‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৭৩
2024-06-04 10:10:08

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১। মিশ্র সংস্কৃতির শহর চীনের থিয়ানচিন

২। পর্যটক আকৃষ্ট করছে ইয়াংচৌ শহরের স্লেন্ডার ওয়েস্ট লেক

৩। প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যের লীলাভূমি উলং

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৭৩তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।

১। মিশ্র সংস্কৃতির শহর চীনের থিয়ানচিন

থিয়ানচিন বেইজিংয়ের কাছে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ও বাণিজ্যিক শহর। চীনের ইতিহাস ও অর্থনীতিতে থিয়ানচিনের গুরুত্ব ব্যাপক।এটি উত্তর চীনের অন্যতম বৃহৎ বন্দরনগরী এবং বেইজিংয়ের সমুদ্রদ্বার।

ইউয়ান রাজবংশের (১২০৬-১৩৬৮) সময় থেকেই সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য থিয়ানচিন গুরুত্ব বহন করছে। চীনের কয়েকটি রাজবংশের সময় এটি রাজধানী ছিল। থিয়ানচিন শব্দের অর্থ হলো ‘সম্রাটের ফেরি’। 

 থিয়ানচিনে অনেকগুলো সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটেছে। এখানে বসতি করেছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসীরাও। উত্তর ও দক্ষিণ চীনের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন যেমন ঘটেছে তেমনি আন্তর্জাতিক নাগরিকদেরও এখানে সাংস্কৃতিক মিলন ঘটেছে এখানে। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরাও বন্ধুভাবাপন্ন।

থিয়ানচিন উত্তরচীনের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ কেন্দ্র। বেইজিং থেকে ইন্টারসিটি লাইট রেল যেমন রয়েছে তেমনি আছে বেইজিং-শাংহাই এক্সপ্রেসওয়ে। পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে এখানে ইউরোপীয় ধাঁচের পুরনো আমলের স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ভবন রয়েছে। রয়েছে বিখ্যাত নাগরিকদের ভবন, শিল্পভবন এবং চার্চ।

থিয়ানচিন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে হাইহ নদী যা বোহাই উপসাগরে গিয়ে পড়েছে। শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর অনন্য দৃশ্য এখানকার অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়। থিয়ানচিনে পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণ হলো ‘কালচারাল এরিয়া’। এখানে রয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী রীতিতে তৈরি নানা রকম সুদৃশ্য ভবন, শিল্পসামগ্রীর দোকান ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

 

এখানে থিানচিনের বিশেষ কিছু খাবারের রেস্টুরেন্টও রয়েছে(হালাল রেস্টুরেন্টসহ)। এই শহরে রয়েছে ‘থিয়ানচিন প্যানকেক’ খুব বিখ্যাত। ‘চিয়ানবিং কুয়োজি’ নামে পরিচিত এই প্যানকেক পুরো থিয়ানচিনে পাওয়া যায়। এমনকি রাস্তার ধারের স্টলগুলোতেও দেদার বিক্রি হয়। এই প্যানকেক ডিম, মাখন, পিঁয়াজকলি, মরিচ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয়। আরেকটি সুস্বাদু স্থানীয় খাবার হলো মাহুয়া। এটি মচমচে ভাজা একধরনের স্ন্যাকস। আরেকটি মজার খাবার হলো চাকাও। এটি তেলে ভাজা মিষ্টি কেক।

 

থিয়ানচিন শহর থেকে একটু দূরে রয়েছে নদীর মোহনায় বন্দর। স্যাটেলাইট সিটি বলা হয় এটিকে। এখানে মোহনায় নদীর তীর ধরে রয়েছে দীর্ঘ হাঁটা পথ যা পর্যটকদের জন্য খুব আকর্ষণীয়। সন্ধ্যায় এখানে জলের নাচসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ফানুস ওড়ানোর খেলাও চলে এই সৈকতে। 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম 

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

২। পর্যটক আকৃষ্ট করছে ইয়াংচৌ শহরের স্লেন্ডার ওয়েস্ট লেক

নৌকায় চড়ে কোন মায়াপুরির পানে চলেছেন এ পর্যটক? নীলচে এ মায়াবি আলোয় হারিয়ে যাওয়ার অনুভূতিটাই বা কেমন?

কোনো সিনেমা বা এনিমেশন নয়, বাস্তবেই মিলবে এমন অভিজ্ঞতা। যেতে হবে পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের ইয়াংচৌ শহরের স্লেন্ডার ওয়েস্ট লেকে। কেননা, সেখানে সম্প্রতি স্থাপন করা হয়েছে “ইমারসিভ এন্ড স্মার্ট ট্যুরিজম”।

আধুনিক সব প্রযুক্তিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রাচীন চীনা ঐতিহ্যের আবহ। পর্যটকরা এখানে নিজেদের নিমজ্জিত করছেন দারুণ সব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মাঝে।

চীনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে এটি এখন প্রচলিত প্রযুক্তি, যাকে বলা হচ্ছে স্মার্ট ট্যুরিজম। এতে দর্শকরা দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি উপলব্ধি করতে পারছে চীনা সংস্কৃতির গভীরতাও।

 

ইয়াংচৌর স্লেন্ডার ওয়েস্ট লেকের নৈসর্গিক পরিবেশে চলছে চীনা ধ্রুপদী নাচের পরিবেশনা। আর এ পরিবেশনাকে কল্পলোকের নাচে পরিণত করছে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রিত নানা ধরনের আলোর কারুকাজ। বিখ্যাত সব চীনা কবিতার থিমে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে অতিপ্রাকৃত অনুভূতিতে ভরপুর রাতের দৃশ্য। পর্যটনে যা যোগ করেছে ভিন্ন এক মাত্রা।

ঘুরতে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘এটি ইয়াংজি নদীর দক্ষিণের অঞ্চলগুলোর একটি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। এখানে রাতের বেলায় হাঁটলে মনে হয় এক রাজসিক প্রাসাদে আছি। চীনা প্রযুক্তি সত্যিই অবাক করার মতো! এখানে এসে আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি সম্পর্কেও অনেক জেনেছি।’

এই প্রকল্পে রয়েছে সাড়ে তিন কিলোমিটার জুড়ে একটি পর্যটন প্যাকেজ। যার মধ্যে রয়েছে লাইট শো, ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা, ফ্লোট প্যারেড এবং একটি জমজমাট রাতের বাজার। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে ছিমছাম সাজানো বাগানের মেলবন্ধনে স্থানটি এখন স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গায় পরিণত হয়েছে।

বেইজিংয়ের শৌকাং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কেও দেখা গেল চীনা সায়েন্স ফিকশনের একটি চমকপ্রদ প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের ধ্বংসাবশেষ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মিশ্রণ ঘটিয়ে দর্শকদের একটি রোমাঞ্চকর মেটাভার্সের অভিজ্ঞতা উপহার দিচ্ছে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও ঐতিহ্যের এমন মেলবন্ধন বিশ্বে খুব একটা নেই বললেই চলে। তাই চীনের পর্যটনে নতুন এক সম্ভাবনার নাম ‘ইমারসিভ এন্ড স্মার্ট ট্যুরিজম’।

প্রতিবেদন- হোসনে মোবারক সৌরভ

সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

৩। প্রাকৃতিক  সৌন্দর্যের লীলাভূমি উলং

ছোংছিংয়ের প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত উলং জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ। এক সময়ের দারিদ্র্য পীড়িত পাহাড়ি এ অঞ্চলটিতে গত তিন দশকে পর্যটন শিল্পের বিকাশের ফলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এসেছে।

অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য চীনসহ বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে এই স্থানটি। জেলা কর্তৃপক্ষ আরও অধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক পর্যটক আকর্ষণ করতে এবং পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করতে নানা ধরনের পদক্ষেপও গ্রহণ করছে।

জেলার পার্টি প্রধান হ্য ছিং জানান, গত ৩০ বছর ধরে উলংয়ের প্রধান শিল্পই হলো পর্যটন। ২০৩৫ সালের মধ্যে উলং বিশ্বখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বিশ্বমানের পর্যটন আকর্ষণের মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি পর্যটন পণ্য, বিপণন, সুবিধা ও সেবার আন্তর্জাতিক পর্যায় উন্নত করার কথাও জানান তিনি।

২০০৭ সালে উলংয়ের কারস্ট ভূমিরূপ এবং থ্রি ন্যাচারাল ব্রিজেস, গর্জে ভ্যালি, ফুরং গুহা এবং সিয়ানইউ পর্বতসহ বেশ কয়েকটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্রকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।

দীর্ঘ সময় পর্যন্ত চীনের এই অঞ্চলটি কৃষি জমির অপ্রতুলতা এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে জাতীয় দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলের তালিকাভুক্ত ছিল। কারস্ট টপোগ্রাফির কারণে এখানকার মাটি পাথুরে এবং স্বল্প উর্বর। পাশাপাশি কম পানি ধারণ করতে সক্ষম।

১৯৯৩ সালে কয়েকজন গ্রামবাসী অত্যাশ্চর্যজনক ভূতাত্ত্বিক গঠনের সমাহারের জন্য বিখ্যাত ফুরং গুহা আবিষ্কার করেন। এরপর থেকেই মূলত পর্যটন শিল্প বিকশিত হতে শুরু করে।

১৯৯৪ সাল থেকে পর্যটন স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে এবং উলংকে টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি মডেলে পরিণত করেছে। জেলার পর্যটন শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, এবং ২০০০ সালের শেষ নাগাদ, উলং চীনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটিতে পরিণত হয়।

প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার

সম্পাদনা- আফরিন মিম

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী