আকাশ ছুঁতে চাই ৭১
2024-05-23 16:35:29

                                             

১. চীনে জেন্ডার সমতা বাড়ছে

২. বদলে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের নারীদের লাইফস্টাইল

৩. কারুশিল্পী নারীর মুখে হাসি

৪. নারীদের মজার খেলা

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে  স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

চীনে জেন্ডার সমতা বাড়ছে

জেন্ডার সমতা বাড়ছে চীনে। চীনের নারী-পুরুষ সমানতালে এখন কাজ করছেন ঘরে বাইরে। চীনের কর্মজীবী নারীদের মতো এখন কর্মজীবী পুরুষরাও ঘরের কাজে সময় দিচ্ছেন বেশি। এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না কারও পেশাগত সাফল্য। সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বিস্তারিত শুনবো প্রতিবেদনে।

 

চীনে কর্মজীবী মায়েদের এখন ঘরের কাজ বেড়েছে। তবে সেই সঙ্গে অংশগ্রহণ বেড়েছে কর্মজীবী বাবাদেরও।

এ বছরের মা দিবসে দেশটির চাকরি বিষয়ক পোর্টাল চাওপিন এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্টের যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

এই বছরের প্রথম দুই মাসে সংস্থা দুটির পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, পেশাগত সাফল্য সত্ত্বেও, চীনের কর্মজীবী মায়েরা এখনও গৃহস্থালির বেশিরভাগ দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের ৭৭ শতাংশেরও বেশি প্রতিদিন ঘরের কাজে দুই ঘণ্টার বেশি সময় দিচ্ছেন। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল সাড়ে ৬৭ শতাংশ।

অন্যদিকে কর্মজীবী বিবাহিত পুরুষদের ৪৭ শতাংশ দিনে ২ ঘণ্টা করে ঘরের কাজ করছেন। অবশ্য আগের বছর এ সংখ্যাটা ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ, জরিপে বোঝা যায়, চীনে জেন্ডার সমতা দিনে দিনে বাড়ছে এবং কর্মজীবী পুরুষরা এখন ঘরের কাজ করার ব্যাপারে উৎসাহী হচ্ছেন।

প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, চীনের ৫৪ শতাংশ কর্মজীবী মা বলেছেন, তারা তাদের আয়ের বেশিরভাগ ব্যয় করেছেন শিশুর যত্নে। আগের চেয়ে ভাড়া বা বন্ধকি ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যয়ের পরিমাণও বেড়েছে। এ বছর এসব খাতে ব্যয় বাড়িয়েছেন ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মজীবী মা, যেখানে গত বছর সংখ্যাটা ছিল ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

তবে এর বিপরীতে কর্মজীবী মায়েদের ব্যয় কমেছে নিজেদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার উন্নয়নে। বিশেষ করে বাসাভাড়া বৃদ্ধির ফলেই তাদের আত্ন-উন্নয়ন তহবিলে টান পড়েছে বলে জরিপে দেখা গেছে।

এদিকে, চীনের তৃতীয় সন্তান নীতি বাস্তবায়নের প্রায় তিন বছর পরও জরিপে দেখা গেছে কর্মজীবী মায়েদের মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা তৃতীয় সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। বাবাদের মধ্যে তৃতীয় সন্তানের পক্ষে আছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে এ বছর আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ বিবাহিত নারী, যাদের সন্তান রয়েছে, তারা জানিয়েছেন যে, তারা নিশ্চিত পদোন্নতি পাবেন।

চাইনিজ একাডেমি অফ পার্সোনেল সায়েন্সের কর্মসংস্থান বিভাগের পরিচালক পাং শি বলেন, ‘সমাজটা এখন লিঙ্গ সমতা এবং সন্তান জন্মদানের সহায়ক হয়ে উঠছে। তবে, নারীদের আরও সুযোগ দেওয়ার জন্য এখনও অনেক পথ যেতে হবে।

প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

বদলে যাচ্ছে চীনের নতুন প্রজন্মের নারীদের লাইফস্টাইল

চীনের তরুণ প্রজন্মের নারীদের লাইফস্টাইল আর আগের মতো শুধু ঘরসংসার আর আত্মীয় স্বজন বা বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়ন, সেলাই, রান্না ও রূপচর্চায় আবদ্ধ নেই। তরুণ প্রজন্মের নারীরা এখন বিভিন্ন ব্যতিক্রমী স্পোর্টসে অংশ নিচ্ছে, তাদের শখ পূরণে নানা রকম কাজে সময় ব্যয় করছেন। চলুন শোনা যাক তরুণ প্রজন্মের নারীদের লাইফস্টাইল নিয়ে প্রতিবেদন।

ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ সিটি। এখানে শহরের উপকণ্ঠে চিংসি টাউনে রয়েছে ওয়েসিস ক্যাম্প। মিনচিয়াং নদীর অববাহিকায় স্থাপিত এই ক্যাম্প বিভিন্ন ধরনের জলক্রীড়ার জন্য বিখ্যাত।

 

মোটর সার্ফিং এবং কায়াক চালনা বেশ কয়েক বছর ধরেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে । অনেক নারী এখন কায়াক চালাচ্ছেন, মোটর সার্ফিং করছেন। অনেক নারী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই ক্যাম্পে আসছেন। তারা বিভিন্ন ধরনের জলক্রীড়ায় মেতে উঠছেন। নারীরা শখের বশে কায়াক চালাচ্ছেন এমনটি আগে ছিল অকল্পনীয়।

 

 গৃহবধূ নারীরা সংসারের কাজ করবেন এমনটাই ছিল সমাজের প্রচলিত রীতি। এমনকি কর্মজীবী নারীরাও ছুটির দিনগুলোতে সাধারণত ঘরগৃহস্থালি কাজ করেই সময় কাটাতেন। বড়জোর নিজস্ব বাগানে সময় দিতেন কিংবা সেলাই বা এমব্রয়ডারিতে ব্যস্ত হতেন।

মিউজিয়ামের স্বেচ্ছাসেবী বা ভলেনটিয়ার হিসেবে কাজ করাও এখন অনেক নারীর লাইফস্টাইলের অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হ্যনান মিউজিয়ামের স্বেচ্ছাসেবকরা ৩.১ মিলিয়ন ঘন্টা সেবা দিয়েছেন। এই ভলেনটিয়ারদের মধ্যে অনেকেই নারী। তারা চাইনিজ ও ইংরেজি দোভাষী হিসেবে কাজ করেন।

 

মিউজিয়ামের ভলেনটিয়ার হিসেবে অনেক নারী ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। নিজেদের শখও পূরণ করছেন। এর মাধ্যমে মিউজিয়ামে আগত দর্শকরা জানতে পারছেন অনেক কিছু।

নাইট স্কুলে যোগ দেয়াও নারীদের জনপ্রিয় লাইফস্টাইলে পরিণত হয়েছে। নাইটস্কুলে অনেক নারী শিখছেন এথনিক ডান্স, অনেকে করছেন শরীরচর্চা। লিইয়ু সিনলেই নামে একজন তরুণী জানান নাইট স্কুলে এথনিক নৃত্য শেখা তার দীর্ঘদিনের শখ পূরণ করেছে।

চীনের নারীদের পেশাগত ক্যারিয়ার গড়ার পাশাপাশি শপিং, ঘুরে বেড়ানো এবং শরীরচর্চা লাইফস্টাইলে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল

 

কারুশিল্পী নারীর মুখে হাসি

চীনের মিয়াও জোতির নারীদের বিশেষ এমব্রয়ডারির খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তবে এই কারুশিল্পের খ্যাতি এখন আর শুধু দেশে নয়, চীনের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বেও। শুনবো মিয়াও কারুশিল্পী নারী ইয়াং শিইয়িংয়ের সাফল্যের কথা।

চীনের মিয়াও জাতির একজন কারুশিল্পী ইয়াং শিইং। তিনি মিয়াও এমব্রয়ডারির একজন উত্তরাধিকারী। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের বাসিন্দা ইয়াং পাঁচ দশক ধরে মিয়াও এমব্রয়ডারির চর্চা করছেন।

তিনি শুধু এই অনন্য কারুশিল্পের ধারকই নন, প্রশিক্ষকও। ইয়াংয়ের ছেলে আসিন একজন উদ্যোক্তা। মা ও ছেলে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিয়াও এমব্রয়ডারিযুক্ত বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি ও বাজারজাত করা হয়।

আসিন একজন মিয়াও এমব্রয়ডারি ডিজাইনার। মায়ের কাছ থেকেই এমব্রয়ডারি শিখেছেন তিনি। তিনি মনে করেন ঐতিহ্যবাহী এই নকশাকে আধুনিক জীবনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ব্যবহার করতে হবে।

ইয়াং ঐতিহ্যবাহী নকশার প্রয়োগ করেছেন নতুন নতুন সামগ্রীতে। যেমন ব্যাগ, বেডকভার, জুতাসহ বিভিন্ন শোপিস তৈরি করেছেন, তৈরি করেছেন আধুনিক পোশাক। ২০০৭ সালে তারা নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন।

সম্প্রতি মা ও ছেলে অংশ নিয়েছেন দশম লন্ডন কারুশিল্প সপ্তাহে। লন্ডনের এই কারুশিল্প প্রদর্শনী ও মেলায় ইয়াং এর কাজ বেশ প্রশংসিত হয়েছে। বিদেশিরা তাদের কারুশিল্পে মুগ্ধ হয়েছেন।

 

নারীদের মজার খেলা কু-মা বাস্কেটবল

চীনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও নিজস্ব সংস্কৃতি। এমনি একটি সাংস্কৃতিক উৎসব হলো কু-মা লানছিও বা কুমা বাস্কেটবল।

এই খেলার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি মূলত নারীদের খেলা এবং বিশেষভাবে বিবাহিত নারীদের খেলা। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচোও প্রদেশের মিয়াও নারীদের মধ্যে এই খেলা বিশেষভাবে প্রচলিত। যেসব মিয়াও নারীর গ্রামের বা এলাকার বাইরে বিয়ে হয়েছে মূলত তারাই এই খেলায় অংশ নেন।

কুইচোও প্রদেশের ছিয়াংতোংনান মিয়াও এবং তোং স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারে  সম্প্রতি আয়োজন করা হয় এই মজার খেলার। এই খেলার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে ইচ্ছামতো হাত ব্যবহার করা যায় এমনকি অন্যকে টেনে ধরাও যায়।

 

খেলোয়াড়দের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উৎসাহ দেন দর্শকরা। জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে খেলায় অংশ নেন নারীরা। দর্শকরাও অনেকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন ।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল