‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৭৪ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. শেনচেনে তাইওয়ানের যুবকদের প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক যাত্রা
২. চীনে আনন্দঘন পরিবেশে হয়ে গেল ‘কাওখাও’
৩. গ্রামীণ রকব্যান্ড চীনা গ্রামের তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস
৪. চীনে শিশুদের ফুটবল টুর্নামেন্ট
১. শেনচেনে তাইওয়ানের যুবকদের প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক যাত্রা
তাইওয়ানের যুবকদের চীনের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি ভ্রমণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গেল সপ্তাহে কুয়াংতোং প্রদেশের শেনচেন সিটিতে অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ দিনের বিজ্ঞানভিত্তিক এই কর্মসূচী। এতে তাইওয়ান অঞ্চলের ৭০ জন তরুণ অংশগ্রহণ করেন।
সব স্তরের তরুণ অংশগ্রহণকারীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ত পরিবেশনা উপভোগ করেন। এতে একটি মনোমুগ্ধকর রোবট শো পরিবেশিত হয়। তাইওয়ানের তরুণদের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর পেতে সরাসরি এইভাবে ভ্রমণ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করেন অংশগ্রহণকারী যুবকরা।
তাইওয়ানের আরও তরুণদের কাছে শেনচেনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন বলে জানান আয়োজক চি ওয়েইসিয়াং।
"আমরা ডিজেআই এবং বিওয়াইডি সহ তাইওয়ানের তরুণদের সঙ্গে একটি গভীর অনুসন্ধানের জন্য শেনচেনের কিছু বিখ্যাত উদ্যোগ পরিদর্শন করব। এখানে এসে তারা তাদের মাতৃভূমির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিল্পের সৌন্দর্যের তুলনামূলক ব্যবধান কীভাবে দূর করা যায় তা শিখতে পারবে।’
তাইওয়ানের তরুণদের জন্য চীনা মূল ভূখণ্ড সম্পর্কে জানার সুযোগ প্রদান করতে ২০১৪ সাল থেকে এই প্রোগ্রামটি হয়ে আসছে। ১১তম বারের মতো এবার অনুষ্ঠিত হয় এই কর্মসূচী।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. চীনে আনন্দঘন পরিবেশে হয়ে গেল ‘কাওখাও’
আনন্দমুখোর পরিবেশে চীনে ‘কাওখাও’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত পরীক্ষার নাম কাওখাও। একে বলা হয় ‘কলেজ এন্ট্রান্স এক্সাম’। জাতীয় কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা বা কাওখাও চীনের শিক্ষার্থীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। চলতি বছর ৭ জুন এই পরীক্ষা শুরু হয়।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৪ সালে জাতীয় কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য ১ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ লাখ ১০ হাজার বেশি।
চীনে দ্বাদশ শ্রেণি বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ‘হাইস্কুল শিক্ষার্থী’ বলা হয়। হাইস্কুল পাস করার পর কলেজ (বিশ্ববিদ্যালয়) স্তরে ঢোকার জন্য জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সারা দেশের সব হাইস্কুল পাস করা শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। এ পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কোন বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে তা নির্ধারণ করা হয়।
যুব সমাজের ভবিষ্যত ও ক্যারিয়ার অনেকাংশে নির্ভর করে এই পরীক্ষার উপর। অভিভাবকরাও তাই উদ্বিগ্ন থাকেন সন্তানদের জন্য।
৩. গ্রামীণ রকব্যান্ড চীনা গ্রামের তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস
চীনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া আট শিক্ষার্থী অল্প সময়ে তারকা খ্যাতি পেয়েছে। তারা গ্রামীণ একটি রক ব্যান্ডের শিল্পী। মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের হেংইয়াং কাউন্টির একটি প্রত্যন্ত স্কুলে পড়াশোনা করে তারা।আপনাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে কীভাবে তারা এই খ্যাতি অর্জন করেছে? তাদের রক ব্যান্ড করে গড়ে তোলার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন একজন শিক্ষক।
ব্যান্ড দলটি গঠিত হয়েছে মাত্র দেড় বছর আগে। কিন্তু এখন তারা স্থানীয় তারকা। স্কুলের বাইরে পারফর্ম করার জন্য প্রায়ই ডাক পড়ে দলটির।
মিয়াওসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিং তানের মতে, ব্যান্ডের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ছিল পিছিয়ে থাকা। শিল্পী হওয়ার আগে সংগীতের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশই করতে পারেনি আত্মবিশ্বাস এবং লজ্জার কারণে।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মিয়াওসি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর বাবা-মা থাকে দূর শহরে। স্কুলটির ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ জনই বলা যায় সুবিধাবঞ্চিত।
এদের অনেকেই আবার অন্তর্মুখী স্বভাবের। ঘাটতি ছিল আত্মবিশ্বাসেও।
এ সমস্যা দূর করতেই নিং ত্যানের মাথায় আসে গানের দল গড়ার আইডিয়া। কিন্তু স্কুলটির কোনো শিক্ষকই জানতেন না গান।
নিং খুঁজতে শুরু করেন প্রশিক্ষক। প্রত্যন্ত গ্রামে সেটাও পাওয়া যাচ্ছিল না।
২০২২ সালে হেংইয়াং শহরের একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকানে পাওয়া গেল সংগীতপ্রেমী সো ওয়েন চিনের। তাকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেন নিং। রাজি হন সো ওয়েন।
২০২২ সাল থেকে, ওয়েন প্রতি সপ্তাহে একদিন করে শিশুদের বিনামূল্যে ক্লাস নিতে শুরু করলেন। নিজের কীবোর্ড ও গিটার নিয়ে ৬০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে লাগলেন নিয়মিত।
‘বাদ্যযন্ত্রগুলো দেখে তারা খুব খুশি হয়, যেন মূল্যবান সম্পদ পেয়েছে। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি, চিন্তা করো না, নিশ্চিন্তে এগুলো ব্যবহার করতে পারো।’
‘যখনই আমি গান শুনি, আমার মনে হয় আমার মনের খালি ক্যানভাসটা ভরে যায়। তখন মাথায় শুধু সুরই বাজে।’
শহরের কেন্দ্রে থাকা নিজের দোকান পরিচালনায় ওয়েন ব্যস্ত থাকলেও, শিক্ষার্থীদের কোনো পারফরম্যান্সের আগে তিনি সপ্তাহে দুদিন স্কুলে যান।
‘ওদের সাথে কাটানো প্রতিটি সময় আমাকে প্রশান্তি দেয়। যতক্ষণ ওদের সঙ্গে থাকি, প্রতিটি মুহূর্তে আমি সুস্থ হয়ে উঠি। মানসিক চাপ থাকে না।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মতে, গ্রামীণ শিক্ষা উন্নয়নে তিনি এবং তার শিক্ষকরা আরও বড় স্বপ্ন দেখছেন।
নিং তান, প্রধান শিক্ষক, মিংসি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘সামনে একটি পরিবেশনা আছে, তাই কয়েকদিন হলো মি. ওয়েন এখানে রিহার্সাল করাচ্ছেন। এটি একটি অসাধারণ সুযোগ আমাদের এবং শিক্ষার্থীদের জন্য।’
ব্যান্ড গঠনের মাত্র দুই মাসেই অনেক সহৃদয় মানুষ এই ব্যান্ডটিকে দান করেছেন বাদ্যযন্ত্র । সংগীতের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা আরও বেশি মনোযোগী হচ্ছে তাদের পড়াশুনায়। উন্নতিও হচ্ছে তাদের পড়াশুনায়।
‘ব্যান্ডে যোগ দেওয়ার আগে আমার মন খারাপ থাকতো। এখন বন্ধুদের সাথে অনুশীলনের পর এখন মন খারাপ হয় না। ভবিষ্যতে, আমি মিঃ ওয়েনের মতো সংগীত শিক্ষক হতে চাই।’
রক ব্যান্ডটি এখন মঞ্চে উঠে গ্রামবাসী ও অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবেশন করে তাদের গান। দর্শকদের করতালিতে পায় আরও উৎসাহ।
গ্রামীণ এই রক ব্যান্ডের গল্প তুলে ধরেছে সঙ্গীত কীভাবে দুর করতে পারে শিক্ষার্থীদের অন্তর্মুখিতা। খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দরজা।
প্রতিবেদক : হোসনে মোবারক সৌরভ
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
৪. চীনে শিশুদের ফুটবল টুর্নামেন্ট
ফুটবল খেলার প্রতি চীনা শিশুদের আগ্রহ বাড়াতে বার্ষিক ফুটবল টুর্নামেন্ট ‘পাইতুই কাপ’ এর আয়োজন করা হয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই আয়োজন করা হয়।
ছয় থেকে সাত বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে একটি ম্যাচের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় প্রায় ২০০টি গ্রুপে ২ হাজার শিশু অংশগ্রহণ করছে। তবে এতে জয়-পরাজয় কিংবা কোনও র্যাঙ্কিংয়ের গুরুত্ব দেওয়া হয় না।
মূলত শিশুদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি দলগত কাজ, নেতৃত্ব এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনার দক্ষতা বিকাশেও সহায়তা করতেই এমন আয়োজন করা হয়।
এ ফুটবল টুর্নামেন্টটি ১৯৮৪ সালে শুরু হয় এবং এটি বেইজিংয়ের জনপ্রিয় ক্রীড়া ইভেন্টগুলোর একটি।
প্রতিবেদক : শুভ আনোয়ার
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী