‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ৭১
2024-05-22 16:38:58

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।

 

৭১ তম পর্বে যা যা থাকছে:   

১. ফিটনেস নিয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে চীনের তরুণ তুর্কিরা

২. চীনের মূল ভূখণ্ড ও তাইওয়ানের তরুণদের যুব বিনিময় বাড়ছে

৩. শাংহাই স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে তরুণ খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ বেড়েছে

 

 

১. ফিটনেস নিয়ে কোমর বেঁধে নেমেছে চীনের তরুণ তুর্কিরা

 

ফিটনেস নিয়ে বলতে গেলে কোমর বেঁধেই নেমেছে চীনের তরুণ তুর্কিরা। নানা ধরনের শরীরচর্চা নিয়ে এখন আগ্রহ বেড়েছে তাদের। ভোর হতেই দেখা যায় বয়স্কদের সঙ্গে জগিং করছেন তরুণ-তরুণীরা।

 

তবে যেনতেন শরীরচর্চা বেছে নিচ্ছেন না। এখানেও আছে ঐতিহ্য, আছে চীনা বিশেষত্ব। নিজের যত্নের ব্যাপারে চীনে এখনও সগৌরবে টিকে আছে ‘ইয়াংশেং’। যার আক্ষরিক অর্থই হলো নিজের প্রতি খেয়াল রাখা। ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতি ও তাওয়িস্ট ধারণা থেকে আসা আত্মউন্নয়নের এই ইয়াংশেং সম্পর্কে এখন অনেক চীনা তরুণ জানতে আগ্রহী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইয়াংশেং এর জনপ্রিয়তা যেমন বেড়েছে তেমনি এ সংক্রান্ত বাজারটাও হয়েছে আরও চাঙ্গা।

 

গতবছর ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের ওপর শরীরচর্চা বিষয়ক একটি জরিপ চালিয়েছিল চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন, ন্যাশনাল ‍ব্যুরো স্ট্যাটিসটিকস অব চায়না এবং চায়না পোস্ট। সেই জরিপের ফল প্রকাশ হলো সম্প্রতি। তাতে দেখা গেছে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কেনা ও ঘুরে বেড়ানোর পরই ওই তরুণদের আগ্রহের তালিকায় তিন নম্বরে আছে নিজেদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু পাওয়ার কৌশল রপ্ত করা।

 

 

শানতোং প্রদেশের লিনই শহরে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করছে তরুণ কর্মজীবী লিং চিয়ান। শরীরচর্চার জন্য  তিনি বেছে নিয়েছে আরেকটি চীনা ঐতিহ্যবাহী চর্চা বাতুয়ানচিন। প্রথাগত চাইনিজ ব্যায়ামটি করা কিছুটা কম কষ্টের। এতে আছে মোট আটটি নড়াচড়ার কৌশল। মন ও শরীর থেকে কাজের চাপ ঝেড়ে ফেলতে যেটা এখন প্রতিদিনই চর্চা করছে লিং চিয়ান। তিনি জানালেন, ‘আমি অ্যাথলেটিক নই। তবে জিমের আবহ আমাকে বেশ টানে। তাই, বাড়িতে বা বাড়ির কাছের কোনো পার্কে বাতুয়ানচিন করাই আমার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।’

৩২ বছর বয়সী লিং চিয়ান জানালেন এই বাতুয়ানচিনের ইতিবাচক ফল পেতে হলে থাকা চাই ধৈর্য।

তিনি আরও জানালেন, স্বাস্থ্য সংরক্ষণে ঐতিহ্যগত জ্ঞান সম্পর্কে জানতে তরুণদের কাছে একটি প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে বাতুয়ানচিন। এটি তরুণদের কম লবণ ও কম তেলযুক্ত খাবারের প্রতি আগ্রহী করবে বলেও জানান তিনি।

২০২২ সালে চীনের কিছু স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ও সিনহুয়া নিউজ এজেন্সির একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছিল, দেশটির বিপুল সংখ্যক তরুণ তাদের পুষ্টি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। ওই সময় তারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ও ঘুমের মান উন্নত করতে ঝুঁকেছিল নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও সাপ্লিমেন্টের দিকে। এমনকি ওই সময় জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি তরুণ স্বীকার করেছিলেন তারা স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং জীবনধারা ছেড়ে দিতে চায়। তারা এও মনে করতো পুষ্টিকর পণ্যের পেছনে অর্থ ব্যয় করা মানেই অপচয়।

 

 

সম্প্রতি চীনের শীর্ষ আইনসভা জাতীয় গণকংগ্রেসের একজন ডেপুটি এবং ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ বিশেষজ্ঞ চাং বোলি জানালেন, চীনের এবারের দুই অধিবেশনেও উঠে এসেছে যে, দেশটিতে চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যাচ্ছে। চাংয়ের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য সাপ্লিমেন্টারি খাবার গ্রহণ অস্বাস্থ্যকর এবং এটি ফিটনেসের সমাধান নয়।

চাং তাই চীনা তরুণদের বেশি করে ফল ও শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।  সেই সঙ্গে দেরিতে না  ঘুমানো বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল, কফি বা চা পানও এড়িয়ে যেতে বলেছেন।

 

প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ

 

২. চীনের মূল ভূখণ্ড ও তাইওয়ানের তরুণদের যুব বিনিময় বাড়ছে

 

চীনের মূল ভূখণ্ড এবং চীনের তাইওয়ানের তরুণরা পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়াতে যুব বিনিময় ও যোগাযোগের আহ্বান করছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের দুইজন ছাত্র হাও চিয়াসিন এবং ছেন চিয়াইয়ং তাইওয়ানে পড়ছে। ছেন যখন তার পিএইচডি ডিগ্রি নিচ্ছিলেন হাও তখন মাস্টার্সের ছাত্র। দীর্ঘদিন দ্বীপে থাকার পর তারা তাইওয়ানের  শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছেন।

‘আমি লক্ষ্য করেছি যে তাইওয়ানের অনেক তরুণ-তরুণী মূল ভূখণ্ডের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সিয়াওহংশু এবং বিলিবিলি ব্যবহার করছে । তাদের সাথে কথা বলে দেখলাম, তারা মূল ভূখণ্ডের ইন্টারনেট সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে। তাই ভাবলাম, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার গভীরতা বাড়ানোর প্রথম ধাপ এটি।’

 

হাও এবং ছেনের মতে ২০১৬ সাল থেকে তাইওয়ানে মূল ভূখণ্ডের শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে গেছে। তাদের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে তাইওয়ানে মূল ভূখণ্ডের ছাত্র সংখ্যা ছিল  ৪১ হাজার ৯৭৫ জন। কিন্তু ২০২৩ সালে তা সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশিতে নেমে এসেছে। ইতোমধ্যে চীনের তাইওয়ানের তরুণদের মূল ভূখণ্ডে অধ্যয়ন করার জন্য স্বাগত জানানো হয়েছে।

গত বছরের ২৭ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চীনের কুয়ামিনতাং পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মা ইয়িং চিও তাইওয়ানের একদল তরুণদের নেতৃত্বে নানছিং, উহান, ছাংশা, ছংছিং, শাংহাই এবং আরও কিছু জায়গা পরিদর্শন করেছিলেন। এক বছর পর এপ্রিলে ১১ দিনের সফরে মূল ভূখণ্ডে তাইওয়ানের আরেকটি যুব প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মা ইয়িং।

 

ওয়ান ইউ মিং এই বছরের প্রতিনিধিদলের ছাত্র ছিলেন। তিনি মূল ভূখণ্ডের দ্রুত বিকাশ এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।

‘সাংস্কৃতিক শক্তিকে ত্বরাণ্বিত করতে ভালো কাজ করছে চীনের মূল ভূখণ্ড। আমরা প্রাসাদ জাদুঘর, বিশেষ করে সংরক্ষণ কর্মশালায় গিয়েছিলাম। সেখানে প্রত্যেকে তাদের নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রগুলোর পরিচয় দিয়েছে এবং প্রত্যেকেই তাদের নিজের কাজের ক্ষেত্রে অনন্য’

 “আমরা দেখলাম আমাদের আগ্রহের বিষয়গুলোর মাঝে মিল রয়েছে। আমরা সেখানে ছিলাম তখন অনেক শিক্ষার্থী আমাদের জিজ্ঞাসা করেছিল যে আমরা তাইওয়ানের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'ব্লসম শাংহাই' দেখেছি কিনা। তেমনি চীনের মূল ভূখণ্ডের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'দ্য পিগ, দ্য স্নেক অ্যান্ড দ্য পিজিয়ন' ফিল্মটি তারা দেখেছে। আমরা উভয় অঞ্চলের খাবার, শখ ও বিনোদনের অনেক মিল পেয়েছি।”

 

এই বছরে তাইওয়ানের প্রতিনিধিদলের আরেক  ছাত্র লি লিয়াং ই বলেন- মূল ভূখণ্ডের শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি আদান-প্রদান ভালো পারস্পরিক বোঝাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

 

প্রতিবেদক : রফিক বিপুল

সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

 

৩. শাংহাই স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালে তরুণ খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ বেড়েছে

শাংহাই স্পোর্টস ফেস্টিভ্যালের সঙ্গে অলিম্পিক গেইমসের একটি বিশেষ সম্পর্ক আছে। প্যারিস গেমসের আর মাত্র ২ মাস বাকি।  এর আগে চলছে বিভিন্ন ধাপের বাছাইপর্ব। শাংহাইয়ের এই উৎসবে একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণ দৃষ্টি কাড়ছে আয়োজকদের।

 

শাংহাই স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল এবং একটি সম্মিলিত অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার সিরিজের মাধ্যমে তরুণদের অলিম্পিকের স্বপ্ন এবং ফিটনেস; দুটোই ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।  


অলিম্পিকে নতুন সংযোজন হওয়া অনেক খেলার কোয়ালিফায়ার রাউন্ডগুলো এখন মাতিয়ে রেখেছে শহরটিকে। তরুণরা এই শহুরে ক্রীড়ায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা হাতছাড়া করছে না। তারা আশাবাদী যে এতে করেই তারা তাদের অলিম্পিক স্বপ্নের পেছনে ছুটতে পারবে।

শাংহাইয়ে প্রথম অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার সিরিজে অংশগ্রহণকারী দর্শকরা অ্যাথলেটদের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দেখার পাশাপাশি আরও অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। 

 

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ওকিউএসকে একটি উৎসবই বলে থাকে।  "আরবান পার্ক"-এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্রীড়া উত্সব। খেলাধুলা, শিল্প, সংগীত এবং সাংস্কৃতিক উদযাপনে এটি একটি প্রতিযোগিতার চেয়েও বেশি কিছু।

নগরের এ ধরনের উৎসবই হলো শহুরে ক্রীড়া প্রচারের দুর্দান্ত সুযোগ। এমনকি এ ধরনের আয়োজন সাবেক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নদেরও টানে বেশ।

অনুভূতির কথা জানালেন চীনা ডুবুরি ও অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী উ মিনসিয়া। "আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি এখানে অলিম্পিকের আমেজ অনুভব করতে পারি।"

 

এবারের উৎসবে আছে ক্লাইম্বিং প্রাচীর হিসেবে আছে শাংহাইয়ের আইকনিক ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ার। অংশগ্রহণকারীরা এতে আরোহণ করে শহরের অত্যাশ্চর্য সব দৃশ্য দেখতে পাবে।

 

এই অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার সিরিজের জন্য নির্ধারিত চারটি শহুরে খেলা এবার বিশাল সংখ্যক তরুণ-তরুণীকে আকর্ষণ করেছে। এরা প্রথমবারের মতো এসব খেলায় অংশ নিয়ে নিজেদের সেরাটা দিতে আগ্রহী। 

গত কয়েক বছরে, অলিম্পিক গেমসে যোগ হয়েছে ক্লাইমবিং। এরপর থেকে এই খেলায় অংশ নেওয়া আগ্রহী তরুণদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে জানান শাংহাই মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড আউটডোর স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল হুয়াং হংছিং। 

 

‘বেশি সংখ্যক তরুণ-তরুণী এখন ক্লাইমবিং ভালোবাসে। এটি ফ্যাশনেবল। এবার প্রচুর কলেজ শিক্ষার্থী এতে অংশ নিয়েছে।’ 

আয়োজকরা জানান, শহুরে খেলাধুলা প্রচার করা এই ইভেন্টের লক্ষ্য। এই আয়োজনের মাধ্যমে বিভিন্ন খেলা তরুণদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। শাংহাইয়ে এর বিকাশ ঘটলে এসব খেলা শহরটিকে একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া নগরীতে পরিণত করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

 

প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।

  

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী