‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৭৪
2024-06-10 19:27:00

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যালের ছুটি: যেখানে গেলে মন ভালো হবে আপনার

২। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছাপ চীনের প্রতিটা শহরে’

৩। সিচাং ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য নতুন খবর

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৭৪তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।

 

১। ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যালের ছুটি:যেখানে গেলে মন ভালো হবে আপনার

যেকোনো দেশেরই নিজস্ব কিছু উৎসব থাকে। এই উৎসবগুলোর পেছনে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িয়ে থাকে। চীন যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দেশগুলোর একটি, স্বাভাবিকভাবে এই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বছর ধরে অসংখ্য উৎসব-পার্বণ চলতেই থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত সভ্যতাগুলো একটি চৈনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বিখ্যাত হোয়াংহো নদীর তীরে। চীনা সভ্যতার হাজার বছরের ইতিহাসের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময়ে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব উৎসবের জন্ম হয়েছে, ‘ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল’ ঠিক সেরকমই একটি উৎসব।

মহাসমারোহে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল। এই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠেছে চীনবাসী। যেকোন উৎসব মানের ছুটি। আর ছুটি মানেই পছন্দের জায়গাগুলোতে ঘুরতে যাওয়া। এবারের ড্রাগনবোট উৎসবের ছুটিতে প্রতিদিন চীনে প্রবেশ ও বাহির হবে ১৭.৫ লাখ মানুষ।এমনটাই অনুমান প্রকাশ করেছিল চীনের জাতীয় অভিবাসন প্রশাসন সূত্র।  যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২.৫ শতাংশ বেশি হবে।তাইতো ড্রাগন বোট উৎসবে পর্যটন মুখর হয়ে উঠেছে চীনের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্য। 

পশ্চিম বেইজিংয়ের মেনথৌকুও জেলা। যেখানে ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে চারটি থিমে তৈরি করা হয়েছে রুট। সাধারণ মানুষের ড্রাগন উৎসবের ছুটিকে প্রাণবন্ত করে তুলতেই নেওয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ।  যাতে করা তারা লোকজ অভিজ্ঞতা নেওয়ার পাশাপাশি ৫০টিরও বেশি সাংস্কৃতিক ও পর্যটন কার্যক্রমের সাথে পরিচিত হতে পারে। জেলার সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরোর ঘোষণার পরই এমন উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

এই উৎসবের ছুটিতে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারেন এই জেলার পাইহুয়া  পর্বত, যেখানে গেলে মিলবে শান্তি, ঠান্ডা আবহাওয়ায় কিছুটা নির্মল বাতাসের ছোঁয়া। এছাড়া এখানে আছে গ্রীষ্মের নানা ফুলো শোভা। যা মূহর্তের মধ্যেই মন ভালো করে দিবে যে কারোর।

যারা পানিতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন তারা ঘুরে বেড়াতে পারেন শুয়ালংয়ে।  নৌকায় উপভোগ করতে পারেন প্রাকৃতিক দৃশ্য। এছাড়া মিনি ট্রেনে করেও উপভোগ করতে পারেন অনাবিল সৌন্দর্য। 

 

এই জেলার বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের সাথে ক্যাম্পিংও করতে পারেন। যেখানে ক্যাম্প করে নদীতে কিংবা লেকে মাছ ধরা, ড্রাগন বোট রেসের অভিজ্ঞতা নেওয়া ,সাইক্লিং করা এবং এই উৎসবের অন্যতম খাবার চোংজি খেতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন ।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। সাক্ষাৎকার পর্ব- ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছাপ চীনের প্রতিটা শহরে’

দর্শক এই পর্যায়ে শুনবো চীন ঘুরে বেড়ানো একজন বাংলাদেশির কথা । তিনি  চীনের হারবিন ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি তে মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) কোর্সে পড়ালেখা করছেন। তিনি স্বাগত জানাচ্ছি এসএম আল আমিনকে।

·        ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগতম। কেমন আছেন আপনি? –

 আল আমিন- আমাকে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আমি ভালো আছি।

·        আপনি তো বেশ কয়েক বছর ধরে চীনে  আছেন। পড়ালেখা করছেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে।পড়ালেখার পাশাপাশি, নিশ্চয়ই অনেক জায়গায় ঘুরার  সুযোগ হয়েছে । আমরা জানতে চাই আপনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন?

আল আমিন- আমি সিচুয়ান প্রদেশে যখন ব্যাচেলর পড়েছি, তখন সিচুয়ান প্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। এখন আমি শেনচেন শহরে থাকছি। এখানকার বিভিন্ন ট্যুরিস্ট প্লেসে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এছাড়া কুয়াংচৌ শহরে এবং চুহাই সমুদ্রে সৈকতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।

·        এই জায়গাগুলোতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

আল আমিন-  অনেক জায়গায় গেলেও, আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে কুয়াংচৌ শহর থেকে বাসে করে চুহাই সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বেশি ভালো ছিল। পাশাপাশি সমুদ্রের পাশে বসে দেশিয় খাবার খাওয়া এক অন্যরকম অনুভূতি ছিল। এছাড়া এখানে পর্যটকদের জন্য অনেক বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল। সব মিলিয়ে বন্ধুবান্ধব কিংবা এককভাবে চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দূর্দান্ত ছিল।

·        চীন একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, তাদের খাবার ভিন্ন, ভাষাও ভিন্ন কিভাবে এই   দীর্ঘ সময় সেখানে কিভাবে মানিয়ে নিয়েছিলেন? 

আল আমিন- চীন ভিন্ন সংস্কৃতির হলেও তাদের সংস্কৃতি আকৃষ্টময়। খুব সহজেই চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষগুলো আমাদের আপন করে নিয়েছিল। তাই চীনে এসে খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় নাই। তবে খাবারের ক্ষেত্রে শুরুতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও পরে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আর ভাষার ক্ষেত্রে শুরুতে কিছুটা সমস্যার সম্মখীন হয়েছিলাম। ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতাম। এখন ভাষা শিখছি। যোগাযোগ হয়েছে। সামনের হয়তো আরও ভালোভাবে শিখতে পারবো।

·        বাংলাদেশের অনেকেই আছে যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায়,  তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন? 

আল আমিন- চীনে ঘুরে বেড়ানোর জন্য অনেক ট্যুরিস্ট প্লেস আছে। একসাথে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। তাই সময় নিয়ে আসতে হবে। তবে আগে থেকে পরিকল্পনা করে আসতে পারলে বেশি ভালো। এখানকার নিরাপত্তা খুব ভালো। এছাড়া চীনের খাবার নিয়ে কোন সমস্যা নেই। প্রতিটি ট্যুরিস্ট প্লেসেই হালাল খাবারের দোকান আছে।

·         আমাদের অনুষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

আল আমিন- আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ- আফরিন মিম

 

৩। সিচাং ভ্রমণে পর্যটকদের জন্য নতুন খবর

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম ছিংহাই-সিচাং মালভূমিতে বেড়াতে গেলে অনেক দর্শনার্থী হয়ে পড়েন অসুস্থ। কারণ সেখানকার উচ্চতা খানিকটা বেশি। আর সেই সব পর্যটকদের চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবনী এক সমাধান এনেছে বেইজিংয়ের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

বেইজিংয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় হাই-অল্টিটিউড ট্র্যাভেল হেলথ প্রোটেকশন সেমিনার। সেখানে দেখানো হয়েছে এমন এক বহনযোগ্য স্লিপিং ব্যাগ, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেতরকার বায়ুচাপ এবং অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক করতে পারে।

সিনসিং চিহুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইয়ান চিউচিউ বলেন, ‘এটি সামান্য উচ্চচাপের পরিবেশ তৈরি করে, যা ব্যবহারকারীদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। ভেতরে ঢুকলে মনে হবে আপনি নিচু এলাকায় ফিরে এসেছেন।’

চিউচিউ বললেন, এ ধরনের চাপ তৈরির যন্ত্রগুলো শুধু হাসপাতালে পাওয়া যেত এবং সেগুলো সঙ্গে বহন করা যেত না। এ ধরনের বহনযোগ্য ব্যাগ প্রথমবারের মতো তৈরি করলো চীন। এর ওজন মাত্র ১০ কেজি এবং সহজে গাড়ির পেছনে বয়ে নেওয়া যাবে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এই ব্যাগ পরীক্ষা করে দেখেছে। এর মাধ্যমে একজন পর্বতারোহী তার সীমা সম্পর্কেও ধারণা পেতে পারেন।

বোয়ি মেডিকেল টেকনোলজির মহাব্যবস্থাপক ওয়াং বয়ু বলেন, ‘এই ব্যাগের ভেতর চাইলে অক্সিজেনের ঘনত্ব ১১ শতাংশ করা যায়। যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫-৬ কিলোমিটার উঁচুতে ওঠার সমান।’

ওয়াং বলেন, বয়স্ক মানুষদের ক্রনিক রোগের উপশমেও এ প্রযুক্তি কাজে আসবে।  সিচাংয়ের চিকিৎসকরাও আশা করছেন, এই নতুন প্রযুক্তি দ্রুত স্থানীয়দের কাছে পৌঁছে যাবে।

 

প্রতিবেদন- ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী