জুন ৪: সারা বিশ্বে সাধারণ উদ্বেগের বিষয় নিরাপদ উত্পাদন। ১৯৮০ সাল থেকে, জাতীয় ‘নিরাপদ উত্পাদন মাস’ পালিত হয়ে আসছে চীনে। চীনের বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশও নিরাপদ উত্পাদন বিষয়ে চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখছে ও উপকৃত হচ্ছে।
“বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, এখানে বিদ্যমান নিরাপদ উত্পাদন সমস্যা উপেক্ষা করা যাবে না। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে, বাংলাদেশে অনেক তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেগুলোর অনেকের উত্পাদনব্যবস্থা নিরাপদ নয়, বরং উদ্বেগজনক। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে, ঢাকার একটি পোষাক কারখানার অগ্নি দুর্ঘটনায় অন্তত ১১২ জন শ্রমিক মারা যান। এ ছাড়া, অগ্নিকাণ্ডে ও আবাসিক ভবন ধসে পড়ার ঘটনাও বাংলাদেশে মাঝেমধ্যে ঘটে। এ সব ঘটনা বাংলাদেশের বিশাল ক্ষতি করছে।”
এ চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ সরকার উত্পাদন নিরাপত্তার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথও খুঁজে বের করেছে। এর মধ্যে চীনের সাথে সহযোগিতার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। চীনও নিরাপদ উত্পাদনের আধুনিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের সাথে শেয়ার করছে। চীন, বিশেষ করে, জরুরি ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণব্যবস্থা গড়ে তোলায় বাংলাদেশকে জরুরি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা। চীনের পেশাদার উদ্ধারকারী দলগুলো বাংলাদেশে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনাপরবর্তী উদ্ধারকাজেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্য দিয়ে নিরাপদ উত্পাদন ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশ গভীর বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়টি ফুটে ওঠে।
“বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণকাজে চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতা ফলপ্রসূ। বাংলাদেশের ‘লাইটনিং নিউজ’ ওয়েবসাইটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণকাজের অগ্রগতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ অবদান রেখেছে চীন। চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন গ্রুপের নির্দেশনায়, বাংলাদেশে পদ্মাসেতু রেলওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি নিরাপদ উত্পাদনের একটি উত্কৃষ্ট উদাহরণ। পদ্মাসেতু প্রকল্পের উচ্চ গুণগত মানের নির্মাণকাজ সুনিশ্চিত করতে, অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এতে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন চীনা ব্যবস্থাপকদের সাহায্যে, স্থানীয় বাঙালি সহকর্মীদের পেশাগত যোগ্যতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে, তাদের নিরাপদ উত্পাদনের চেতনাও উন্নত হয়েছে। আরেকটি সফল উদাহরণ হচ্ছে দাশের গান্ধী বর্জ্য-পানি পরিশোধনকেন্দ্র প্রকল্প। চায়না পাওয়ার কনস্ট্রাকশন গ্রুপ ছেংতু জরিপ, ডিজাইন ও গবেষণা ইনস্টিটিউট লিমিটেড এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেছে। বাংলাদেশে হাজার হাজার চীনা ও বাঙালি কর্মী যৌথভাবে এই প্রকল্পের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা সর্বদা নিরাপদ উত্পাদনকে প্রথমে রাখেন, কঠোরভাবে নিরাপত্তার বিধি-বিধান মেনে চলেন। প্রতিটি চীনা বসন্ত উত্সবে, দাশের গান্ধী পরিশোধন প্ল্যান্ট প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী চীনা ও বাঙালি কর্মীরা শুভেচ্ছা-ভিডিও বিনিময় করেন। এ হচ্ছে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সেরা উদাহরণ।”
ভবিষ্যতেও নিরাপদ উত্পাদন ক্ষেত্রে চীন-বাংলাদেশ বিনিময় ও সহযোগিতা গভীরতর হবে। এতে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান, এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যৌথভাবে বাংলাদেশের নিরাপদ উত্পাদনের মান উন্নয়ন করতে সাহায্য করে যাবে চীন। এটি দু’দেশের জনগণের সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবন এবং অবিরাম উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখবে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)