শুল্কের মাধ্যমে চীনা গাড়িকে বাধা দেয়ার ইইউর আচরণ কেন মানুষের সমর্থন পেতে পারে না?
2024-06-14 19:40:20

জু্ন ১৪: ‘ইউরোপ , বিশেষ করে জার্মান গাড়ি শিল্পের ওপর ইইউর এ ব্যবস্থার ইতিবাচক প্রভাবের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাব বেশি। ইউরোপ গাড়ি শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক শক্তির উন্নয়নের ধারায় নেতিবাচক ভুমিকা রাখছে।’ ১৩ জুন, চীনের ইলেকট্রিক যানবাহনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ বিষয়ে ইইউয়ের সংশ্লিষ্ট ঘোষণার প্রসঙ্গে জামান ভক্সওয়াগেন গ্রুপের একজন কর্মকর্তা চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজিকে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ইউরোপ সুরক্ষাবাদ চায় না বরং ইউরোপের গাড়ি শিল্পকে ইলেকট্রিফিকেশনের দিকে রুপান্তর করা উচিত। 


শুধু ভক্সওয়াগেন নয়, মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডাব্লিউসহ ইউরোপের বিভিন্ন গাড়ি প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রথম থেকেই  ইইউর এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, এহেন আচরণ ইউরোপের গাড়ি শিল্পের উন্নয়নকে বাধা দেবে এবং ইউরোপের নিজস্ব স্বার্থকেও ক্ষুণ্ণ করবে। ইইউ চায়না বিজনেস কাউন্সিলও এক ঘোষণায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের এহেন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। 


ইউরোপের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো একসাথে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে ইইউর এ সিদ্ধান্ত আসলে ইউরোপের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিবেচনা করে নেওয়া হয়নি, বরং তা পুরোপুরি রাজনীতিপ্রসূত কর্মকাণ্ড। এহেন আচরণ বাজার অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নীতিকে লঙ্ঘন করেছে এবং চীন ও ইউরোপের গাড়ি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও গাড়ি সরবরাহ চেইনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে গুরুতরভাবে ব্যাহত করেছে। এ সিদ্ধান্ত নিজসহ সবপক্ষের জন্য ক্ষতি বয়ে এনেছে। 


এত বিরোধিতা উপেক্ষা করে ইউরোপ কেন জোর করে চীনা ইলেকট্রিক যানবাহনের ওপর চাপসৃষ্টির এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে? 


এর কারণ হলো: 


প্রথমত, চীনের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করার মানসিকতা। যদিও ইউরোপের অধিকাংশ মানুষ বা আমরা বলতে পারি প্রধান ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী চীন-ইউরোপ সহযোগিতার সম্পর্ককে সমর্থন করে তবে এর পাশাপাশি চীন-বিরোধী স্বল্পসংখ্যক কিছু মানুষও রয়েছে। তারা চীনের উন্নয়ন দেখতে চায় না।   


দ্বিতীয়ত, ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে ভয় করার মানসিকতা।অনেক বছর ধরে গতানুগতিক জ্বালানিচালিত যানবাহনের খাতে ইউরোপ উন্নত স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে চীনের নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি শিল্প দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে।এজন্য ইউরোপের কিছু লোক ভয় পাচ্ছে যে চীন হয়তো ইউরোপকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইউরোপের কয়েকটি গণমাধ্যমে এমনকি একথাও বলা হয়েছে, চীনা গাড়িকে ইউরোপ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে এবং এর ফলে ইউরোপের গাড়ি উৎপাদনকারীরা উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সময় পাবে। বাস্তবতা কি সত্যি এরকম? যদি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় তাহলে বোঝা যাবে এই অন্যায্য পদ্ধতিতে প্রতিযোগীদের ওপর চাপ ও বাধা সৃষ্টির আচরণের মাধ্যমে ইউরোপ নিজের জন্য আরও বেশি ক্ষতি বয়ে আনবে। 


তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসরণ করার মানসিকতা। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র একদিকে তথাকথিত ওভার ক্যাপাসিটি বা অতিরিক্ত সক্ষমতার ভুয়া তত্ত্ব প্রচার করছে; অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে একযোগে চীনের নতুন জ্বালানি শিল্পের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। 


আসলে, নতুন জ্বালানি গাড়ি শিল্পের খাতে, চীন ও ইউরোপের ব্যাপক অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিএমডাব্লিউ, ভক্সওয়াগেনসহ একাধিক ইউরোপীয় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান চীনে তাদের নতুন জ্বালানি গাড়ির উৎপাদন বা গবেষণা কেন্দ্র উন্নত করছে;পাশাপাশি বিওয়াইডি, সিএটিএলসহ একাধিক চীনা শিল্প্রতিষ্ঠানও ইউরোপে বিনিয়োগ করে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছে বা করবে। 


ইতিহাসে বারেবারে প্রমাণিত হয়েছে যে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার শক্তি সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।  অন্যায়ভাবে বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়লাভ করতে পারবে না। ইউরোপের উচিত সব মহলের যৌক্তিক মতামত শোনা এবং দ্রুত তাদের ভুল আচরণ সংশোধন করা।  যদি ইউরোপ তাদের ভ্রান্ত আচরণ বহাল রাখে তাহলে চীন অবশ্যই দৃঢ়ভাবে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বাজারের নীতি এবং চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বৈধ স্বার্থকে রক্ষা করবে। 

(আকাশ/শান্তা/ফেইফেই)