আকাশ ছুঁতে চাই ৭৪
2024-06-13 16:21:24

১.  উৎসবে আনন্দমুখর চীনের নারী

২. প্রযুক্তিতে নারী

৩. ড্রাগনবোটে মায়ের দল

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে  স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

উৎসবে আনন্দমুখর চীনের নারী

চীন জুড়ে এখন উৎসবের আবহ। ১০ তারিখে হয়ে গেল ড্রাগনবোট উৎসব। আবার সামনে রয়েছে ঈদুল আজহা। চীনের নারী শিশুসহ সকলেই এখন আনন্দমুখর। শুনবো একটি প্রতিবেদনে।

চীনে চলছে উৎসবের আমেজ। চীনের অন্যতম বড় সামাজিক উৎসব ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল বা তুয়ান উ চিয়ে সম্প্রতি সমাপ্ত হয়েছে। তবে উৎসবের বিশেষ খাবার চোংজি খাওয়া চলছে এখনও।

 ড্রাগনবোট  উপলক্ষ্যে চীনের নারীরা ঘরে ঘরে তৈরি করেছেন আঠালো চালের তৈরি পিরামিত আকৃতির ডাম্পলিং চোংজি। চোংজি তৈরির জন্য ছোট ছোট স্থানীয় কারখানাগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন নারী শ্রমিকরা। উৎসবের আগে বাড়তি অর্থ রোজগার হয়েছে তাদের।

এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে চীনের হুই, উইগুর ও অন্যান্য জাতির মুসলিমরা উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চীনের দশটি জাতির মানুষ ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করেন। হুই, উইগুর, তাজিকসহ দশটি জাতির নারীরা এখন দারুণ ব্যস্ত। তারা ঈদের দিন বিশেষ ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন। সাধারণত ভেড়া ও ছাগল কোরবানি হয়।

 

কোরবানির পশুর মাংস দিয়ে তৈরি হয় বিশেষ ঐতিহ্যবাহী খাদ্য। লম্বা শিকে গাঁথা কাবাব, ভেড়ার রোস্ট, মাংসের পুর দেয়া পিঠা, নানরুটি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য তৈরি এবং বিশেষ সাজসজ্জার মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চীনের মুসলিম নারীরা।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

প্রযুক্তিতে নারী

যুগ যুগ ধরে চলে আসা এক ভ্রান্ত ধারণা - ছেলেরা যা করতে পারে, মেয়েরা তা পারে না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, অনেক নারী এই ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি প্রমাণ করেছেন তারা যেকোনো ক্ষেত্রে সমানভাবে সফল হতে পারেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামের তেমনই একজন নারী তৃষ্ণা দিও। সমাজ পরিবারের সকল বাধা পেরিয়ে হয়েছেন সফল, এগিয়ে নিচ্ছেন তার মতো নারীদের।  বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম কাকরকান্দি। এই গ্রামের আলো-বাতাসে বড় হয়েছেন গারো সম্প্রদায়ের তৃষ্ণা দিও। পেশায় একজন ফ্রিল্যান্সার; তবে শহরে থেকে নয়, কাজটি তিনি করছেন গ্রামীণ নিভৃত পরিবেশে। এর মাধ্যমে কেবল নিজেই স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন নয়, তিনি অসংখ্য গ্রামীণ নারীরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তুলেছেন সকলের মনে।

কিন্তু বাংলাদেশের একটি গ্রামে থেকেই কীভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আয় করছেন তৃষ্ণা? গল্পটা জানতে একটু পেছনে ফেরা যাক। ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) সম্পন্ন করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে চাকরি নেন তিনি। কাজের ধরনের সঙ্গে সেভাবে মানিয়ে নিতে পারেননি বলে করোনার সময় চাকরি ছেড়ে চলে যান নিজ গ্রামে। গ্রামে বসেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করে যান, কিন্তু সেভাবে সাড়া মেলেনি। নতুন চাকরির জন্য গ্রামে থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত আবেদন পাঠাতে থাকেন।

এ সময় তার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা যায়। তাই দেরি না করে তিনি ময়মনসিংহের একটি আইটি ইন্সটিটিউটে গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সে ভর্তি হন। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি বাজার থেকে হালুয়াঘাট উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে। এভাবে তিনি কোর্সটি সম্পন্ন করেন।

প্রতি শুক্র ও শনিবার নিজের গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে যেতেন ক্লাস করতে। সন্ধ্যা ৬টার ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতে রাত ১০টা বাজত। বাসায় এসেই যা শিখেছেন চর্চা করতেন। মাঝেমধ্যে টেরও পেতেন না সকাল কখন হয়েছে। এমনও হয়েছে, তিন রাত টানা ঘুমাননি। এতটাই নিমগ্ন থাকতেন কাজ শেখার প্রতি। প্রায় ৬ মাস পর প্রথম যেদিন বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮৬ ডলারের কাজের প্রস্তাব পান, তখন তার আগ্রহ আরও প্রবল হয়। অজান্তেই বলে ফেলেন ‘সম্ভব’।

শুরুতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পেতে বা করতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। দেশের এক গ্রাহক তাকে দিয়ে একটি কাজের নকশা ১৭ বার পরিবর্তন করিয়েছিলেন। পরে কাজটি তার পছন্দ হয়।  আর এভাবেই ধীরে ধীরে দেশি বিদেশি বড় বড় কাজের অর্ডার পেতে থাকেন। ফলে তার আয়ও বাড়ে।

বর্তমানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে প্রতি মাসে গড়ে ২ লাখ টাকা আয় করছেন তৃষ্ণা। পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন আশপাশের জেলার ৪০ জন শিক্ষার্থীকে, যাদের অনেকেই নামমাত্র ফি দিচ্ছেন, অনেকেই আবার শিখছেন একদম বিনা মূল্যে। কারণ, অর্থনৈতিক সক্ষমতা থেকে শিক্ষার্থীর আগ্রহটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তৃষ্ণা দিও।

নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য তৃষ্ণা গড়েছেন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটির নাম দিয়েছেন তার শিক্ষার্থীরাই। যেহেতু অনেক প্রত্যাশা নিয়ে তারা তৃষ্ণা দিওর মতো হতে এসেছে, তাই প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয়েছে ‘প্রত্যাশা আইটি ইন্সটিটিউট’। এ ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে আগ্রহী নারীদের প্রত্যাশা পূরণ করাই এখন তৃষ্ণা দিওর লক্ষ্য। তিনি চান তার মতো প্রত্যেক নারী স্বনির্ভর হয়ে উঠুক ।

তৃষ্ণা এমন একজন নারী যিনি সমাজের রীতিনীতি, লিঙ্গভেদ, এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এগিয়ে চলেছেন। এই গল্প শুধু তৃষ্ণার একার নয়, বরং অসংখ্য নারীর, যারা তাদের পরিবারের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, লড়াই করে, এবং অনুপ্রেরণা জাগায়। তৃষ্ণার সাফল্য থেকে বোঝা যায়, নারীর শক্তি, সাহস এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে পৌছে দেয় আকাশ সমান উচ্চতায়।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

জয়ী হয়েছে ‘মায়ের দল’

ড্রাগনবোট উৎসব চীনের অন্যতম বড় সামাজিক উৎসব। এই উৎসবের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হলো ড্রাগন নৌকার প্রতিযোগিতা। এ বছর সদ্য সমাপ্ত ড্রাগন বোট প্রতিযোগিতায় অলোচনায় উঠে এসেছে ‘মায়েদের দল’। নারীদের এই দল নিয়ে শুনবো একটি প্রতিবেদন।

প্যাকেজ: ড্রাগন বোট প্রতিযোগিতায় সাধারণত নৌকা বাওয়ার কঠিন কাজটি পুরুষরাই করে থাকেন। কিন্তু নারীরাও যে এ কাজে পিছিয়ে নেই সেটি প্রমাণ করেছেন কুয়াংতোং প্রদেশের একটি নারী ড্রাগনবোট দল। এই দলের সদস্যরা সবাই নারী। তাদের বয়স ২৮ থেকে ৬২ বছরের মধ্যে। এদের একজন ফং লিচুয়ান একজন চাষী, কুয়ো ইয়ানথিং একজন গৃহিণী এবং হ্য কুয়াংছুন একজন কফি প্রস্তুতকারক। তিনটি পেশা ও ভিন্ন ভিন্ন বয়সের হলেও তারা সবাই বছরে একবার একত্রিত হন ড্রাগনবোট উপলক্ষ্যে। তারা দেশে ও বিদেশে ড্রাগনবোট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নারীর শক্তিমত্তার দিকটি তুলে ধরেন।

ফং লিচুয়ানের বয়স ৫৪ বছর। তিনি নব্বই দশকে যখন প্রথম ড্রাগনবোটের নারী দল গঠিত হয় সেসময় নৌকাবাইচে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে শাথিয়ান নারীদের দল তৃতীয় বিশ্ব ড্রাগনবোট প্রতিযোগিতায় যুক্তরাজ্যে যায়। তাদের দল তিনটি ক্ষেত্রে স্বর্ণপদকও পায়।

২০১৮ সালে শাথিয়ান নারী দলে যোগ দেন কুয়ো ইয়ানথিং। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে ড্রাগনবোট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

এ বছরও মায়ের দল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ড্রাগনবোটের নারী দলের কাছে এটা শুধু বছরে একবার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াই বড় কথা নয়। তাদের কাছে ড্রাগনবোট হলো ঐতিহ্যকে ভালোবাসার নাম। তারা পরবর্তি প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্য পৌছে দিতে চান। তারা এটাও তুলে ধরতে চান যে, পুরুষের মতো নারীও সব কাজেই সফল হতে পারে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

কণ্ঠ: আফরিন মিম

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সুপ্রিয় শ্রোতা। আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ