জুন মাসে চীনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। কর্মজীবনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় নির্বাচন করা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে চীনে বিগত তিন মাসে ৩০.৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মসংস্থান খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে আউটসোর্সিং।
জুন মাসে চীনের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। বলা যায় তরুণ শিক্ষার্থীদের জীবনে এটা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালে চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার। চলতি বছরের পরীক্ষা ৭ জুন থেকে শুরু হয়। কোনো কোনো প্রদেশের ভর্তিপরীক্ষা ২, ৩ বা ৪ দিনব্যাপী চলবে। ভর্তিপরীক্ষাকে সামনে রেখে, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্থানীয় শিক্ষা বিভাগ ও ভর্তিপরীক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার মতো বিষয়ের দিকে নজর রাখছে। এ লক্ষ্যে তারা একাধিক ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক হওয়া মানে ছাত্র থেকে কর্মীতে রূপান্তরিত হওয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। চলতি বছর সারা চীনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন স্নাতক ডিগ্রিধারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখে পৌঁছাবে। উচ্চশিক্ষার জনপ্রিয়তা যেমন বাড়ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে তীব্রতর হচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা।
নতুন স্নাতকদের কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধানে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছর ‘১০০ দিনের স্প্রিন্ট’ প্রোগ্রাম আয়োজন করে। সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় আকারের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। এর ফলে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের কার্যক্রম চলে। এভাবে ৩৭ লাখ স্নাতকের কর্মসংস্থান হয়। এ ধরনের কার্যক্রমের আওতায়, শিক্ষার্থীরা সরাসরি কোম্পানি পরিদর্শন করতে পারে, কোম্পানির চাহিদা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে পারে, এবং নিজেদের জন্য যথাযথ চাকরি খুঁজে নিতে পারে বা অন্তত সে-সুযোগ পায়।
এদিকে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তথা প্রথম তিন মাসে, চীনে ৩০.৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিশ্চয়তা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় কর্মসংস্থানব্যবস্থা আরও সুসংহত করবে, আধুনিক উত্পাদন শিল্পে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কার্যক্রম চালু করবে, ও নতুন দফা বেকারত্ব বীমানীতির গবেষণা দ্রুততর করবে। ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান সমর্থনব্যবস্থা সুসংহত করা হবে; আধুনিক উত্পাদন, আধুনিক সেবা, প্রবীণদের যত্নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী, ব্যাপকভাবে পেশাদারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হবে।
পাশাপাশি, চীনের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে এবং জনগণের আয় বাড়াতে দেশটি ২০২৪ সালে ‘সবার আগে কর্মসংস্থান’ নীতি অনুসরণ করবে বলে জানিয়েছে চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারী, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন – এনডিআরসি। এ বছর, চীন শহরাঞ্চলে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়েছে। এর আগের বছর ছিলো ১ কোটি ২০ লাখের কম। এনডিআরসি-র অধীন কর্মসংস্থান, আয়বণ্টন ও ভোগ বিভাগের উপ-পরিচালক কোও ছিমিন সম্প্রতি চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন সিসিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এটি কর্মসংস্থানের প্রসারে কমিউনিস্ট পার্টি ও সরকারের প্রচেষ্টা, দৃঢ় সংকল্প ও সুস্পষ্ট নীতির প্রতিফলন।
পাশাপাশি, উন্নয়নশীল বিশ্বের মতো চীনের পরিষেবা খাতে আউটসোর্সিং বাড়ছে। বিশেষ করে এ বছরের প্রথম দুই মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধির গতি ছিল স্থিতিশীল। শুক্রবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তথ্যে এমনটা জানানো হয়েছে। চীনের আউটসোর্সিং খাত গত দুই মাসে তৈরি করেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার চাকরি। এর মধ্যে দেড় লাখেরও বেশি চাকরি পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা। গত বছর চীনা সংস্থাগুলো প্রায় ২৬৫ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার) মূল্যের আউটসোর্সিং চুক্তি করেছে। যা এর আগের বছরের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, আউটসোর্সিংয়ের এ প্রবণতা চীনে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ খাত যত উন্নত হবে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরাও তত আকৃষ্ট হবে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর সঙ্গে সম্পাদিত আউটসোর্সিং চুক্তির মূল্য ছিল যথাক্রমে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার ও প্রায় ২০০ কোটি ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৬ ও ২৮ শতাংশ বেশি।