আমরা এমন একটা যুগে বাস করছি, যখন প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। চিকিত্সাক্ষেত্রের জন্যও এ কথা প্রযোজ্য। নতুন নতুন প্রযুক্তি চিকিত্সাব্যবস্থার উন্নতি ঘটাচ্ছে।
২০২৪ সালের ৭ জুন, প্রাচীন রেশমপথের উভয় প্রান্তে, ইতালির রোম ও চীনের বেইজিংয়ের মধ্যে, একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। চায়নিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের শিক্ষাবিদ ও চায়নিজ পিপলস লিবারেশন আর্মির জেনারেল হাসপাতালের ইউরোলজি অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগের পরিচালক চাং সু, চীনে উত্পাদিত চিংফেং মাল্টি-হোল এন্ডোস্কোপিক সার্জিক্যাল রোবট এমপি-১০০০ ব্যবহার করে, রোমের একজন রোগীর শরীরে অস্ত্রোপচার করেন। ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তিনি এই কাজ করেন। এতো দূর থেকে একজন রোগীর শরীরে রোবোটিক রিমোট সার্জারি করার ঘটনা এটাই প্রথম।
এই গ্র্যান্ড ইভেন্টটি ২০২৪ সালে ২০তম ইউরোপীয় চ্যালেঞ্জস ইন ল্যাপারোস্কোপি অ্যান্ড রোবোটিক্স শীর্ষক অনুষ্ঠানে সরাসরি দেখানো হয়। এটি বিশ্বের প্রথম ক্রস-কন্টিনেন্টাল আল্ট্রা-রিমোট হিউম্যান সার্জারি লাইভ ব্রডকাস্ট, এবং এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী রোবট মানবসার্জারি, যা মানব সার্জারির ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ও দুর্দান্ত প্রচেষ্টা। এটি চিকিত্সা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনা ব্র্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেছে।
"এই অস্ত্রোপচারের গোটা প্রক্রিয়ায়, চীনে উত্পাদিত ও বিকশিত রোবটব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে চীনের ৫জি+ ইন্টারনেট ডেডিকেটেড লাইন যোগাযোগ প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়। এশিয়ায় বসে ইউরোপে অল্প সময়ে ও উচ্চ-নির্ভুলতার এই অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়।”
চাং সু সার্জারির পর বলেন, এর মাধ্যমে পরিপক্ক টেলিসার্জারি প্রযুক্তি সার্জারির ক্ষেত্রে স্থানের সীমাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এটি একটি পদ্ধতিগত উদ্ভাবন, যা নতুন প্রযুক্তি ও ধারণার ক্রস-ফিউশন। এটি রোবোটিক সার্জারি, দূরবর্তী যোগাযোগ, ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে নতুন মানের উত্পাদনশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ।
এই অপারেশনের সাফল্য কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতীক নয়, বরং বৈশ্বিক চিকিত্সা-সহযোগিতার একটি মডেলও বটে। এটি প্রমাণ করেছে যে, যতই দূরে হোক না কেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও মানবতাবাদী চেতনার সংমিশ্রণ জীবন বাঁচানোর অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে।
চীনের রোবটগুলো এখন নতুন মানের উত্পাদনশক্তির প্রতিনিধি হয়ে উঠেছে। এসব রোবটের মাধ্যমে সার্জারি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিকাশ ঘটছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা ‘ডাক্তারদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও রোগীদের কল্যাণ’-এর ধারণা অনুসরণ করে, দেশীয় রোবটশিল্পের উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন ক্রমাগত। এর ফলে, বিশ্বব্যাপী চিকিত্সাপ্রযুক্তি খাতে বিনিময় ও সহযোগিতার নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের চিকিত্সা-বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষার ব্যাপারটিও সম্ভব হচ্ছে।
চিকিত্সাপ্রযুক্তির প্রতিটি অগ্রগতির মানে আরও বেশি জীবন বাঁচানো, আরও বেশি ব্যথা উপশম করা। ঐতিহ্যগত সার্জারি ভৌগোলিক অবস্থান ও সময় দ্বারা সীমাবদ্ধ। দূরবর্তী সার্জারি-প্রযুক্তির উত্থান এই সীমাবদ্ধতা ভেঙ্গেছে। ইন্টারনেট ও উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির মাধ্যমে, ডাক্তাররা হাজার হাজার পাহাড় ও নদী পেরিয়ে, বিশ্বের অন্য প্রান্তের রোগীদের শরীরে অস্ত্রপচার করতে পারছেন। এটি শুধুমাত্র চিকিত্সা পরিষেবার আওতা বাড়ায়নি, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত সহজে উন্নতমানের চিকিত্সাসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব করছে।
৭ জুনের দূরবর্তী সার্জারিটি শুধুমাত্র একটি সফল চিকিত্সাসেবার অনুশীলনই নয়, চিকিত্সাপ্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণও বটে। এটি আধুনিক প্রযুক্তির অসীম সম্ভাবনা দেখায় এবং ভবিষ্যতের চিকিত্সাসেবার উন্নয়নের পথ নির্দেশ করে। প্রযুক্তির ক্রমাগত অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, ভবিষ্যতের চিকিত্সা পরিষেবা আরও বুদ্ধিমান, দক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি অবদান রাখবে। (জিনিয়া/আলিম/ফেই)