‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৭৫
2024-06-18 19:17:47

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘চীন ঘুরে বেড়ানোর জন্য উত্তম জায়গা’

২। ঘুরে আসুন পিকিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস

৩। ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ডে জায়গা পেল ছেংতুর চায়ের দোকান

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৭৫তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।

 

১। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘চীন ঘুরে বেড়ানোর জন্য উত্তম জায়গা’

দর্শক এই পর্যায়ে শুনবো চীন ঘুরে বেড়ানো একজন বাংলাদেশির কথা। তিনি  চীনের চিয়াংসু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।  তিনি স্বাগত জানাচ্ছি বশির উদ্দিন মাহমুদকে।

 

·      ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? –

বশির উদ্দিন - আমি ভালো আছি।

·      আপনি তো বেশ কয়েক বছর ধরে চীনে  আছেন। পড়ালেখা করছেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি, নিশ্চয়ই অনেক জায়গায় ঘুরার  সুযোগ হয়েছে । আমরা জানতে চাই আপনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন?

বশির উদ্দিন – আমি পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রদেশে ঘুরেছি। আমি বেইজিং শানতোং, চেচিয়াং, সিচুয়ান, হুনান, ইয়ুননান প্রদেশে গিয়েছি। এছাড়া আমি উহান, কালারফুল শহর কুনমিংয়ে গিয়েছি। সেখানকার বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে ঘুরেছি।

 

·      এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

বশির উদ্দিন -  চীনের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল। আমি বেইজিংয়ের গ্রেট ওয়াল, জাদুঘর ঘুরেছি। পাশাপাশি ব্যবসায়িক শহর কুয়াংচৌতেও ঘুরেছি। দেখেছি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। চীনের এই জায়গাগুলোতে ঘুরে চীন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার সুযোগ হয়েছে।

চীন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, তাদের খাবার ভিন্ন, ভাষাও ভিন্ন কিভাবে এই   দীর্ঘ সময় সেখানে কিভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন? 

বশির উদ্দিন – চীনের সংস্কৃতি হাজার বছরের ।আমি এখানে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখেছি। চীনা ভাষার মাধ্যমে তাদের যে বিভিন্ন উপস্থাপন সেটাও আমাকে মুগ্ধ করেছে। এছাড়া যে কেউ এখানে থাকলে ধীরে ধীরে চীনা ভাষাটা আয়ত্ত্ব কোঁরে ফেলতে পারবে। আর এখানকার খাবারও খুব মজা। সবার পছন্দের খাবারের একটি নুডুলস। এখন চীনা নুডুলস আমারও খুব পছন্দ।  

 

·      বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায়,  তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন? 

বশির উদ্দিন – যারা ঘুরতে আসতে চান বেছে নিতে পারেন চীন। কারণ চীন ঘুরে বেড়ানোর জন্য উত্তম জায়গা। এখানে যেমন সাংহাই, বেইজিং, নানচিং, কুয়াংচৌ ঘুরাতে বেড়াতে পারেন। এখানে আসলে যে কারোর মন ভালো হয়ে যাবে।

·       আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

বশির উদ্দিন - আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

২। ঘুরে আসুন পিকিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস

চীনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। বেইজিংয়ের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন স্পটও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এখানে অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তার নান্দনিকতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কারণে খ্যাতি পেয়েছে। ১৮৯৮ সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি চীনের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরই এর প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুতে এর নাম ছিল ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব পিকিং। তৎকালীন ছিং সম্রাট কুয়াংসুর আদেশে এর যাত্রা শুরু হয়। ১৯১১ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর  ১৯১২ সালের ৩ মে এর নতুন নামকরণ করা হয় পিকিং ইউনিভার্সিটি।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বেইজিংয়ের হাইডিয়ান জেলায় অবস্থিত। সামার প্যালেস এবং ওল্ড সামার প্যালেসের কাছে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটি আগে রাজকীয় উদ্যানের অংশ ছিল। চাইনিজ স্টাইলে নির্মিত উদ্যানটির প্রাকৃতিক দৃশ্য দারুণ সুন্দর।

বিশাল ক্যাম্পাসের ভিতরে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাড়ি, বাগান, প্যাগোডা এবং অনেক ঐতিহাসিক ভবন ও স্থাপনা। ঐতিহ্যবাহী চীনা নন্দনতাত্বিক দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে এখানে পাশ্চাত্য উদ্যান স্টাইলের সংমিশ্রণ ঘটেছে। বিখ্যাত মার্কিন স্থপতি ও ইতিহাসবিদ টালবট হ্যামলিনের ডিজাইন করা কয়েকটি ভবনও এখানে রয়েছে।

ক্যাম্পাসে প্রবেশের বেশ কয়েকটি ফটক রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম ফটক বেশি বিখ্যাত। এই ফটকের সিলিংয়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল। ক্যাম্পাসের উত্তর অংশে রয়েছে ওয়েইমিং লেক। এই লেককে ঘিরে রয়েছে চমৎকার হাঁটা পথ এবং ছোট ছোট বাগান।

ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি মিউজিয়াম রয়েছে। এসব মিউজিয়ামে খ্রিস্টপূর্ব যুগের চীনা সভ্যতার অনন্য কিছু নিদর্শন রয়েছে। চীনা ইতিহাসে ‘যুদ্ধরত রাজ্য’ সময়কালের বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মে ব্যবহৃত মৃৎপাত্র এবং অলংকারের সংগ্রহ রয়েছে জাদুঘরে।

দক্ষিণ এশিয়া অধ্যয়ন বিভাগে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিরা বিভিন্ন সেমিনার, সিম্ফোজিয়াম উপলক্ষ্যে এখানে আসেন। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের ও বিশ্বের অনেক শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য। নোবেলজয়ী অনেক ব্যক্তি এ বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যও নজরকাড়া। শরতে ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে দেখা যায় নানা রঙের খেলা। গিনকো গাছের সোনালি পাতার সৌন্দর্য দেখতে আসেন অনেক পর্যটক।

প্রতিবেদন-শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ডে জায়গা পেল ছেংতুর চায়ের দোকান

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতুর চা সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরনো। বিশেষ করে এখানকার চা দোকানগুলো পুরনো সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এবার এই চা ঘর ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রামের এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক রেজিস্টারে ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

 

 

ছেংতুতে ১৯০৩ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চায়ের দোকানের ৬ হাজার ৩৪৫টিপাণ্ডুলিপি, ব্যবসায়িক নথি এবং ফটোগ্রাফ পাওয়া যায়, যা থেকে সেই সময়ের চা-সংস্কৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

 

 

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯০৯ সালে ছেংতুতে ৫১৬ টি রাস্তা এবং গলিতে ৪৫৪টি চায়ের দোকান ছিল। সিচুয়ান প্রাদেশিক রাজধানীর পুলিশ স্টেশনের একটি নথিতে দেখা যায় ১৯২৯ সালে এই শহরে চায়ের দোকান ছিল ৬৪১টি।

 

চায়ের এই ঐতিহ্য ধরে রাখা এই শহরে দিন যত যাচ্ছে পর্যটকের সংখ্যাও বাড়ছে বহুগুন। চা প্রেমীরা ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে ঘুরতে আসেন এই শহরে। আর উপভোগ করেন মজার চা।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী