৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এটি চীনের দশম সংবিধিবদ্ধ পরিবেশ দিবসও বটে। চলতি বছর চীনের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হল: ‘সার্বিকভাবে সুন্দর চীন প্রতিষ্ঠার কাজ ত্বরান্বিত করা’। এই প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় এবং সবুজ উত্পাদন ও সবুজ জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে, সাধারণ মানুষকে সুন্দর চীন প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহণে উত্সাহিত করা হয়।
সুন্দর চীন প্রতিষ্ঠা সার্বিকভাবে আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ গড়ার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিকে নেতৃত্ব দিয়ে, সব দিক দিয়ে এবং সকল অঞ্চল ও প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সংরক্ষণব্যবস্থা জোরদার করেছেন; সুন্দর চীন প্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছেন; আকাশ আরও নীল, পাহাড় আরও সবুজ, নদী আরও পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
২০০৫ সালে সি চিন পিং চেচিয়াং প্রাদেশিক পার্টি কমিটির সম্পাদক ছিলেন। তখন তিনি চেচিয়াং প্রদেশের আনচি জেলা পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো ‘সবুজ পাহাড় ও পরিষ্কার নদী হল সোনা ও রূপার পাহাড়’ শীর্ষক ধারণা পেশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা সবুজ পাহাড় ও পরিষ্কার নদী বা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই; একই সঙ্গে সোনা-রূপার পাহাড় তথা অর্থনীতির উন্নয়নও চাই। তবে, আসলে এগুলো একই। পরিবেশের উন্নতি মানে উত্পাদনশক্তি বৃদ্ধি। ভালো প্রতিবেশের রয়েছে অসীম অর্থনৈতিক মূল্য। ভালো প্রতিবেশ সার্বিক স্বার্থ সৃষ্টি করতে পারে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে অনেক অবদান রাখতে পারে।”
এখন ‘সবুজ পাহাড় ও পরিষ্কার নদী হল সোনা ও রূপার পাহাড়’—এই স্লোগানটি চীনা সমাজের সাধারণ স্লোগানে পরিণত হয়েছে। এই ধারণার আলোকে চীনের বিভিন্ন জায়গায় ভালো প্রতিবেশ থেকে অর্থনৈতিক মূল্য অন্বেষণের কাজ চলছে। যেমন, আনচি জেলা, দূষণকারী খনি কোম্পানিগুলো বন্ধ করার পর, সবুজ উন্নয়নের পথে চলছে। এখন আনচি জেলায় বাঁশশিল্প ও সাদা চা শিল্প প্রতিনিধিত্ব শিল্প হিসেবে, পরিবেশবান্ধব কৃষি-মডেলে পরিণত হয়েছে; পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনীতির উন্নয়নের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চমত্কার সমন্বয়মূলক সম্পর্ক।
২০২০ সালে সি চিন পিং দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনচি জেলা পরিদর্শন করেন। তখন তিনি বলেন, “এ অগ্রগতি প্রমাণ করেছে যে, সবুজ উন্নয়ন একটি সঠিক পথ। আমাদের উচিত টেকসই উন্নয়নের পথে অবিচল থাকা। প্রতিবেশ নিজেই এক ধরনের অর্থনীতি, যা রক্ষা করলে সে আপনাকে বিনিময়ে অনেককিছু দেবে।”
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীন বায়ু, পানি ও মাটি দূষণের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে। ২০২০ সালে ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ঘোষণা করেন, চীনে ২০৩০ সালের পর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন শুধু কমতেই থাকবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে চীন কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জন করবে। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য চীনের উচ্চমানের উন্নয়নের অন্যতম শর্ত এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চীনের দেওয়া দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চীন ধারাবাহিকভাবে, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও শিল্পে, কার্বন-নিরপেক্ষতা অর্জনের পরিকল্পনা ও সমর্থনমূলক নীতি গ্রহণ করেছে; শিল্প কাঠামো ও জ্বালানি কাঠামো সুবিন্যস্ত করে চলেছে; নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নকাজ জোরদার করেছে; এবং বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন-বাজার ও পরিষ্কার বিদ্যুতের উত্পাদনব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বর্তমানে সুন্দর চীনসংশ্লিষ্ট মূল লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে এমন: ২০২৩ সাল পর্যন্ত, সবুজ উত্পাদন ও জীবনধারা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে; কার্বন নির্গমন অব্যাহতভাবে কমবে; পরিবেশ মৌলিকভাবে উন্নত হবে; এবং সুন্দর চীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য প্রায় অর্জিত হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চীন, প্রেসিডেন্ট সি চি পিংয়ের নেতৃত্বে, অব্যাহত প্রচেষ্টা জারি রাখবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।
(তুহিনা/আলিম)