১ অসহায় মানুষের পাশে ‘মা ছাং’
২ সহপাঠীর জীবন বাঁচালো কিশোরী
৩ হানফু ডিজাইনে সফল হয়েছেন তরুণী লিউ
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
অসহায় মানুষের পাশে ‘মা ছাং’
শহরের বড় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামের শিশু রোগী এবং তাদের অভিভাবকরা অনেক সময় থাকার জায়গা নিয়ে সংকটে পড়ে যান। এই সংকট থেকে তাদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন একজন দয়ালু নারী। তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন যেখানে শহরের বাইরে থেকে আসা শিশু রোগী তার বাবা মা বা অভিভাবকরা বিনামূল্যে থাকতে পারেন।
শানসি প্রদেশের সি’আন শহর। এখানে বাস করেন ছাং সিয়াংইয়াং নামে একজন দয়ালু হৃদয়ের নারী। তিনি এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন যেখানে শহরে চিকিৎসা নিতে আসা দরিদ্র পরিবারের শিশু ও তাদের অভিভাবকরা বিনামূল্যে থাকতে পারেন।
কিভাবে এর সূচনা হলো সেকথা জানান ছাং সিয়াংইয়াং। একদিন তিনি সি’আন শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলেন এক আত্মীয়কে দেখতে। সেখানে তিনি হাসপাতালের কোরিডোরে শুয়ে থাকা একজন প্রবীণ নারীকে দেখতে পান। তিনি জানতে পারেন ওই প্রবীণ নারীর তিন বছর বয়সী নাতি লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে খুব ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য পরিবারের অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। শহরে হোটেলে বা বাড়ি করে থাকার অনেক খরচ। সে খরচ আসবে কোথা থেকে? এজন্য দরিদ্র দাদী হাসপাতালের কোরিডরেই নাতির জন্য অপেক্ষা করছেন। ছাং শুনতে পান দাদী কাকে যেন বলছেন যে, যদি অন্য কোন উপায় থাকতো তাহলে কি আর হাসপাতালে বারান্দায় শুয়ে থাকি? সিয়ানে একটা স্টিমবান কিনে খেতে হলেও অনেক খরচ হয়।’ অসহায় প্রবীণার এই কথাগুলো ছাংকে আলোড়িত করে।
ছাং তাকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি হাসপাতালের কাছে এমন কোন ব্যবস্থা থাকে যেখানে বিনামূল্যে খাবারও পাবেন আবার থাকতেও পারবেন তাহলে কি আপনি সেখানে যাবেন?
অসহায় বৃদ্ধা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন, তারপর বলেন ‘এমন স্থান পরজন্মে পাওয়া যেতে পারে, এ জন্মে নয়।’
বৃদ্ধার দুঃখ ছাংকে আপ্লুত করে। তিনি তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এখান থেকেই সিনইয়ু হোম স্থাপনের সূচনা হয়।
২০১৭ সালে তার প্রচেষ্টায় যাত্রা শুরু করে এই আশ্রয় কেন্দ্র। সিআন শিশু হাসপাতালের খুব কাছে এই প্রতিষ্ঠান। ১৩টি শিশু রোগীর পরিবার এখানে বিনামূল্যে থাকতে ও খেতে পারেন।
এখন পর্যন্ত সিনইয়ু হোমে সারা দেশ থেকে আসা ২৩০০ শিশু তাদের পরিবার বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া পেয়েছেন। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিচ্ছে এমন শিশুরা এখানে তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে থাকতে পারে। হাসপাতালে থাকার চেয়ে এমন বাড়ির পরিবেশে থাকার ফলে তাদের মনটাও অনেক ভালো থাকে।
প্রথমদিকে ছাং নিজের অর্থ ব্যয় করে এটি চালাতে থাকেন। তার আত্মীয় ও বন্ধুরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমানে একটি সামাজিক সংগঠনও এখানে সহযোগিতা করছে।
সিয়ান শিশু হাসপাতালের হেমাটোলজির একজন চিকিৎসক মনে করেন, হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র পরিবারের অনেক শিশু তাদের অভিভাবকদের জন্য বিশাল সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন ছাং। এই নারী মায়ের মমতায় অসুস্থ শিশুদের জীবনে নিয়ে এসেছেন অশেষ আনন্দ। শিশুরা তাকে ডাকে ‘মা ছাং’ নামে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
সহপাঠীর জীবন বাঁচালো কিশোরী
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী এক মেয়ে তার সহপাঠীর জীবন রক্ষা করে সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পঞ্চমশ্রেণীর ছাত্রী লি লেসিনের উপস্থিত বুদ্ধি এবং স্বাস্থ্যরক্ষার জ্ঞানের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
চীনের চেচিয়াং প্রদেশের শাওসিং সিটির বাসিন্দা লি লেসিন।ছিংফাংচেং দ্বিতীয় নম্বর প্রাথমিক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী লি। একদিন লি তার দুই সহপাঠীর সঙ্গে স্কুল থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ তার চোখে পড়ে একজন সহপাঠীর গলায় কি যেন আটকে গেছে এবং সে দম নিতে পারছে না এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছে। লি সঙ্গে সঙ্গে তার স্কুলে শেখা প্রাথমিক জীবনরক্ষা পদ্ধতি কাজে লাগায়। সে সহপাঠীর স্কুল ব্যাগটি খুলে নেয়। তাকে বিশেষ পদ্ধতিতে পিঠে চাপ দেয়। এর ফলে সহপাঠীর গলায় আটকে যাওয়া বরফের টুকরো ছিটকে বেরিয়ে আসে এবং শিশুটির জীবন রক্ষা পায়।মাত্র ছয় সেকেন্ডের মধ্যে এই কাজটি করে লি।
লি লেসিন বলে, ‘আমি যখন দেখলাম তার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন একটু ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ে যায় স্কুলের শিক্ষকরা জীবনরক্ষা পদ্ধতি শিখিয়েছেন। আমি দ্রুত তার পিঠ থেকে স্কুল ব্যাগ খুলে নিই। তার পিঠে চাপ দেয়ার পর গলায় আটকে থাকা বরফের টুকরোটি ছিটকে বেরিয়ে আসে এবং তার জীবন বেঁচে যায়।’
চীনে শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা ও রক্ষা পদ্ধতি শিখানো হয়। জরুরি চিকিৎসা জ্ঞানের মহড়াও হয়।
এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে এবং নিজের উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসের ফলে বন্ধুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয় লি। এই ঘটনাটি সিকিউরিটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
তাদের ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে এবং সকলেই ছোট্ট মেয়েটির উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসের প্রশংসা করেন। স্কুলের শিক্ষকরাও লি লেসিনের কৃতিত্বের প্রশংসা করেছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
হানফু ডিজাইনে সফল হয়েছেন তরুণী লিউ
চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানফু। এই হানফুর রয়েছে নানা রকম স্টাইল। পাঁচশর বেশি হানফু ডিজাইন গড়ে নিজের ক্যারিয়ারকে সফল করেছেন তরুণী লিউ ওয়েনইয়ুয়ে।
চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হানফু।তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হানফুর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে। আর এই জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছেন ২৪ বছর বয়সী তরুণী লিউ ওয়েনইয়ুয়ে। তিনি হানফু ডিজাইনার। গত চার বছরে তিনি পাঁচশ সেটের বেশি হানফু ডিজাইন করেছেন। পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হাইনিং সিটির সুছুন টাউনশিপে তার একটি স্টুডিও আছে। সেখানে বিভিন্ন ডিজাইনের হানফু বিক্রি হয়। তিনি মামিয়ানছুন স্কার্ট বিক্রি করেও বেশ সফল হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন রকম মামিয়ান ছুন ডিজাইন করেছেন।
লিউ যখন কলেজে পড়তেন তখন থেকেই তিনি হানফু ডিজাইন করতেন। তবে সেটা ছিল নেহাতই শখের বশে। হানফু হলো ২০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যস্ত স্থায়ী হান রাজবংশের সময়কার পরিধেয়। মামিয়ানছুন স্কার্টের প্রচলন হয় সং রাজবংশের সময়ে যা মিং এবং ছিং রাজবংশের সময়ও প্রচলিত ছিল।
লিউ মনে করেছেন প্রাচীন যুগের এই পোশাকটিকে কিভাবে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি করা যায়। তিনি এমনভাবে পোশাক ডিজাইন করা শুরু করেন যেন আধুনিক কালের নারীরাও সেটি কর্মক্ষেত্রে পরে যেতে পারেন।
তিনি তার শখকে পেশায় রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করেন। তিনি ইন্টারনেটে তার ডিজাইন করা পোশাকের নকশা দিতে থাকেন। একদিন একজন হানফু ব্যবসায়ী তার কাছে এসে ৩০০ ইউয়ান দিয়ে তার নকশা কিনে নেন।
নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্টুডিও প্রতিষ্ঠার পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি লিউকে। এখন তিনি হানফু ডিজাইনার হিসেবে নিজের এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার তৈরি পোশাকগুলোর বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো বড় পার্টি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন যে কোন উপলক্ষ্যে ব্যবহার করা যায়।
লিউ মনে করেন তিনি এই পোশাক তৈরির মাধ্যমে একদিকে প্রাচীন চীনা ঐতিহ্যের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করছেন অন্যদিকে নিজের ক্যারিয়ারকেও গড়ে তুলছেন।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন ।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া
অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ