মধ্যপ্রাচ্যে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ির জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গ
2024-05-27 16:04:42

ঐতিহ্যবাহী তেল উত্পাদন এলাকা মধ্যপ্রাচ্য। তবে, আজকাল মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলছে। বিশেষ করে, পরিবেশ সংরক্ষণের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা এবং বিভিন্ন ইতিবাচক সরকারি নীতির ফলে,  মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির বিক্রি ক্রমশ বাড়ছে।

এর মধ্যে, চীনে উত্পাদিত নতুন জ্বালানিচালিত তথা বৈদ্যুতিক গাড়ি, উচ্চ কনফিগারেশন, উচ্চ কার্যকারিতা, ও তুলনামূলকভাবে কম দামের কারণে, মধ্যপ্রাচ্যের ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

জর্ডানে চীনা ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি বাড়ছে। দেশটির অবাধ বাণিজ্য এলাকা বিনিয়োগকারী কমিটির গাড়িশিল্প প্রতিনিধি নাসের জানান, ২০১৯ সালে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি আমদানিকৃত স্থান ‘জারকা মুক্ত অঞ্চল’ থেকে শুল্ক-ছাড়পত্র পাওয়া চীনের নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ির সংখ্যা ছিল মাত্র ৭২টি ছিল। আর, ২০২২ ও ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১২ হাজার ৮২০টি ও ৩৩ হাজার ৩৮৬টিতে।  চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৬৪৩টি। নাসেরের বিশ্লেষণ অনুসারে, জর্ডানিরা যেসব কারণে ক্রমবর্ধমান হারে বৈদ্যুতিক গাড়ি বেছে নিচ্ছেন, তার মূল হচ্ছে, এটি ব্যবহার করতে ব্যয় কম হয়।

২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত মিসরে নিবন্ধিত পারিবারিক বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮২৬টি। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে যায় এবং এ সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির প্রবণতা দেখাচ্ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রয়কর্মী মুনির বলেন, স্থানীয় অধিবাসীরা চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি বেশি পছন্দ করেন। কারণ, গাড়িগুলোর কনফিগারেশন ভালো, দাম কম, কার্যকারিতা বেশি, এবং রক্ষণাবেক্ষণ-ব্যয় কম।

প্রায় ৮ বছর আগে উপসাগরীয় অঞ্চলের সংযুক্ত আরব আমিরাত চীনা নতুন জ্বালানিচালিত গাড়ি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ শুরু করে। সবার আগে চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিকারক দেশগুলোর অন্যতম এই আমিরাত। দুবাইয়ের গাড়ি ব্যবসায়ী ফরজাদ বললেন, চীনা ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির গুণগত মান উঁচু, প্রযুক্তি অগ্রণী, এবং স্থানীয় রাস্তা ও আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত। বিগত দুই বছরে স্থানীয়দের মধ্যে এ গাড়ি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয় করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করায়, সেসব দেশের বাজারে এ ধরনের গাড়ি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন, ইউএই সরকার ২০৫০ সাল নাগাদ বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা মোট গাড়ির ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। এতে পরিবহন বিভাগের তেলের খরচ অনেক কমে যাবে। মিসরও শুল্ক হ্রাস, গবেষণা, ও প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার মাধ্যমে, ব্যাপকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়িশিল্পের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।

ইউএই’র অর্থনীতিবিদ জাবিরা মনে করেন, চীনা ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা-ক্ষমতা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়ির চেয়ে বেশি। আগামী দু’বছর দেশটিতে এ গাড়ির বিক্রি ৩০ শতাংশ বাড়বে। আবুধাবির গাড়ি ব্যবসায়ী তাজি বলেন, চীনা ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির উপযোগিতা বেশি, ব্র্যান্ড ও মডেল বৈচিত্র্যময়। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী হল, আউটলেট ও রক্ষণাবেক্ষণকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে বলেও তিনি জানান। (প্রেমা/আলিম)