আকাশ নীল রং এবং হ্রদটা আয়নার মত! ঐতিহ্যবাহী ফুজিয়ান সোয়ালো-টেইল রিজ ছাদ-সহ পশ্চিমা শৈলীর ভবনটি সবুজের মাঝে অবস্থিত। দেশপ্রেমিক বিদেশি চীনা নেতা, উদ্যোক্তা, শিক্ষাবিদ, সমাজসেবী, সমাজকর্মী তান কাহ কি-এর (Tan Kah Kee) ভাস্কর্যটি সকালের উষ্ণ আলোয় একটি দীর্ঘ ছায়া ফেলেছে এবং শিক্ষার্থীরা দ্রুত পায়ে শ্রেণীকক্ষের দিকে ছুটে যাচ্ছে। সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া শাখার সকালটা প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর।
২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মালয়েশিয়া সফরের সময়, তিনি সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া শাখা স্কুল যৌথভাবে নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন। আজ, উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি চীন-মালয়েশিয়া উচ্চশিক্ষা সহযোগিতার একটি প্রধান প্রকল্পে পরিণত হয়েছে এবং এটি "বেল্ট এ্যান্ড রোড" উদ্যোগের অন্তর্গত একটি মুক্তা হিসাবে পরিচিত।
কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনটি নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, লাল ছাদ এবং সাদা দেয়াল সহ ভবনগুলো চোখে পড়ে। এ বছরের এপ্রিলে, সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া শাখা স্কুল সারা বিশ্ব থেকে প্রায় পাঁচশ বসন্ত-নবীনদের স্বাগত জানিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ১২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করেছে এবং তাদের স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছে।
"এখানে কলেজ শেষ করার পরে, আমি চীনে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে চাই।" নবীন ছাই ইয়ংনির পরিকল্পনায়, "চীন" হল মূল শব্দ। চীনা সংস্কৃতিকে ভালোবাসে এমন এই মালয়েশিয়ান মেয়েটির স্বপ্ন রয়েছে- একটি চীনা পর্যটন থিম-সহ একটি নতুন মিডিয়া অ্যাকাউন্ট চালানো, যাতে আরও বেশি লোক চীনকে বুঝতে পারে।
ছাই ইয়ংনি বর্তমানে বিজ্ঞাপন অধ্যয়ন করছেন, শুধুমাত্র ফিল্ম এবং টেলিভিশন প্রোডাকশন, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন এবং ডেটা বিশ্লেষণ অধ্যয়ন করছেন না, তবে মনোবিজ্ঞান এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কাজ করছেন। সমৃদ্ধ কোর্সে, সে অনুভব করেছিল যে, সে প্রতিদিন তার স্বপ্নের কাছাকাছি যাচ্ছে।
ছাই ইয়ং নি-এর মতো, অনেক মালয়েশিয়ান মিস্টার তান কাহ কি-এর সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার গল্প জানেন।
১৯২১ সালে, দেশপ্রেমিক বিদেশি চীনা জনাব তান কাহ কি, দক্ষিণ ফুজিয়ানে তার নিজ শহরে সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই বিশ্বাসের সাথে যে "শিক্ষা একটি দেশের ভিত্তি এবং স্কুল প্রতিষ্ঠা করা জনগণের বাধ্যতামূলক কর্তব্য" এবং "একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ এবং আমাদের দেশের গৌরব নিয়ে আসার" আদর্শ। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দীর্ঘকাল ধরে ফুজিয়ানে কাজ করেছেন এবং জনাব তান কাহ কিকে "মাতৃভূমির নির্মাণের বিষয়ে যত্ন নেওয়ার এবং শিক্ষা খাতে নিজেকে নিয়োজিত করার আন্তরিকতার জন্য প্রশংসা করেছেন, যা সবসময় শেখার যোগ্য।"
চীন ও মালয়েশিয়া সমুদ্র জুড়ে একে অপরের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। দুই দেশের বন্ধুত্বের ইতিহাস দীর্ঘ। মালয়েশিয়ায় লক্ষ লক্ষ বিদেশি চীনা রয়েছে, যাদের অনেকেই চীনের ফুজিয়ান থেকে গেছেন। সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া শাখা ক্যাম্পাস হল একটি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা যা বিদেশে স্কুল পরিচালনা করছে।
মালয়েশিয়ার যোগাযোগের উপমন্ত্রী জাং নিয়ান ছুন, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া শাখা স্কুলের দ্রুত উন্নয়নের সাক্ষী ছিলেন। তিনি সিনহুয়া নিউজ এজেন্সিকে বলেন যে, সিয়ামেন ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া শাখা স্কুল মালয়েশিয়ায় চীনের উচ্চ মানের উচ্চ শিক্ষার সংস্থান এনেছে এবং এখন মালয়েশিয়ার সর্বস্তরের মানুষের কাছে তা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। "আরও বেশি মানুষ এখন এই স্কুলে আবেদন করছে, এবং জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে" জাং নিয়ান ছুন এ কথা বলেছিলেন।
আজ, সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া শাখা স্কুলে ১০টি কলেজ রয়েছে, যেখানে ২৩টি স্নাতক, ১১টি মাস্টার্স মেজর, ৬টি ডক্টরাল মেজর, এবং ৩টি প্রস্তুতিমূলক মেজর রয়েছে, যা লিবারেল আর্টস, বিজ্ঞান, শিল্প, মেডিসিন ও বাণিজ্যের মতো একাধিক শাখাকে কভার করে। ক্লিনিকাল মেডিসিন, স্নায়বিক ও আচরণগত বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং সাধারণ সামাজিক বিজ্ঞানের চারটি শাখা এসেনশিয়াল সায়েন্স ইন্ডিকেটর ডেটাবেসে (ইএসআই) বিশ্বের শীর্ষ এক শতাংশে প্রবেশ করেছে।
ইএসআই-এর সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, সিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া শাখার শিক্ষক এবং ছাত্রদের দ্বারা প্রকাশিত গবেষণাপত্রের গড় উদ্ধৃতি হার মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। স্কুলের অত্যাধুনিক বিষয়, যেমন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অধ্যয়ন, সামুদ্রিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও ব্যবসা, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
সামিহা সাহোবা সাইয়াম, ফাইন্যান্স মেজর ২০২২ এর প্রাক্তন ছাত্রীর মতে, সিয়ামেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া শাখা স্কুলে অধ্যয়ন তার জীবন বদলে দিয়েছে। "এটি আমার জীবনের সেরা সময় ছিল," তিনি বলেছিলেন।
সামিহা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে এসেছেন। যখন সিয়ামেন ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া শাখা স্কুলে অধ্যয়নরত ছিলেন, তখন তাকে স্কুলের সুপারিশ করা হয়েছিল এবং চায়না জেনারেল নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এড্রা কর্পোরেশনের কুয়ালালামপুর সদর দফতরে ভর্তি করা হয়েছিল। স্নাতক শেষ করার পর, তিনি এড্রা বাংলাদেশ কোম্পানিতে যোগ দেন এবং কোম্পানির অর্থ বিভাগে প্রথম বাংলাদেশি কর্মচারী হন।
"আমরা আরও আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগের প্রতিভা গড়ে তোলার আশা করি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা চীন ও মালয়েশিয়া, চীন ও আসিয়ানের মধ্যে সহযোগিতা এবং এমনকি ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ ইনিশিয়েটিভের অধীনে দেশগুলির মধ্যে বিনিময়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।" সিয়ামেন ইউনিভার্সিটির মালয়েশিয়া শাখা স্কুলের অধ্যক্ষ ওয়াং রুই ফাং বলেন যে, বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা বছরের পর বছর অধ্যয়ন এবং একসাথে থাকার পরে, একে অপরকে বোঝা এবং গভীর আদান-প্রদানের পর আজীবন বন্ধু হতে পারে। "এটি একটি ব্যক্তি পর্যায়ে গভীরতর সংযোগ।"
চীন ও ব্রাজিলের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন
ব্রাজিল সময় ৩ জুন সন্ধ্যায়, উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের একটি শহর নাটালের প্রাচীন আলবার্তো মারানহাও থিয়েটারে, মঞ্চে ব্রাজিলিয়ান অর্কেস্ট্রার বাজানো "মাই কান্ট্রি" গান শোনা যায়। অনেক দর্শক সে গান শুনেছে।
"এটি একটি শক্তিশালী মাতৃভূমি, যেখানে আমি বড় হয়েছি," দর্শকদের মধ্যে একজন সোপ্রানো জোরে বললেন। ষাটের দশকের একজন বিদেশি চীনা লিউ জেং ছিন, তার চোখ স্নেহ এবং অশ্রুতে পূর্ণ ছিল, তিনি তার নাতনিকে পারফরম্যান্স দেখার জন্য রেসিফ থেকে তিনশ’ কিলোমিটার দূরে গাড়ি চালাতে বলেছিলেন।
কনসার্টের পরে, লিউ জেং ছিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন: "আমি এই কনসার্টটি দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম, শুরু থেকে যখন ব্রাজিলের শিশুরা "জেসমিন" গেয়েছিল, তারপর টেনর "আই লাভ ইউ চায়না" গেয়েছেন এবং শেষে "মাই মাদারল্যান্ড" বাজানো হয়, আমি জোরে গান গাইতাম না। অনেক দিন ধরে এত জোরে গান গাইনি, কারণ আমি আমার আত্মার গভীর থেকে অনুভব করেছি যে, দুই দেশের মানুষের হৃদয় সংযুক্ত।"
সেই রাতে কনসার্টটি ব্রাজিলের রিও গ্র্যান্ডে ডো নর্তে ফেডারেল ইউনিভার্সিটির ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রা দল পরিবেশন করে। ক্লাসিক চাইনিজ ও ব্রাজিলিয়ান সংগীত একে অপরের সাথে মিশে যায়, যা চীনা ও ব্রাজিলিয়ান শ্রোতাদের দুই দেশের সংগীতের সৌন্দর্যে বিস্মিত করে তোলে।
ব্রাজিলিয়ান দর্শক ফ্রান্সিসকো পন্টেস প্রথমবারের মতো চীনা সংগীত শুনেছেন। তিনি বলেন, "যদিও চীনা সংগীত এবং ব্রাজিলিয়ান সংগীতশৈলী খুব আলাদা, তবে আমি সংগীতের মাধ্যমে সংগীতে প্রফুল্ল, সুরেলা বা মহিমান্বিত আমেজ অনুভব করতে পারি। আমি ভবিষ্যতে চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে চাই।"
টেনোর কায়ো মোরেস, যিনি মসৃণ চীনা ভাষায় "আই লাভ ইউ চায়না" গেয়েছিলেন, তিনি বলেন যে, তিনি কেবল গত বছরের জানুয়ারিতে চীনা গান গাওয়া শুরু করেছেন, পরে তিনি ব্রাজিলে চীনা দূতাবাসের নববর্ষের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। জোয়াও পেসোয়া শহরের চীনা সাংস্কৃতিক উত্সবের সময় তিনি পার্ফম করেছেন। তিনি ৫/৬টি চীনা গান গাইতে পারেন। গান শেখার সময় তিনি চীনা ভাষা শিক্ষা শুরু করার পরিকল্পনা করেন।
এই কনসার্টের আয়োজক, রিও গ্র্যান্ডে ডো নর্তে ফেডারেল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ছি নান সাংবাদিকদের বলেন যে, স্কুলের অর্কেস্ট্রাদল ২০১৩ সালে কিছু চীনা সংগীত বাজানোর চেষ্টা শুরু করে। কিছু চীনা সংগীতজ্ঞ স্কুলে পরিদর্শন ও বিনিময় করেন। এতে অর্কেস্ট্রা দল আরও বেশি চাইনিজ মিউজিক ম্যাটেরিয়ালস সংগ্রহ করতে পেরেছে।রেসিফে চীনা কনসাল জেনারেল ল্যান হেপিং বিশ্বাস করেন যে, এই কনসার্টটি উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে বিশ্ব সভ্যতা উদ্যোগের একটি প্রাণবন্ত প্রকাশ। তিনি বলেন: "আদান-প্রদানের কারণে সভ্যতাগুলি রঙিন, এবং পারস্পরিক শিক্ষার কারণে সভ্যতাগুলি সমৃদ্ধ হয়। সভ্যতার মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষা মানবজাতির অগ্রগতি এবং বিশ্বের শান্তিপূর্ণ বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। আমরা আশা করি যে, সংগীত একটি সাধারণ ভাষা, যার অনুবাদের প্রয়োজন হয় না, আমরা একে অপরের সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারের প্রশংসা করতে পারি, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্ব সভ্যতার বৈচিত্র্য নিয়ে সম্মান অর্জন করতে পারি, বিশ্ব সভ্যতার উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য একসাথে কাজ করতে পারি। এভাবে মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলব।"
প্রত্নতাত্ত্বিক সহযোগিতা চীনা ও মিশরীয় সভ্যতার মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষার জন্য একটি সেতু তৈরি করে
লুক্সর, দক্ষিণ মিশরের প্রাচীন শহর। এটি একটি ঐতিহাসিক শহর যা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার চেতনা ধারণ করে এবং বিশ্ব প্রত্নতত্ত্বের "সীমান্ত" হিসাবে পরিচিত।
লুক্সরের সবচেয়ে বিখ্যাত কার্নাক মন্দির এলাকায়, চীনা ও মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রায় ৬ বছর ধরে খননে সহযোগিতা করেছে। এতে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ধুলোয় সিল থাকা মেন্টু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ধীরে ধীরে তাদের আগের গৌরব ফিরে পেতে থাকে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার গভীরে, প্রত্নতাত্ত্বিক সহযোগিতা চীনা ও মিশরীয় সভ্যতার মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষার জন্য বন্ধুত্বের সেতু তৈরি করেছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর, চীন-মিশরের যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্প লুক্সরের মেন্টু মন্দিরে শুরু হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম কোনো চীনা প্রত্নতাত্ত্বিক দল মিশরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করেছে। এখন পর্যন্ত, প্রকল্পটি ফলপ্রসূ সাফল্য অর্জন করেছে।
চীন-মিশর যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্পের চীনা নির্বাহী দলের নেতা এবং চাইনিজ একাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের ওয়ার্ল্ড আর্কিওলজি রিসার্চ অফিসের পরিচালক জিয়া সিয়াও বিং সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি সাংবাদিকদের বলেছেন যে মেন্টু মন্দির এলাকাটি দুটি খনন এলাকা বিভক্ত। প্রথম খনন এলাকা সমগ্র মেন্টু মন্দির এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে পশ্চিম থেকে পূর্বে পাশাপাশি রয়েছে ৬টি ওসিরিস প্রাসাদ। অন্যান্য প্রাসাদগুলি সম্পর্কে অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রত্নতাত্ত্বিকদের আবিষ্কার করা দরকার। দ্বিতীয় খনন এলাকাটি মেন্টু মন্দির এবং মা'আত মন্দিরের সংযোগস্থলে অবস্থিত, প্রধানত স্থাপত্যের অনুক্রম সমস্যা সমাধান করে।
জিয়া সিয়াও বিং বলেন, পূর্ববর্তী মৌসুমে খননকাজ ১৯ শতকে ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা নথিভুক্ত ভুলগুলিকে সংশোধন করে, এর বিন্যাস ও গঠন স্পষ্টভাবে তুলে ধরে, এরিয়া ১-এ ওসিরিসের তৃতীয় মন্দিরটি সম্পূর্ণরূপে খনন করা হয়। এরিয়া ২-এ, প্রত্নতাত্ত্বিক দল মেন্টু মন্দিরের অ্যানেক্সের মাটির ইটের মেঝেতে অ্যামেনহোটেপ III-এর ছাপ আবিষ্কার করে।
এটি মেন্টু মন্দিরের যুগ এবং এই অঞ্চলের বিবর্তন সম্পর্কে সামগ্রিক অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে নতুন উপাদান সরবরাহ করে, যা কর্নাকের উত্তর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক কাজের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি।
এ বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময়, চীন-মিশর যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক দল মহামারীর পরে মেন্টু মন্দির এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পুনরায় শুরু করে। দুই মাস খননের পর, প্রত্নতাত্ত্বিক দলটি প্রথমবারের মতো তৃতীয় মন্দিরের পশ্চিম দিকে চতুর্থ মন্দিরের সামগ্রিক রূপরেখা সম্পূর্ণরূপে পুনরুত্পাদন করে; যা প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজে একটি নতুন অগ্রগতি।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, চীন ও মিশরের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে দুই দেশ প্রত্নতত্ত্ব খাতে সহযোগিতা শুরু করেছে। ২০১৮ সালে অক্টোবর মাসে, উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত প্রাসঙ্গিক চুক্তি অনুসারে, চীন-মিশর যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মেন্টু মন্দিরটি ১৩৯১ থেকে ১৩৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। জিয়া সিয়াওবিং বলেন, মেন্টু মন্দির এলাকায় যৌথ প্রত্নতত্ত্ব পরিচালনা করার জন্য তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, লুক্সর, প্রাচীনকালে থিবস নামে পরিচিত, মধ্য ও নতুন রাজ্যের সময় প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজধানী ছিল এবং গৌরবময় সময় থেকে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলিকে একত্রিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হল, মেন্টু মন্দিরটি কর্নাক মন্দির কমপ্লেক্সের অংশ, এবং কর্নাক মন্দিরটি নতুন রাজ্যের সময় থিবেসের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল এলাকা ছিল। এটি বলা যেতে পারে যে, এটি "মূল এলাকায়" একটি কোর পাওয়া গেছে।" তৃতীয় কারণ হল দেবতা মেন্টু, যিনি থিবসের পৃষ্ঠপোষক সাধক, তা এখানেই উত্পত্তি হয়েছিল।
জিয়া বলেন যে, এই চীন-মিশর যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকল্পে, চীনা প্রত্নতাত্ত্বিক দল উন্নত প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে এবং মন্দির খননের জন্য একটি পদ্ধতিগত এবং বৈজ্ঞানিক শীর্ষ-স্তরের নকশা তৈরি করেছে।
প্রজেক্টের একজন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক দলের সদস্য আহমেদ তাহির অকপটে বলেন যে, চীনা দলের সদস্যদের সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে তার সন্দেহ ছিল। কিন্তু ক্রমাগত যোগাযোগ করার পরে তিনি বুঝতে পারেন যে, "তারা খুব সুন্দর মানুষ এবং খুব পেশাদারি পদ্ধতিতে কাজ করে।"
হলুদ নদী থেকে নীল নদ পর্যন্ত, প্রত্নতাত্ত্বিকরা সাংস্কৃতিক ভাণ্ডারের রহস্য বের করার জন্য একসাথে কাজ করেছেন, প্রাচীন সভ্যতাগুলি সময় ও স্থান জুড়ে যোগাযোগ করার সুযোগ দিয়েছে এবং চীন-মিশরের বন্ধুত্বে অবদান রেখেছে।
"প্রত্নতত্ত্ব হল একটি জাতি বা অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মূল বিষয় বোঝার সর্বোত্তম উপায়। সভ্যতার মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়িয়ে তুলতে পারে; যার ফলে অনুভূতি আরও গভীর হয়।" জিয়া সিয়াও বিং আন্তরিকতার সঙ্গে বলেন, “আমি আশা করি সহযোগিতা ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের মিশরীয় সহকর্মীরা চীন সম্পর্কে আরও জানতে পারবে।”
(জিনিয়া/তৌহিদ/ফেই)