মে ২৯: গত ২৭ মে চীনের ২০তম আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক শিল্প মেলা (সংক্ষেপে সাংস্কৃতিক মেলা) শেষ হলো। চলতি বছরের সাংস্কৃতিক মেলা অফলাইন ও অনলাইনের মাধ্যমে আয়োজিত হয়। এবারের মেলায় বুথের সংখ্যা ছিল আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। মেলাকে সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক, বাজারধর্মী, বিশেষ, ও ডিজিটালাইজ করার মাধ্যমে, একটি প্রভাবশালী সাংস্কৃতিক পণ্যবাণিজ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এবারের সংস্কৃতিক মেলায় ৬০১৫টি সরকারি সংস্থা, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান অফলাইন ও অনলাইনের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে মেলায় ৩০৭৬টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বুথ ছিল। গোটা চীনের ৩১টি প্রদেশ, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, এবং হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান অঞ্চল, টানা ১৫ বারের মতো মেলায় যোগ দেয়। ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের ৩০২টি বিদেশী ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে মেলায় অংশগ্রহণ করে। এতে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি সাংস্কৃতিক পণ্য এবং ৪ সহস্রাধিক সাংস্কৃতিক শিল্প সরাসরি প্রদর্শিত ও লেনদেন হয়।
এবারের সাংস্কৃতিক মেলায় চীনের ৩০টি জাতীয় সাংস্কৃতিক শক্তিশালী শিল্পপ্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট হয়। পাশাপাশি, দেশী-বিদেশী ২২০টি শীর্ষ সাংস্কৃতিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করে। নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগকে হাইলাইট করা, জাতীয় সাংস্কৃতিক ডিজিটালাইজেশন কৌশল বাস্তবায়ন, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে সাংস্কৃতিক শিল্পকে ক্ষমতায়নের শক্তি দেখানোর জন্য, ‘ফিল্ম, টেলিভিশন, প্রকাশনা, কপিরাইট, গেম ই-স্পোর্টস’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনীও হয় মেলা চলাকালে। ডিজিটাল সাংস্কৃতিক শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের গভীর সংহতকরণকে এগিয়ে নিতে, প্রথমবারের মতো ‘আর্ট, ডিজাইন, জাতীয় জোয়ার’ এবং ‘সাংস্কৃতিক পর্যটন সংহতকরণ ও সাংস্কৃতিক কেনাকাটা’সহ বিভিন্ন থিম প্রদর্শনী-এলাকা স্থাপন করা হয় এবারের মেলায়, যাতে আর্ট ডিজাইনের ডিজিটালাইজেশনকে এগিয়ে নেওয়া যায়।
এবারের সাংস্কৃতিক মেলায় প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বাণিজ্য প্রদর্শনী-এলাকা স্থাপন করা হয়, যাতে আন্তর্জাতিক ‘বন্ধু বৃত্ত’ আরও সম্প্রসারণ করা যায়। আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী অঞ্চলটির আয়তন গতবারের ৩০০০ বর্গমিটার থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার বর্গমিটারে। অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা গতবারের ৫০টি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬০টিতে। ৩০২টি বিদেশী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয় এবং ৩০ সহস্রাধিক বিদেশী দর্শক অনলাইন ও অফলাইনে মেলা উপভোগ করে।
ব্যাপক আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও চালানো হয়েছে এবারের সাংস্কৃতিক মেলায়। পেরু, তুর্কিয়ে, কিউবা, পাকিস্তান, লাওস ও গ্রিসসহ ১৮টি দেশের দূতাবাস ও কনস্যুলেট প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। ব্রিটিশ এডিনবার্গের মেয়রের নেতৃত্বে ৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিনিধিদল এবারের সাংস্কৃতিক মেলায় অংশ নেয়। জার্মানির ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বই মেলা প্রথমবারের মতো বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বিভিন্ন গ্রন্থ নিয়ে এবারের সাংস্কৃতিক মেলায় অংশ নেয়।
এবারের সাংস্কৃতিক মেলায় ট্রেডিং ফাংশন জোরদার করা এবং একটি বহু-মাত্রিক বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির দিকে মনোনিবেশ করা হয়। এতে সমর্থনকারী ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এর সাহায্যে সাংস্কৃতিক পণ্যগুলো বুথ থেকে বাজারে যেতে পারছে।
এবারের সাংস্কৃতিক মেলা ছিল কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘প্রথম প্রদর্শনী’, ‘প্রথম শো’ এবং ‘প্রথম প্রবর্তন’। মেলা চলাকালে শুধু নবত্যাপ্রবর্তন প্রকল্প এবং নতুন পণ্যের প্রেস ব্রিফিংয়ের সংখ্যা ছিল ১১৭টি। এটি দেশী-বিদেশী নতুন পণ্য ও নতুন প্রকল্পের জন্য ‘প্রথম শো’ প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। এবারের সাংস্কৃতিক মেলার সাংগঠনিক কমিটির কার্যালয়ের স্থায়ী উপ-মহাপরিচালক লি ছিয়াং ছিয়াং বলেন, বিদেশী বাজারে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযুক্ত করতে সহায়তা করেছে এবারের সাংস্কৃতিক মেলা। এর লক্ষ্য ছিল, আরও বেশি আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)