‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৭২ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. চীনে স্নাতকদের জন্য সাড়ে ৩৭ লাখ নতুন চাকরি
২. সি’আনের রাতের অর্থনীতির বিকাশে তরুণদের অংশগ্রহণ
৩. চায়না গ্র্যাজুয়েট ফ্যাশন উইক ২০২৪ এ তরুণ ডিজাইনারদের অংশগ্রহণ
১. চীনে স্নাতকদের জন্য সাড়ে ৩৭ লাখ নতুন চাকরি
স্নাতক শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুবিধার্থে চলতি মাসে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাতে নিয়েছিল "১০০ দিনের স্প্রিন্ট" নামের একটি প্রচারাভিযান। আর এর সুফল মিলেছে দারুণ। এক প্রকল্পেই তৈরি হয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখেরও বেশি নতুন চাকরি।
প্রচারাভিযানটি এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এতে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বৃহৎ পরিসরে ক্যাম্পাসভিত্তিক নিয়োগ, নীতির প্রচার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনসহ বিভিন্ন কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত আছে।
আড়াই হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ এখন পর্যন্ত এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে পেয়েছে নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা।
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশের কংছিংছেং শহরে, ১০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ৭০টিরও বেশি কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইন্টার্নশিপ কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
মধ্য চীনের হুনান প্রদেশে, স্থানীয় সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে যৌথ চুক্তি করেছে একটি সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি। ছাংশা শহরের ওই প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ভিত্তিক নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছে, যেখানে উচ্চ কর্মসংস্থানের চাহিদা তৈরি হয়েছে।
ক্যাম্পাসে বিশেষ নিয়োগ ইভেন্ট পরিচালনার জন্য একটি নিয়োগকারী দল গঠন করা হয়েছে। নিয়োগকর্তা এবং সম্ভাব্য কর্মীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়াতে শিক্ষার্থীদের কোম্পানি পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে।
সানান সেমিকন্ডাক্টরের ম্যানেজার ওয়াং ওয়েই বলেন, "গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের কাজের চাহিদা ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এখানে কাজের আরও সুযোগ থাকবে।’
দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, আর্থিক অসুবিধায় থাকা পরিবারের ছাত্রদের এবং যারা প্রতিবন্ধী তাদের চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য আরও বেশি চেষ্টা করা হবে। চলতি বছর সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্নাতকের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৮ লাখে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
২. সি’আনের রাতের অর্থনীতির বিকাশে তরুণদের অংশগ্রহণ
পর্যটক ও ভোক্তাদের জন্য প্রাণবন্ত গন্তব্য উত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের রাজধানী সি’আন। বিশেষ করে যে তরুণরা শহরের বৈচিত্র্যময় রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাদের উপস্থিতি বাড়ছে রাতের সি’আনে।
তিন হাজার একশ বছরেরও বেশি ইতিহাস সমৃদ্ধ সি’আনে আছে বিখ্যাত সব পর্যটন আকর্ষণ। নান্দনিক প্রাচীন স্থাপত্যকে পুঁজি করে শহরটির বিনোদন স্থানগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে এবং তরুণদের পছন্দের সঙ্গে মিল রেখে নতুন ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে রাতের অর্থনীতিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা চলছে জোরেসোরে।
শহরের আইকনিক ল্যান্ডমার্ক বেল টাওয়ারের কাছে একটি ছোট থিয়েটার হলে পরিবেশন করা হয় স্ট্যান্ড-আপ কমেডি। রাতেও সেখানে তরুণদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। এই ধরনের পারফরম্যান্স আর্ট চীনের তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। দিনের রুটিন কাজের চাপ থেকে ক্ষণিকের বিরতি পেতে তরুণরা সেখানে ছুটে যাচ্ছেন পরিচ্ছন্ন বিনোদনের জন্য।
লং পাও, কৌতুক অভিনেতা বলেন, “রাতের অর্থনীতি একঘেয়ে না হয়ে বৈচিত্র্যময় হওয়াই উচিত। আর এ বৈচিত্র্য আনতে কখনও আমাদের দিনে দুই-তিনটি শো’ও হয়।”
ইউয়ান থিয়েনওয়েই, থিয়েটার ম্যানেজার বলেন, ‘তাপমাত্রা যত বাড়ছে তত উপস্থিতিও বাড়ছে। এখন প্রতিটি শো’তে দুইশ জন দর্শক আসে। টিকিটের দাম প্রায় একশ ইউয়ান।’
বেইলিন জেলার ঐতিহাসিক ডেফু গলিতে ছিল সারি সারি পানশালা। সংস্কারের পর দুইশ মিটার লম্বা সড়কটিতে এখন বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ঐতিহ্যবাহী হানফু পোশাকের দোকান বসেছে।
ফান ইংশান নামে এক পর্যটক বলেন, ‘প্রতিটি দোকান সুসজ্জিত। দোকানের সামনের অংশটি তরুণ-তরুণীদের ছবি তোলার জন্য আকষর্ণীয় স্থান।’
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আশি ও নব্বইর দশকের দিকে এখানে যে ব্যবসায়ীরা জন্ম নেন তারা এখনকার প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন। বয়স্করাও তাদের দেখাদেখি প্রভাবিত হচ্ছেন। ফলে চিন্তাভাবনাও বদলে যাচ্ছে। আর এভাবেই পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে তেফু সড়কের রাতের অর্থনীতি বলে মনে করেন তারা।
প্রতিবেদক : রফিক বিপুল
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
৩. চায়না গ্র্যাজুয়েট ফ্যাশন উইক ২০২৪ এ তরুণ ডিজাইনারদের অংশগ্রহণ
নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চায়না গ্র্যাজুয়েট ফ্যাশন উইক ২০২৪। সম্প্রতি শেষ হয় ছয় দিনব্যাপী শুরু হওয়া এই ইভেন্ট। এতে সারা দেশ থেকে আসা এক হাজারের বেশি তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ৫৪টি উচ্চ শিক্ষার আর্ট স্কুলের ৬২ জন তরুণ ডিজাইনার তাদের গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পগুলোকে শরৎ-শীতকালীন নকশা সমন্বিত করে উপস্থাপন করেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সিংহুয়া ইউনিভার্সিটি, বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি এবং তালিয়ান পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দশজন শিক্ষার্থী ২৯তম চায়না ফ্যাশন ইয়াং ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
এবারের ১০ পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে একজন বেইজিং ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজির শিক্ষার্থী ছেন লিংসিন। তিনি তার ফ্যাশনে আধুনিক পোশাকে ঐতিহ্যগত উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন।
"আমি আমার সৃষ্টির নাম একটি বিখ্যাত প্রাচীন চীনা অপেরার নামে আমি আমার ডিজাইনের নাম দিয়েছি। এটি "গার্ডেন এর মিষ্টি স্বপ্ন" নামে পরিচিত। কারণ এটি আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দেয়। আমি এটি থেকে বিভিন্ন রঙের উপাদান গ্রহণ করেছি।’
আয়োজকরা জানান, এই ইভেন্টে, ঐতিহ্যবাহী চীনা উপাদান এবং আধুনিক নকশা ধারণার সংমিশ্রণ তরুণ শিক্ষার্থীদের সীমাহীন সৃজনশীলতা এবং ফ্যাশনের ভবিষ্যতের ব্যাপারে উৎসাহ জোগায় এবং উচ্চাকাঙ্খার জন্ম দেয়।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী