মে ২৮: পঁচিশ বছর আগে তথা ১৯৯৯ সালে, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশের নেতৃবৃন্দ (১০+৩) এক বৈঠকে মিলিত হন। সেটি ছিল চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতার শুরু। উদ্দেশ্য ছিল, ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার পরিকল্পনা এবং যৌথভাবে এশিয়ার আর্থিক সংকট মোকাবিলা করা।
২৫ বছর ধরে, তিন দেশের সহযোগিতায় উত্থান-পতন ঘটেছে। তা সত্ত্বেও, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক একীকরণে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ত্রিপক্ষীয় এই সহযোগিতা। উক্ত সময়কালে, কোভিড-১৯ মহামারী এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভাজননীতিসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অষ্টম চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা-ব্যবস্থা ‘স্থবির’ হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষনেতৃবৃন্দের সান ফ্রান্সিসকো বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে সহায়তা করে, যা চীন-জাপান ও চীন-দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ককে উন্নতির দিকে ঠেলে দেয়। এতে ত্রিপক্ষীয় একটি সম্মেলন পুনরায় চালুর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
গতকাল (সোমবার) নবম চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বৈঠক সিউলে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকশেষে একটি যৌথ ঘোষণাও প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, বিগত বৈঠকে গৃহীত ‘আগামী দশ বছরে চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতার সম্ভাবনা’ বাস্তবায়নে, তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে উন্নত করতে এবং যৌথভাবে বিশ্ব শান্তি রক্ষা করতে প্রচেষ্টা চালানো হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অশান্ত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মন্থর গতির প্রেক্ষাপটে, চীন-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষবৈঠকের আহ্বান তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। এতে, জাপানের যৌক্তিক পথে প্রত্যাবর্তন, চীনের প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার নীতি, এবং তিনটি দেশের মধ্যে উষ্ণ রাজনৈতিক পরিবেশের চিত্র ফুটে ওঠে।
এরই মাঝে একজন মার্কিন ‘কূটনীতিক’ এই মর্মে মন্তব্য করেছেন যে, তিন দেশের নেতাদের এই বৈঠক স্বীকৃতি পাবার যোগ্য। বহির্বিশ্ব বিশ্বাস করে যে, বৈঠকে অর্জিত ফলাফল তিনটি দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা।
প্রশ্ন হচ্ছে: একটি নতুন সূচনাবিন্দুতে দাঁড়িয়ে, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া কীভাবে সহযোগিতার ‘গিয়ার পরিবর্তন ও গতি বাড়াতে পারে’? চীনা প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং বৈঠকে এই লক্ষ্যে পাঁচ-দফা পরামর্শ দিয়েছেন। এই পাঁচ-দফা পরামর্শ হচ্ছে: সহযোগিতার এই পুনঃসূচনাকে কাজে লাগাতে হবে; তিন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সংযোগ আরও গভীর করতে হবে; বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে; মানুষে মানুষে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বন্ধন দৃঢ়তর করতে হবে; এবং টেকসই উন্নয়নের পক্ষে কাজ করে যেতে হবে।
চীনা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা আশা প্রকাশ করেন যে, এই বৈঠক তিন দেশের জন্য স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার ধারা বজায় রাখার একটি নতুন সূচনা হবে। এতে বোঝা যায়, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অনেক অভিন্ন স্বার্থ এবং সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে; তারা ঐক্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন উন্নয়ন অর্জন করতে পারে।
ত্রিপক্ষীয় যৌথ বিবৃতিতে এই মর্মে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান, টেকসই উন্নয়ন, অর্থনীতি ও বাণিজ্য, জনস্বাস্থ্য, এবং দুর্যোগ ও ত্রাণের মতো ছয়টি প্রধান ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা হবে। জাপানের কিয়োডো নিউজ এজেন্সির বিশ্লেষণ অনুসারে, এটি আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিস্তৃত ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনটি দেশের সংকল্পকে প্রতিফলিত করেছে। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)