লি ছিয়াংয়ের সফর ও চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক
2024-06-19 14:50:28

চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং, জুন মাসের ১৫ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত, অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি সফর করেন। সফরকালে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের বার্ষিক  বৈঠক নিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাঁর সফরকালে দু’দেশ অর্থনীতি, বাণিজ্য, মানবিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছায়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিজ বলেন, এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ’।

চলতি বছর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অস্ট্রেলিয়া সফরের এবং চীন-অস্ট্রেলিয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকী। গত ১০ বছরে চীন-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক উত্থান-পতনের সম্মুখীন হয়েছে। পূর্ববর্তী দুটি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সময়কালে, অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে অন্ধের মতো অনুসরণ করে এবং ৫জি নেটওয়ার্ক, সিনচিয়াং ও দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে না-হক অবস্থান নেয়। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিম্ন পর্যায়ে চলে যায়। ২০২২ ও ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে, সি চিন পিং যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়ার বালি ও বেইজিংয়ে, প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সাথে বৈঠক করেন এবং দুই দেশের সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্যে পৌঁছান।

প্রশ্ন হচ্ছে: চীন-অস্ট্রেলিয়া সুসম্পর্ককে কীভাবে অব্যাহত রাখা ও আরও উন্নত করা যায়? এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, একে অপরকে সম্মান করা, মতপার্থক্য মোকাবিলার সময় অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া, এবং পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা অব্যাহত রাখা।

চীন ও অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক সুবিধা একে অপরের পরিপূরক। চীন টানা ১৫ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বাণিজ্যিক অংশীদার, রফতানিবাজার ও আমদানি উত্সদেশ ছিল। ২০২৩ সালে চীন-অস্ট্রেলিয়া বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২২৯২০ কোটি মার্কিন ডলার। অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ বাণিজ্য-উদ্বৃত্তের উত্স চীনের সাথে বাণিজ্য। গত মার্চে চীন অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত ওয়াইনের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ও কাউন্টারভেলিং শুল্ক আরোপ বন্ধ করে। গত এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া আনুমানিক ৮ কোটি ৬০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার মূল্যের ওয়াইন চীনে রফতানি করে, যা আগের তিন বছরের চেয়ে বেশি। অস্ট্রেলিয়ার জনৈক কর্মকর্তা বলেন, চীনা বাজার অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইন শিল্পের সুন্দর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।

এবার চীন-অস্ট্রেলিয়া অবাধ বাণিজ্য চুক্তির বাস্তবায়নকে আরও এগিয়ে নিতে, দু’দেশ একটি সমঝোতাস্মারক স্বাক্ষর করেছে। চীন-অস্ট্রেলিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি চীন ও প্রধান পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রথম উচ্চ-স্তরের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। এটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হয়। এটি ব্যাপকভাবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিনিময়ের থ্রেশহোল্ডকে কমিয়েছে এবং দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি আরও উন্মুক্ত, সুবিধাজনক ও আদর্শ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

এ ছাড়া, চীন ইতিবাচকভাবে অস্ট্রেলিয়ার সাথে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি ও নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে বিদ্যুতের উত্পাদন খাতে সহযোগিতা উন্নত করতে ইচ্ছুক। অস্ট্রেলিয়া-চীন শিল্প ও বাণিজ্য শিল্প কমিটি জানায়, চীনকে বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ানদের ভোগ্যপণ্যের জন্য ৪.২ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে প্রতিফলিত হচ্ছে যে, দু’দেশের সম্পর্কের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হল পারস্পরিক সুবিধা। চীন ও অস্ট্রেলিয়ার উন্নয়ন একে অপরের প্রতি চ্যালেঞ্জ নয়, বরং সুযোগ।

চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ‘নরম’ বিনিময়ও রয়েছে। চীনা প্রধানমন্ত্রী এবারের সফরকালে অ্যাডিলেড চিড়িয়াখানায় চীন-অস্ট্রেলিয়া জায়ান্ট পান্ডা সংরক্ষণ সহযোগিতা গবেষণাকাজ সম্পর্ক খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া, চীন অস্ট্রেলিয়াকে একতরফাভাবে ভিসামুক্ত সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি, উভয় পক্ষ একে অপরের নাগরিকদের তিন থেকে পাঁচ বছরের মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে।

চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সঠিক পথে যাত্রা করেছে। এটি দু’দেশের জনগণের অভিন্ন কল্যাণের সাথে সংগতিপূর্ণ এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুরক্ষায় জরুরি। (অনুপমা/ছাই/আলিম)