্ততা থাকলেও এই কাজ আমাকে আনন্দ দেয়।

চীনে এখন চলছে গ্রাম পুনর্জীবনের ধারা। এই ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন তু এর মতো উচ্চশিক্ষিত তরুণ তরুণীরা।  এরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর গ্রামে ফিরে এসে কৃষি ক্ষেত্রকে উন্নত করে তুলছেন। তারা গ্রামের অর্থনীতিতে নিয়ে এসেছেন নতুন জীবনের স্পর্শ।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

কণ্ঠ: হোসনে মোবারক সৌরভ

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে চীনের নারী চেং লেইলি

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন চীনের নারী চেং লেইলি। এই সাহসী নারীর কথা শুনবো প্রতিবেদনে।

প্যাকেজ: চীনের নারী চেং লেইলি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করছেন তিনি। লেবাননে ২২তম চীনা শান্তিরক্ষা মেডিকেল টিমের প্রধান নার্স চেং লেইলি যোগ্যতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করছেন।

লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে যুদ্ধের ঘনঘটার মধ্যে ছয়মাস ধরে কাজ করছেন হেড নার্স চেং লেইলি। ৩০ বছর বয়সী চেং জানান যখন তিনি লেবানন সীমান্তে কাজ করার জন্য আবেদন করেন তখন পরিবারের সদস্যরা আঁতকে উঠেছিলেন। কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, তিনি শুধু নার্সই নন, একজন সৈনিকও। চীনা সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সৈনিক হিসেবে তিনি তার কর্তব্য পালনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। লেবাননে কাজ করতে এসে ভাষাগত সমস্যায় কিছুটা ভুগতে হয়। সেজন্য তিনি ইংরেজি ভাষা চর্চা শুরু করেন। দ্রুতই ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি। ফলে রোগী ও অন্যদেশের সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগে তার কোন সমস্যা হয় না।

যে কোন জরুরি পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয় তাকে। কঠোর পরিশ্রমও করতে হয়। এরই মধ্যে তিনি  কিছুটা সময় পেলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নেন। চীনা দূতাবাসের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়া, ক্যালিগ্রাফির চর্চা, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, চীনের জাতীয় দিবসসহ বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করেন উৎসাহের সঙ্গে।

 রাতের ডিউটি শেষে কথা মোবাইল ফোনে কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। মায়ের সঙ্গে কথা বলে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি অনুভব করেন। লেবাননের সঙ্গে চীনের সময়ের পার্থক্যের কারণে চেং যখন বাড়িতে ফোন করার সময় পান চীনে তখন রাত এগারোটা। তবু তার মা অপেক্ষা করেন মেয়ের ফোনকলের।

চেং জানান, তিনি তার কাজের মধ্যে সবসময় চীনের গৌরব সমুন্নত রাখার দিকে সচেতন থাকেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

কণ্ঠ: আফরিন মিম

 

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

 

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

 

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ