আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ও চীন
2024-06-01 19:32:24

পয়লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। আন্তর্জাতিক শিশু দিবস শুরু হয় ১৯৪৯ সালে। তবে তার আগেও চীনে শিশু দিবস পালন করা হতো। এ দিবসে চীনের স্কুলসহ নানা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা চীনের শিশু দিবস এবং তার ঐতিহ্য এবং বিশ্বের নানা দেশের শিশু দিবসের কিছু তথ্য জানাচ্ছি।

এটি আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হলেও বিশ্বের সব দেশ এদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন করে না। বর্তমানে চীনে পয়লা জুন এ দিবস পালন করে। এ দিবসে চীনে নানা রকম আয়োজন করা হয়। স্কুলগুলোতে বিশেষ প্রতিযোগিতা ও মজার খেলা আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন প্রদেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশুরা তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। মেলা, প্রদর্শনী, ছবি আঁকা, পর্যটন স্থান ও থিম পার্কে শিশুদের প্রবেশ ফ্রি এমন অনেক আয়োজন করা হয় চীন জুড়ে।

১৯৪৯ সালের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মহিলা ফেডারেশনের মস্কোয় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত শিশুদের স্মরণ, শিশু নির্যাতন রোধ এবং শিশুর জীবিকা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার রক্ষায় প্রতি বছর  ১লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তবে তার আগেও চীনে শিশু দিবস ছিল। চীনের ঐতিহ্যিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, প্রথম মাসের সপ্তম দিন, তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিন,তুয়ানউ উত্সব, মধ্য-শরত্ উত্সব এবং বসন্ত উত্সবও শিশুদের দিবস বটে। চীনা জাতি সভ্যতা ও নিয়ম-নীতির ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়। তবে উল্লেখিত ওই দিবসগুলোতে শিশুরা অবাধে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে খেলতে পারে বলে প্রাচীনকালে এ ৫টি দিনকে শিশুদের দিবস বলে বিবেচনা করা হতো।

 

 

১৯৩১ সাল থেকে চীন ৪ঠা এপ্রিলকে শিশু দিবস হিসেবে পালন শুরু করে। সে সময় চীনে চলছিল জাপান-বিরোধী যুদ্ধ। কোন কোন জায়গায় চীনা শিশুরাও এ প্রতিরোধে যোগ দেয়। ৪ঠা এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় জাপান-বিরোধী শিশু গ্রুপ এবং ওই দিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের সঙ্গে মিল রেখে এর তারিখ পয়লা জুনে পরিবর্তন করা হয়। তবে আজকাল চীনের হংকং ও তাইওয়ান অঞ্চলে ৪ঠা এপ্রিলও শিশু দিবস পালিত হয়।

চীন একটি বহু জাতির দেশ এবং দেশে ৫৬টি জাতিগোষ্ঠী আছে। তাই কোন কোন সংখ্যালঘু জাতির নিজস্ব শিশু দিবস আছে। যেমন, ই জাতির বৈশিষ্ট্যময় শিশু দিবসকে বলা হয় ‘আইমেংক্য’ । তবে শিশু দিবসের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই তাদের। প্রতিটি গ্রাম বসন্তের যে কোন একদিন শিশু দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কখনও তারা এক বছরে দু’বার শিশু দিবস পালন করে। এদিন শিশুরা নিজেদের প্রিয় পোশাক পরে। ছেলেরা একটি কাঠের ছুরি হাতে রাখে, আর মেয়েরা বাঁশের বর্ষা নিয়ে কাকতাড়ুয়াকে গ্রামের বাইরে তাড়িয়ে দেয়। এ অনুষ্ঠানের পরে শিশুরা বিশেষ এক খাবার খায় এবং দানব সরানো সফলভাবে উদযাপন করে।

এর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়। যেমন, সিঙ্গাপুরের শিশু দিবস হল পয়লা অক্টোবর। মে মাসের ৫ তারিখ দক্ষিণ কোরিয়ার শিশু দিবস। এদিন দেশের মোবাইলফোন কোম্পানির প্রচারের দিন। ব্রিটেনের শিশু দিবস ১৪ জুলাই। এদিন স্কুলের আয়োজনে শিশুরা ও বাবা মায়েরা কুকি ও নানা হস্তশিল্প তৈরি করে। পরে নিলাম অনুষ্ঠানে খাবার ও হস্তশিল্প বিক্রি করে দরিদ্র অঞ্চলে অনুদান দেয়া হয়। ভারতে ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস পালিত হয়। এদিন স্বধীনত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। জাপানে যথাক্রমে মেয়ে দিবস ও ছেলে দিবস পালিত হয়। ৩ মার্চ ও ৫ মে মেয়ে ও ছেলে দিবস।

তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় শিশু দিবস পালন করা হলেও, সব শিশু দিবসের আহ্বান মূলত এক। তা হলো বিশ্বে শিশুদের জন্য বৈষম্যহীন ও উন্নতমানের বেড়ে ওঠার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা।