বিজ্ঞানবিশ্ব ৭১তম পর্ব
2024-05-19 17:59:39

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৭১তম পর্বে যা থাকছে:

 

* ৩০ বছর গবেষণার পর সয়াবিনের মরিচা রোগ প্রতিরোধে সফল

* তাপরোধী বিশেষ ধাতু তৈরি করলেন চীনা গবেষকরা

* আলঝেইমার রোগের জন্য দায়ী জিন শনাক্ত

 

৩০ বছর গবেষণার পর সয়াবিনের মরিচা রোগ প্রতিরোধে সফল

ফ্যাকোপসোরা প্যাকাইরিজি নামক এক প্রকার ছত্রাকের কারণে সয়াবিনের মরিচা রোগ হয়ে থাকে, যা সয়াবিন চাষের প্রধান বাধা। এটি পাতা, ডালপালা, বীজ, এবং ডালে আক্রমণ করে ফসলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। এই সমস্যার সমাধানে, মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের গবেষকদের একটি দল জিন ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সয়াবিনের মরিচা রোগ প্রতিরোধে সাফল্য অর্জন করেছে।

সম্প্রতি চাইনিজ একাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের অয়েল ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সয়াবিন জেনেটিক ব্রিডিং ইনোভেশন দল এমন সফলতা পেয়েছে।

সয়াবিন জার্মপ্লাজম রিসোর্সেস কক্ষে গবেষকরা জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত সয়াবিনের মরিচা সংক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করেন। এরপর তারা সয়াবিনের মরিচা রোগ প্রতিরোধে জিন ক্লোন করে দেখতে পেয়েছেন, জিনগতভাবে পরিবর্তিত উদ্ভিদগুলো সাধারণ সয়াবিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদর্শন করছে।

এ গবেষণা দলের একজন জানান, সয়াবিনের গাছে মরিচা-প্রতিরোধী জার্মপ্লাজম দেওয়ার পরে গাছের পাতাগুলো তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার থাকবে, কোনও মরিচা ছত্রাকের দাগ দেখা যায়নি।

 

অয়েল ক্রপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক এবং জাতীয় সয়াবিন শিল্প প্রযুক্তি সিস্টেমের বিজ্ঞানী চেন হাইফেং নতুন উদ্ধাবিত এ পদ্ধতির  অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তার বিষয়গুলো তুলে ধরে জানান, সয়াবিন আমদানির ষাট শতাংশ আসে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে, বিশেষ করে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা থেকে, যেখানে সয়াবিনের মরিচা রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। রোগটি প্রাথমিকভাবে কীটনাশক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, এটি একদিকে যেমন ব্যয়বহুল অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

প্রায় ৩০ বছরের প্রচেষ্টা এবং দেশব্যাপী ১৩ হাজারেরও বেশি সয়াবিনের জার্মপ্লাজম নমুনা সংগ্রহের পরে এই সাফল্য এসেছে।

এই গবেষণাটি সয়াবিন চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। জিন ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মরিচা রোগ প্রতিরোধী সয়াবিন জাত তৈরি করা হলে কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সয়াবিন চাষকে আরও টেকসই এবং লাভজনক করে তোলা সম্ভব হবে।

 

 

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

তাপরোধী বিশেষ ধাতু তৈরি করলেন চীনা গবেষকরা

উড়োজাহাজ, রকেট বা মহাকাশযানকে ছুটতে হয় দারুণ গতিতে। আর এই গতির ফলে বায়ুকণার সঙ্গে সংঘর্ষে তৈরি হয় উত্তাপ। সেই তাপ কমাতে উড়োযানের বাইরের দিককার বিভিন্ন অংশ ও যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয় বিশেষ ধাতু দিয়ে। সেই তাপরোধী ধাতু তৈরিতে নতুন করে একটি সাফল্য পেয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।

 

ঘনত্ব কম হলেও শক্তিতে কোনো অংশে কম নয় অ্যালুমিনিয়ামের সংকর। বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে এর ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ের মাত্রাও তুলনামূলক কম। উড়োজাহাজ ও মহাকাশযানে তাই কদর আছে অ্যালুমিনিয়াম সংকরের।

তবে তাপ নিয়ে ধাতুটিকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। বিশেষ করে তাপমাত্রা সাড়ে তিনশ থেকে ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলেই বিপদে পড়ে অ্যালুমিনিয়াম সংকর।

কিন্তু এ পরিমাণ তাপ নিয়েই কাজ করতে হয় অ্যারোস্পেস প্রকৌশলীদের।

তাদের মতে, অপেক্ষাকৃত হালকা ধাতু যত বেশি তাপ সহনশীল হবে, মহাকাশ ও রকেট শিল্পে সেটার উপযোগিতা ততই বাড়বে।

চীনের থিয়ানচিন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তৈরি করেছেন নতুন এক অ্যালুমিনিয়াম সংকর যা ৫০০ ডিগ্রিতেও দিব্যি টিকে থাকবে। গবেষকরা এ সংকর তৈরিতে ব্যবহার করেছেন বিশেষ ধরনের ন্যানো পার্টিকেল। ওই ন্যানো আকৃতির কণার সঙ্গে তারা জুড়ে দিয়েছেন অ্যালুমিনিয়ামের অ্যালয়। এতে তারা আরও ব্যবহার করেছেন কার্বনের এক অণু পুরুত্বের কার্বনের স্তর, যার আরেক নাম গ্রাফিন।

ন্যানো পার্টিকেলগুলোর কারণেই মূলত অ্যালুমিনিয়াম সংকরটির তাপ সহনশীলতা ছাড়িয়েছে ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সম্প্রতি নেচার মেটেরিয়ালস জার্নালেও এ তাপরোধী নতুন অ্যালুমিনিয়াম সংকর নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বিস্তারিত প্রতিবেদন।

নেচার জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটির লেখক থিয়ানচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্য ছুননিয়ান জানিয়েছেন, নতুন ধাতুর উদ্ভাবনী প্রক্রিয়াটি সরল। এর উপাদান ব্যয়ও তুলনামূলক কম। তাই বিভিন্ন উৎপাদন শিল্পেও এই ধাতুর ব্যাপক ব্যবহার থাকতে পারে বলে জানান ছুননিয়ান।

এ ছাড়াও, এ উচ্চ তাপমাত্রায়ও প্রায় ২০০ মেগাপ্যাসেকেল চাপ সহ্য করতে পেরেছে ধাতুটি। যা সাধারণ অ্যালুমিনিয়াম সংকরের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি।

 

|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

|| সম্পাদনা:  শুভ আনোয়ার

 

আলঝেইমার রোগের জন্য দায়ী জিন শনাক্ত

আলঝেইমার হলো মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। সচরাচর আলঝেইমার ডিজিজই ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিহ্রাসের সবচেয়ে বড় কারণ। আলঝেইমার একটি অগ্রগতিশীল রোগ। অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ব্রেইনের আরও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। একে থামানো কঠিন।

সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে যদিও কিছু মানুষ অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সেও এতে আক্রান্ত হন। সম্প্রতি আলঝেইমার রোগের জন্য দায়ী এবং রোাগে সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয় এমন একটি জিনকে শনাক্ত করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণার ফলাফল নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

চীনা বিজ্ঞানীদের এমন গবেষণা, আলঝেইমার রোগ নির্ণয়, গবেষণা এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

গবেষণয়া উঠে এসেছে, যাদের শরীরে এই জিনের দুটো কপি রয়েছে তাদের অ্যালঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পাশাপাশি কম বয়স থেকে এর লক্ষগুলো প্রকাশ পেতে থাকবে। গবেষকরা এই জিনের নাম দিয়েছেন ‘এপিওই৪’।

এই জিনটি মস্তিষ্কের কোষগুলোর মধ্যে চর্বি পরিবহনে ভূমিকা পালন করে। সাধারণ জনসংখ্যার প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ, বা আলঝেইইমার রোগে আক্রান্ত ১৫ শতাংশ মানুষের দেহে ‘এপিওই৪’ রূপন্তরের দুটি কপি পাওয়া গেছে।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলঝেইমার রোগের গবেষক তারা স্পায়ার্স-জোন্স জানান, এই গবেষণায় এই জিনের দুটি কপি থাকা ব্যক্তিদের যথেষ্ট বয়স হলে এবং এই জিন না থাকা ব্যক্তিদের চেয়ে আগে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত। স্পায়ার্স-জোন্স এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না।

এদিকে বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক জুয়ান ফোর্টিয়া আরও কয়েকজন গবেষকের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আলঝেইমার সমন্বয় কেন্দ্র থেকে ৩,০০০ এরও বেশি মস্তিষ্ক এবং তিনটি দেশের ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তির জৈবিক ও ক্লিনিকাল ডেটা নিয়ে গবেষণা করছেন।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী