মে ৩০: চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল (বুধবার) বেইজিংয়ে আয়োজিত চীন-আরব সহযোগিতা ফোরামের দশম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদেশী অতিথিদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে দেখা করেন।
লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে ওয়াং ই বলেন, চীন সবসময় লিবিয়ার স্থিতিশীল উন্নয়ন-প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে আসছে। পাশাপাশি, দেশটির সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষার পক্ষেও বেইজিংয়ের অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট। লিবিয়ার সাথে হাতে হাত রেখে, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা আরও সুসংহত করতে, বিনিময় বাড়াতে, এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে কাজ করে যাবে চীন।
লিবীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জবাবে বলেন, চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর তাঁর দেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। লিবিয়া দৃঢ়ভাবে ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলে। ফিলিস্তিন সমস্যার দ্রুত সমাধানে চীন আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদও ব্যক্ত করেন।
ইরাকের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ওয়াং ই বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষায় ইরাককে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চীন। পাশাপাশি, দেশটির অর্থনীতির উন্নয়ন ও মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতির প্রয়াস এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশটির লড়াইয়ে ইরাকি সরকারকে সমর্থন করে চীন। ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কোনো শক্তির হস্তক্ষেপেরও বিরোধী চীন। দুই পক্ষের উচিত সক্রিয়ভাবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর সাথে ইরাকের ‘উন্নয়ন পথ’ শীর্ষক পরিকল্পনাকে সংযুক্ত করা এবং অর্থনীতি, বাণিজ্য, জ্বালানি ও পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়া।
জবাবে ইরাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন তাঁর দেশের সরকারের কূটনৈতিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিজের মূল স্বার্থ রক্ষায় চীনকে সবসময় দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে ইরাকি সরকার। তা ছাড়া, ইরাক সক্রিয়ভাবে চীন-আরব সহযোগিতা ফোরামের প্রতিষ্ঠাকাজে অংশগ্রহণ করেছে এবং অব্যাহতভাবে আরব-চীন সার্বিক সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।
আরব লীগের মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতে ওয়াং ই বলেন, চীন আরব দেশগুলোর সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। চীন ও আরব দেশগুলোর শীর্ষনেতৃবৃন্দের গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য কাজে লাগিয়ে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রস্তাব ও ‘আরব সম্ভাবনা ২০৪৫’-এর সংযুক্তির কাজ জোরদার করতেও চায় বেইজিং। আর এর লক্ষ্য বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা এবং আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা।
জবাবে আরব লীগের মহাসচিব বলেন, চীনের সাথে যৌথ প্রচেষ্টায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, প্রথম চীন-আরব শীর্ষসম্মেলনের সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করতে আরব লীগ ইচ্ছুক।
মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে ওয়াং ই বলেন, নিজস্ব জাতীয় অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি উন্নয়ন-পথে চলতে মৌরিতানিয়াকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চীন। পাশাপাশি, মৌরিতানিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতাও করে বেইজিং। মৌরিতানিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে যথাসাধ্য সহায়তা দিতে এবং দেশটির সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় বজায় রেখে, চীন-আরব সার্বিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে চায় চীন।
জবাবে মৌরিতানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ দৃঢ়ভাবে ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলবে; আরব-চীন ও আফ্রিকা-চীন সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবে। আর এর উদ্দেশ্য, মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলা।
আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে ওয়াং ই বলেন, চীন ও আলজেরিয়া পরস্পরের আন্তরিক বন্ধু ও অংশীদার। নিজের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে আলজেরিয়াকে সমর্থন করে চীন এবং আলজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে। আলজেরিয়ার সাথে আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় চীন একযোগে কাজ করে যেতে ইচ্ছুক।
জবাবে আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ ‘এক-চীন নীতি’ মেনে চলে। দু’দেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আলজেরিয়া ইচ্ছুক। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)