৬ বছরে ৯ হাজারের বেশি হাসিমুখের ছবি তুলেছেন ৬১ বছর বয়সী দাতব্য ফটোগ্রাফার
2024-05-30 14:54:27

নিষ্পাপ শিশু, অল্পবয়সী ছাত্র, সদয় বৃদ্ধ, সাধারণ শ্রমিক নিয়ে তোলা প্রতিটি ছবি যেন জীবনপূর্ণ, এবং প্রতিটি হাসিমুখ একটি চলমান গল্প বলে। এই সব ছবি তুলেছেন ফেং শুয়াং নামের একজন দাতব্য ফটোগ্রাফার।

ফেং শুয়াংয়ের বয়স ৬১ বছর। তিনি ২০১৮ সাল থেকে দাতব্যের কাজ শুরু করেন। গত ৬ বছরে তিনি পাহাড় ও নদনদী অতিক্রম করে গ্রাম থেকে গ্রামে ৯ হাজারটিও বেশি হাসি মুখের ছবি তুলেছেন। এ ৯ হাজার ছবিতে ফুটে উঠেছে ৯ হাজারটি সুখী মুহুর্ত। অনেক গ্রামীণ প্রবীণ ও শিশুর জীবনের প্রথম ছবি তার হাতে তোলা।

ফেং শুয়াংয়ের সঙ্গে আমাদের সাংবাদিকের দেখা হয়েছে ছোং ছিং অঞ্চলের বেই পেই অঞ্চলের ওয়েন ফেং গ্রামবাসী চৌ কুও মিনের বাড়াতে। ফেং শুয়াং, চৌ কুও মিন দম্পতির ছবি তুলতে যান। ৭৮ বছর বয়সী চৌ কুও মিন সেরিব্রাল ইনফার্কশনের কারণে অনেক বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং তার স্ত্রী তোং ছি পিং তার যত্ন নেন। তবে এতো বছরে তারা কখনো একসঙ্গে ছবি তোলেননি। চৌ কুও মিন এবং তার স্ত্রীর একটি ছবি তোলার পর, ফেং শুয়াং তার ফটোগ্রাফি যাত্রা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তার নানা একজন ফটোগ্রাফি উত্সাহী ছিলেন, এবং তার চাচা একজন ফটোগ্রাফার ছিলেন, যিনি ইয়াংজি নদীর তিন গিরিখাতের ছবি তুলেছেন। তাই তিনি ছোটবেলা থেকেই ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী ছিলেন।

২০১৮ সালে, ফেং শুয়াং অবসর গ্রহণের পরে বাড়িতে অলস ছিলেন। একটি আকস্মিক ঘটনা দাতব্য ফটোগ্রাফির প্রতি তার আগ্রহ তৈরি করে।

এ ছাড়াও ২০১৮ সাল থেকেই ফেং শুয়াং বহু বছর ধরে যে ক্যামেরাটি ব্যবহার করছিলেন, তা পুনরায় হাতে নিয়ে দাতব্য সংস্থার সঙ্গে গ্রামবাসীদের জন্য বিনামূল্যে ছবি তোলার জন্য পাহাড়ী অঞ্চলে যান। তারা বিনামূল্যে গ্রামবাসীদের ছবি তোলেন এবং সেগুলো সাইটে প্রিন্ট করে তাদের উপহার দেন।  কিছু কিছু ছবি তিনি ফেরার পর ফ্রেম-বাঁধাই করে তাদের পাঠান। তিনি যেখানেই যেতেন, স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের ফটোগ্রাফির চাহিদা সম্পর্কে জেনে নিতেন এবং তাদের পিছনের গল্পগুলো শুনতেন ফেং শুয়াং।

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে, ফেং শুয়াং ছোং ছিং শহরের মাফেং গ্রামে গ্রামবাসী নিং শেং মিনের সাথে দেখা করেছিলেন।

কথোপকথনের সময় ফেং শুয়াং জানতে পেরেছিলেন, ২০ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনার কারণে নিং শেং মিনের বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিং শেং মিন সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করে এক পায়ে ক্ষেতে চাষাবাদের মাধ্যমে তার ছয়জনের পরিবারের ভরণ-পোষণ করেন।

 

জীবন কঠিন হলেও তিনি মুক্তমনা এবং আশাবাদী ছিলেন। ফেং শুয়াং, নিং শেং মিনের গল্পে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং তাঁর যাপিত জীবনের অনেক ছবি তুলেছিলেন, যা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। যেহেতু নিং শেং মিনের আছে বাঁশ বুননের দক্ষতা, স্থানীয় সরকারও তাকে অনলাইনে বাঁশ বুননের পণ্য বিক্রি করতে সাহায্য করেছে এবং বিক্রিও খুব ভালো ছিল।

ছবি তোলা শুধু শখ নয়, এটার মধ্য দিয়ে অন্যকেও সাহায্য করা যায়, এটা কী আনন্দের। ফেং শুয়াং যেমন বলেছেন, ক্যামেরা ব্যবহার করে অন্যদের রেকর্ড করার সময় তিনি নিজেও লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে ফেং শুয়াং গত ছয় বছরে তার তোলা ছবিগুলো সংগ্রহ ও বাছাই করছেন। বছরের শেষে একটি দাতব্য ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। দাতব্য ফটোগ্রাফি সম্পর্কে তিনি  বলেন, যতদিন তিনি ক্যামেরা ধরতে পারবেন, ততদিন পর্যন্ত তিনি এ কাজ করে যাবেন।