চীনের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ঐতিহাসিক সাফল্য
2024-05-30 16:44:44

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিসি’র ১৮তম জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে, কমরেড সি চিনপিংকে কেন্দ্রে রেখে সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যটনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে, যা দেশের পর্যটন শিল্পের দ্রুত উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়েছে এবং ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে।

জনগণের জন্য পর্যটনের প্রচার থেকে শুরু করে এ শিল্পকে চালিকা শক্তি হিসেবে বাস্তবায়ন করা পর্যন্ত পর্যটন ক্রমাগত জনগণকে সেবা ও আনন্দ দান এবং কল্যাণসাধনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সাথে ক্রমবর্ধমান একটি সুখময় শিল্পে পরিণত হচ্ছে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের মে দিবসের ছুটিতে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের মোট সংখ্যা ২৯৫ মিলিয়ন পার্সন টাইমস, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; দেশীয় পর্যটকদের মোট ভ্রমণ ব্যয় ছিল ১৬৬.৮৯ বিলিয়ন ইউয়ান আরএমবি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.৭ শতাংশ বেড়েছে।

চীনে হলিডে ট্যুরিজম খুব জনপ্রিয় হয়েছে। অবকাশ যাপনের স্থানগুলোতে মানুষের ভিড় এবং তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ করে যে, পর্যটন একটি সচ্ছল সমাজের মানুষের উন্নত জীবন-যাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

জনগণের নতুন প্রত্যাশার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চীন উচ্চমানের পর্যটন পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। দর্শনীয় স্থানের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, ভ্রমণের ধাঁচ আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে এবং বাজারের আকারও বেড়েছে, যা পর্যটন শিল্পের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে ১৫ হাজার ৭০০টি এ স্তরের পর্যটন স্থান নির্মিত হয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে ৩৩৯টি ফাইভ এ-স্তর আছে। দর্শনীয় স্থানের ধরন ধীরে ধীরে ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ এবং সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ থেকে গ্রামীণ, বরফ ও তুষার এবং থিমযুক্ত পার্ক ইত্যাদিতে প্রসারিত হয়েছে। পর্যটকদের বহু-স্তরীয় এবং ত্রি-মাত্রিক চাহিদা মেটাতে পণ্য ব্যবস্থা আরও সম্পূর্ণ হয়েছে।

পর্যটনের প্রতি মানুষের উৎসাহ উদ্দীপিত করার জন্য, প্রাসঙ্গিক বিভাগগুলো পর্যটন প্রচারকে জোরদার করেছে, ভোগ-প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, ‘চীন পর্যটন দিবস’সহ নানা কার্যক্রমের আয়োজন করেছে। ভোগ-প্রচার এবং মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পর্যটন জনসাধারণের পরিষেবার স্তর উন্নত করার জন্য চীন ৩৫০০টিরও বেশি পর্যটন পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি করেছে, দেড় লাখ ট্যুরিস্ট টয়লেট নতুন করে তৈরি, সংস্কার ও সম্প্রসারণ করেছে, পর্যটন সুবিধার ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ করে তুলেছে এবং উন্নত স্মার্ট ট্যুরিজম ও সভ্য পর্যটনের পরামর্শ দিয়েছে, ফলে জনসাধারণের ভ্রমণ আরও সুবিধাজনক হয়েছে।

চলতি বছর থেকে হারবিন শহর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বসন্ত উত্সবের ছুটির সময় সেখানে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা ১০.০৯ মিলিয়ন পার্সন-টাইমস এবং পর্যটনের মোট আয় ১৬.৪ বিলিয়ন আরএমবি হয়েছে।

চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় পর্যটনের শক্তিশালী চালিকা শক্তি প্রদর্শন করে। পর্যটন শিল্প ক্রমশই একটি উদীয়মান কৌশলগত মূল শিল্পে পরিণত হয়েছে।

গ্রামীণ এলাকায় পর্যটন গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনকে শক্তিশালী করে এবং গ্রামীণ অবকাঠামো, গণপরিবহন, শহুরে ও গ্রামীণ পরিবেশের উন্নতি এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়েছে। অধিক থেকে অধিকতর গ্রাম পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা করেছে এবং পুনরুজ্জীবনের দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

জেলায় পর্যটন বাজার সাংস্কৃতিক পর্যটন ভোগের নতুন গতি প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন জেলায় জাতীয় এ-স্তরের দর্শনীয় স্থানের  অনুপাত ২০১২ সালের ৭৩ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালের ৯৩ শতাংশে বৃদ্ধি পায়। দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটন উন্নয়ন এবং জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে থাকে।

শহরে অবসর পর্যটন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, ৩৪৫টি জাতীয়-স্তরের রাতের সংস্কৃতি এবং পর্যটন খরচ ক্লাস্টারগুলো স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী বৈশিষ্ট্যময় রাতের পর্যটন সংক্রান্ত পণ্যগুলো প্রদান করেছে এবং রাতের সংস্কৃতি ও পর্যটন খরচ এ শিল্পে নতুন প্রাণশক্তি যুগিয়েছে।

দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটনের বয়ে আনা কর্মসংস্থানও বেড়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে সারা দেশের এ-শ্রেণীর দর্শনীয় স্থান সরাসরি ১.৬ মিলিয়নেরও বেশি লোককে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে এবং সব মিলিয়ে পর্যটন খাতে কর্মসংস্থানের মোট সংখ্যা ১০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

২০২৩ সালে সারা দেশের জাদুঘরে পর্যটকদের সংখ্যা ১২৯ কোটি পার্সন-টাইমস এবং এই সংখ্যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনগণ ভ্রমণের সাংস্কৃতিক উপাদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন। সংস্কৃতি এবং পর্যটনের সমন্বয় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

১৫ মে থেকে বিদেশী পর্যটন গোষ্ঠীগুলো ক্রুজ দিয়ে ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে চীনে প্রবেশ করতে পারেন।

এন্ট্রি ট্যুরিজম হলো যে কোনো এক দেশের সংস্কৃতির নরম শক্তি, আন্তর্জাতিক আকর্ষণ এবং পর্যটন প্রতিযোগিতার প্রত্যক্ষ প্রকাশ। ভ্রমণের জানালা দিয়ে, চীন বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করে থাকে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করে আসছে, চীন-রাশিয়া, চীন-যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন-ফ্রান্স পর্যটন বর্ষসহ নানা কার্যক্রমের আয়োজন করে আসছে। বর্তমানে বিদেশে মোট ৪৮টি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ২০টি পর্যটন কার্যালয় এবং হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ানে মোট ৩টি পর্যটন অফিস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যটন জোটসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, ‘হ্যালো! চায়না’ জাতীয় পর্যটন চিত্রের প্রচার করেছে এবং দেশি-বিদেশী সভ্যতার বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

সমস্ত দিক থেকে পর্যটন পরিবেশকে অনুকূল করার জন্য চীন দেশি-বিদেশী পর্যটকদের প্রবেশ পর্যটনের পুরো প্রক্রিয়াটি সাজিয়েছে এবং একের পর এক বাধা দূর করেছে।

এখন চীনে আপনার মোবাইল ফোন দিয়ে প্রায় সবকিছু’র দাম পরিশোধ করতে পারেন: পরিবহন, পোশাক, খাবার, চিকিত্সাসেবা, বিনোদন, শেয়ারিং বাইসাইকেল। আগে, চীনের মোবাইল পেমেন্ট পরিষেবাগুলো চীনের বাইরের ব্যাংক কার্ডগুলোর সাথে সংযুক্ত ছিল না, যা বিদেশীদের কিছু সময়ের জন্য ট্রানজিট বা চীনে অবস্থানকালে অসুবিধাজনক ছিল। ‘বিদেশী কার্ড বাইন্ডিং’ পরিষেবা চালু হবার সাথে সাথে, স্থানীয়দের মতো মোবাইলে অর্থ ব্যয় করার সুযোগ পাচ্ছেন এখন বিদেশীরাও। বিষয়টা তাদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় ব্যাপার।

চীন ১৫০টিরও বেশি দেশের সাথে পারস্পরিক ভিসা ছাড় চুক্তি করেছে। আজকাল ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশীরা ভ্রমণ, পড়াশোনা, বসবাস এবং কাজ করতে চীনে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সংশ্লিষ্ট চীনা কর্তৃপক্ষ পেমেন্ট পরিষেবার স্তরকে আরও উন্নত করতে এবং চীনে বিদেশীদের বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন পরিষেবার চাহিদা আরও ভালোভাবে মেটাতে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে গাইড করার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা চালু করেছে। এ ছাড়া, পিপলস ব্যাংক অফ চায়না- চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায়, প্রধান চীনা মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপগুলো বিদেশীদের জন্য প্রতিটি লেনদেনের সীমা আগের ১০০০ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০০০ মার্কিন ডলার করেছে এবং বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ এখন ৫০ হাজার মার্কিন ডলার হয়েছে, যা আগে ছিল দশ হাজার মার্কিন ডলার। একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার, নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া আরও সুবিধাজনক হয়েছে; আরও অধিকসংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদেশী ব্যাংক কার্ডগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে, এবং আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আউটলেট স্থাপিত হয়েছে। সবমিলিয়ে চীনে আরও সুবিধাজনক, উচ্চমানের, এবং দক্ষ পেমেন্ট পরিবেশ গড়ে উঠছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, চীনের পেমেন্ট পরিষেবাগুলো আবার আপগ্রেড করা হয়েছে, এবং প্রশংসিত হয়েছে। অনেক বিদেশী বন্ধুর মতে, চীনে মোবাইল ফোন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, এবং এখানে মোবাইলে অর্থ পরিশোধের ব্যাপারটি খুবই মসৃণ ও সহজ। এ পদ্ধতি চীনে তাদের জীবন ও কাজকে আরও সুবিধাজনক করে তুলেছে। চীন বিশ্বের কাছে তার উন্মুক্ততার নিদর্শন দেখিয়েছে।

চীনে আসা বিদেশীদের জন্য অর্থ ব্যয়ের সুবিধার উন্নতি করা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। একদিকে, এটি চীনে কাজ করতে, অধ্যয়ন করতে, ভ্রমণ করতে এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য আরও বেশি বিদেশীকে আকৃষ্ট করছে এবং এইভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ২০২৩ সালে চীনে আসা লাখ লাখ বিদেশী মোবাইল পেমেন্ট ব্যবহার করে। শুধুমাত্র ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে, বিদেশীরা চীনে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মোবাইল পেমেন্ট লেনদেন করেছে, যার পরিমাণ ৫ বিলিয়ন ইউয়ান; অন্যদিকে, সুবিধাজনক এবং দক্ষ অর্থপ্রদানের পরিষেবার মাধ্যমে বিদেশিরা বহির্বিশ্বে উচ্চস্তরের উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণের জন্য চীনের আন্তরিকতা অনুভব করতে পারে, চীন-বিদেশী বিনিময়কে আরও উন্নত করতে পারে এবং বন্ধুত্বের সেতু তৈরি করতে পারে।

বর্তমান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কার্যক্রমের সাথে আরও খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এবং দক্ষ ও দ্রুত বিনিময়কে সম্ভব করতে, চীনা সরকার বিদেশীদের প্রবেশ, প্রস্থান, থাকার এবং বসবাসের জন্য আরও ভালো পরিবেশ গড়ে তুলতে কাজ করছে। মানুষের জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন খাদ্য, আবাসন, পরিবহন, ভ্রমণ, বিনোদন এবং চিকিত্সাসেবার পরিবেশ উন্নত করতে চীনা সরকার একে একে ব্যবস্থাদি গ্রহণ করছে; আন্তর্জাতিক পরিষেবার স্তরের উন্নতি অব্যাহত রেখেছে এবং সক্রিয়ভাবে জনগণের মসৃণ ও সুবিধাজনক আন্তঃসীমান্ত চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করছে। এটি কেবল কার্যকরভাবে আন্তঃসীমান্ত পর্যটন বাজারকে চাঙ্গা করছে, তা নয়, বরং চীনের দরজা যে বিদেশীদের জন্য ক্রমশ  প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হচ্ছে—তার প্রমাণ দিচ্ছে।

প্রবেশ পর্যটন ছাড়া, প্রস্থান পর্যটনও স্বাস্থ্যকর বিকাশ করছে। চীন আন্তর্জাতিক পর্যটনের বৃহত্তম উত্স। ১৪৪টি দেশ ও অঞ্চল চীনা নাগরিকদের গোষ্ঠী বহিরাগত পর্যটন হয়ে উঠেছে। অধিক থেকে অধিকতর চীনা নাগরিক চীনা সভ্যতার দূত হয়ে ওঠেন এবং সুন্দর চীনা গল্প তুলে ধরছেন।

সংস্কৃতি হলো পর্যটনের আত্মা এবং পর্যটন হলো সংস্কৃতির বাহক।

একটি শক্তিশালী পর্যটন দেশ গঠনের পথে, চীন পর্যটন বিশ্বকে অনন্য আকর্ষণ দেখাচ্ছে এবং একটি সুন্দর ছবি চিত্রিত করছে।

লিলি/হাশিম