বিজ্ঞানবিশ্ব ৭৫তম পর্ব
2024-06-17 18:56:34

১। ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি

২। টিউমার বৃদ্ধি রোধে ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরি

৩। থ্রিডি ই-স্কিন তৈরি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা

 

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতি

সদ্য টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে এমন রোগীদের জন্য প্রাথমিক ইনসুলিন থেরাপির কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন এই থেরাপি যারা নেবে, তাদের পরবর্তীতে হার্ট ফেইলুর বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে কম হবে।

আনহুই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েং চিয়ানপিংয়ের নেতৃত্বে একটি যৌথ গবেষণা দল এবং চীনের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সাউদার্ন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও পিকিং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ২৪ বছর ধরে ৫ হাজার ৪২৪ জন টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ওপর পর্যবেক্ষণ-গবেষণা পরিচালনা করে এমনটা দেখেছেন।

গবেষকরা দেখেছেন নতুন নির্ণয় করা টাইপ ২ রোগীদের যারা থেরাপির মধ্যে ছিলেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমেছে ৩১ শতাংশ এবং হার্ট ফেইলুরের ব্যর্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমেছে ২৮ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, ইনসুলিন থেরাপি নিলে নতুন শনাক্ত করা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কিছু প্রদাহজনিত সমস্যা এবং এন্ডোথেলিয়াল ফাংশন সম্পর্কিত বায়োমার্কারগুলোর উন্নতি হয়েছে।

এ গবেষণায় এটি স্পষ্ট যে, সদ্য শনাক্ত হওয়া রোগীদের জন্য প্রথম পর্যায়ের বিকল্প হিসেবে প্রাথমিক ইনসুলিন থেরাপিই কার্যকর।

 

এদিকে চীনের তৈরি বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম সুপারকম্পিউটার থিয়ানহ্য ২ ব্যবহার করে সম্প্রতি চীনা গবেষকরা ডায়াবেটিক জটিলতার চিকিৎসার জন্য সম্ভাবনাময় থেরাপিউটিক চিকিৎসাপদ্ধতি চিহ্নিত করেছেন।

থিয়ানহ্য ২’তে আছে একটি ভার্চুয়াল স্ক্রিনিং ব্যবস্থা। সুন ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এর মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন ২ এমবিসি নামের একটি বিশেষ শাখাযুক্ত অ্যাসিলকার্নিটাইন জৈবরাসায়নিক। যা শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার হারের সঙ্গে সম্পর্কিত।

গবেষকরা বলেছেন, আবিষ্কারটি ডায়াবেটিসের মতো বিপাকীয় রোগগুলোর সঙ্গে যুক্ত জটিলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থেরাপিউটিক কৌশলের নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।

 

ওষুধ আবিষ্কারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থিয়ানহ্য ২ টিম নিজেদের আরও উন্নত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর সমৃদ্ধ ডেটা রিসোর্স এবং প্ল্যাটফর্মের উচ্চতর কর্মক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বায়োমেডিসিনে যুগান্তকারী উদ্ভাবন সম্ভব বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

ডায়াবেটিস বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ক্রনিক রোগ। এটি রক্ত জমাট বাঁধাসহ আরও অনেকগুলো জটিলতার উৎস হতে পারে।

গবেষকরা দেখেছেন যে রক্তের প্লাটিলেটগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে ২ এমবিসি। প্লাটিলেট ঘনীভূতকরণ, বিস্তার এবং সংকোচনের ক্ষমতায় প্রভাব রাখে এটি। প্রভাবটি ইঁদুরের শরীরেও ঘটে বলে প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

রাসায়নিকটি অন্ত্র থেকে নিঃসৃত হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করা হলে তা ওই বিপাকীয় রূপান্তর থামিয়ে দিতে পারে। সম্প্রতি সেল মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত হয় এ গবেষণার বৃত্তান্ত।

 

|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

|| সম্পাদনা: শুভ আনোয়ার

 

টিউমার বৃদ্ধি রোধে ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরি

টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিরোধে একটি নতুন ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরি করেছেন উত্তর চীনের শায়ানশি প্রদেশের গবেষকরা। প্রদেশটির চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এমন সাফল্য দেখিয়েছেন। ক্যান্সার থেরাপি এবং এ সংক্রান্ত রোগের ব্যবস্থাপনায় এই আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

এই ন্যানোম্যাটেরিয়ালটি ক্যান্সার কোষগুলোকে নির্দিষ্ট করে এবং তাদের বৃদ্ধি ও বিস্তার রোধ করে। এটি রাসায়নিক থেরাপির কার্যকারিতাও বাড়িয়ে তোলে।

এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল অ্যাডভান্সড মেটেরিয়ালস জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নতুন এ ন্যানোম্যাটেরিয়াল টিউমারের বৃদ্ধিকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ন্যানোম্যাটেরিয়ালটি ইঁদুরের মধ্যে টিউমারের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সক্রিয় অক্সিজেনের কণাগুলো ক্যান্সারের কোষগুলোকে নির্মূল করতে পারে। টিউমারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সক্রিয় অক্সিজেনের কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কাজ করে নতুন ন্যানোম্যাটেরিয়ালটি।

গবেষকরা পরীক্ষাগারে জীবন্ত প্রাণীর মধ্যে ন্যানোম্যাটেরিয়ালটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন। তারা দেখেছে যে এটি ৮০ শতাংশরও বেশি টিউমার বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। ন্যানোম্যাটেরিয়ালটি স্বাভাবিক টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না।

শি’আনের চিয়াওথোং বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাং তোংফেং জানান, ন্যানোম্যাটেরিয়ালটি চাহিদা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং টিউমার স্থানে সক্রিয় অক্সিজেনের কণিকার সঠিক ঘনত্ব ধরে রাখে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ন্যানোম্যাটেরিয়াল  দ্রুত টিউমারের ক্ষত স্থানে পাঠানো সম্ভব।

চীনা গবেষকদের নতুন আবিস্কৃত এই ন্যানো উপাদানটি শরীরের ভেতরর নিজে থেকেই একত্রিত হতে পারে, ফলে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের সক্ষমতা এবং টিউমারে আটকে থাকার কার্যকারিতাও বেশি।

বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণা এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। এখন তাদের লক্ষ্য হলো এই মানব দেহে পরীক্ষা করা। যদি পরীক্ষাটি সফল হয়, তবে এটি ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে।

ক্যান্সার থেরাপি একটি জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়া। বর্তমান চিকিৎসা প্রায়শই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং সবসময় কার্যকর হয় না। এই নতুন ন্যানোম্যাটেরিয়ালটি ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আরও নিরাপদ এবং কার্যকর বিকল্প হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

থ্রিডি ই-স্কিন তৈরি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা

চীনা বিজ্ঞানীদের একটি দল বিশ্বের প্রথম জৈব নকশায় অনুপ্রাণিত থ্রিডি ইলেকট্রনিক ‘ত্বক’ তৈরি করেছে। এটি মানুষের ত্বকের মতোই তিনটি যান্ত্রিক সংকেতের পাঠোদ্ধার করতে পারে।

মানুষের ত্বকের সংবেদনশীল রিসেপ্টরগুলো বাহ্যিক শক্তি ও চাপকে নিখুঁতভাবে উপলব্ধি করে। এই চাপ ও শক্তির বণ্টন প্রক্রিয়া অনুকরণ করেই চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ই-স্কিনটি তৈরি করেছেন। এমনকি মানুষের মতো এই ইলেকট্রনিক ত্বকেরও আছে নিজস্ব এপিডার্মিস, ডার্মিস ও সাবকিউটেনিয়াস টিস্যু।

সম্প্রতি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে ই-স্কিনটি তিনটি যান্ত্রিক সংকেত—চাপ, ঘর্ষণ এবং টেনে ধরার ডিজিটাল অনুভূতি অর্জন করতে সক্ষম। আর এমনটা ত্বক তৈরিতে একটি যান্ত্রিক আঙুলের অগ্রভাগেই বসাতে হয়েছে ২৪০টি সেন্সর, যার প্রতিটির আকার দুই-তিনশ মাইক্রোমিটারের বেশি নয়।

মূলত চীনা বিজ্ঞানীদের তৈরি ই-স্কিনটি প্রাথমিক পর্যায়ের মেডিক্যাল ডায়াগনস্টিকসে ব্যবহৃত হবে। গবেষকদের মতে, তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ও হার্ট রেটসহ জরুরি সব পর্যবেক্ষণে কাজে আসবে রোবটিক হাতে লাগানো এই বায়োনিক ত্বক।

এই আবিষ্কারটি কেবলমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রেই নয় বরং রোবোটিক্স, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং এমনকি পোশাক শিল্পেও বিপ্লব ঘটাতে পারে। ভবিষ্যতে, আমরা আরও বাস্তবসম্মত এবং মানব-সদৃশ রোবট, আরও মুখোমুখি ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা এবং এমনকি পোশাক যা আমাদের চারপাশের পরিবেশের সাথে আরও স্মার্টভাবে যোগাযোগ করতে পারে তা দেখতে পেতে পারি।

এই উদ্ভাবনটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্সের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ই-স্কিন প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের চারপাশের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার নতুন উপায় তৈরি করতে পারে।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী