চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক কী কী গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে?
2024-05-17 18:03:44

মে ১৭: "প্রেসিডেন্ট পুতিন আমার সবচেয়ে কাছের বিদেশি সহকর্মী এবং আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।" ৫ বছর আগে রাশিয়ায় সফরের সময় দেওয়া সাক্ষাত্কারে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এমন কথা বলেছিলেন। এই বছরের ১৬ মে, বেইজিংয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করার সময় প্রেসিডেন্ট সি শুরুতেই বলেছেন: "প্রিয় রাষ্ট্রপতি পুতিন, আমার পুরানো বন্ধু, চীন সফরে স্বাগত জানাই।"

দু’নেতা ৪০ বারের বেশি বৈঠক করেছেন। এবারের বৈঠকের বৈশিষ্ট্য কি? কী কী সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং কী কী গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে?

১৬ মে বিকেলে, দুই রাষ্ট্রপ্রধান চীনের জাতীয় পারফর্মিং আর্টস কেন্দ্রে এসে "চীন-রাশিয়া সাংস্কৃতিক বর্ষের" উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের জন্য একটি বিশেষ কনসার্টে যোগ দেন ও বক্তৃতা দেন।

চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে এবারের বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হয়েছে। এ সময়টি চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। ৭৫ বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের সফল অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ করা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অভিন্ন স্বার্থজড়িত প্রধান আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে মতামত বিনিময় করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা করা হলো এবারের দুই রাষ্ট্রপ্রধান বৈঠকের উদ্দেশ্য।

অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্তসার হিসাবে প্রেসিডেন্ট সি ‘পাঁচটি অধ্যবসায়’ সম্পর্কে কথা বলেছেন। সেগুলো হলো- ভিত্তি হিসাবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, চালিকাশক্তি হিসাবে জয়-জয় সহযোগিতা, ভিত্তি হিসাবে সুদীর্ঘ বন্ধুত্ব, সমর্থন হিসাবে কৌশলগত সহযোগিতা এবং উদ্দেশ্য হিসাবে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার। ভবিষ্যতের মানচিত্র তৈরি করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, উন্নয়ন কৌশলগুলির সারিবদ্ধ করা উচিত, আরও জোরদার করার জন্য এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সমৃদ্ধ করার জন্য দু'পক্ষেরই কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকীকে একটি নতুন সূচনা হিসাবে নেওয়া উচিত।

এদিন দুই রাষ্ট্রপ্রধান যৌথভাবে "চীন ও রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে নতুন যুগে সার্বিক কৌশলগত সহযোগী অংশীদারি সম্পর্ক গভীরতর করার বিষয়ে যৌথ বিবৃতি” স্বাক্ষর করেন। বিবৃতিতে, উভয় পক্ষ জোর দিয়ে বলেছে যে, নতুন যুগে চীন-রাশিয়ার সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিকাশ দুটি দেশ ও জনগণের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়, অস্থায়ী ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয় না এবং তার  শক্তিশালী চালিকাশক্তি ও স্বতন্ত্র মূল্য রয়েছে।

উল্লেখ্য, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০১৯ সালে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ২৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা সময়সূচীর আগে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নির্ধারিত বাণিজ্যিক লক্ষ্য অতিক্রম করেছে।

১৭ তারিখে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অষ্টম চীন-রাশিয়া এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হারবিন যান। প্রেসিডেন্ট সি একবার বলেছিলেন যে চীন-রাশিয়া এক্সপোর মতো প্রদর্শনী প্ল্যাটফর্মের পূর্ণ ব্যবহার করা উচিত। মাটি জমে পাহাড় হয়ে যায়, জল জমে সাগরে পরিণত হয়। সর্বাত্মক বাস্তবসম্মত সহযোগিতা চীন-রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতার ভিত্তিকে আরও সুসংহত করবে।

আলোকিত সমস্যার রাজনৈতিক নিষ্পত্তি প্রচারের ক্ষেত্রে, দুই রাষ্ট্রপ্রধান ইউক্রেন সংকটের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন। প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেছেন যে, কোনো বড় সমস্যা মোকাবিলা করার সময় অবশ্যই লক্ষণ এবং মূল কারণ উভয়কেই বিবেচনা করতে হবে। চীন রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন যথাসময় আয়োজনে সমর্থন করে। যেখানে সব পক্ষের সমান অংশগ্রহণ এবং সব বিকল্প নিয়ে সুষ্ঠুভাবে আলোচনা করা যায়। যাতে ইউক্রেন সমস্যা সমাধানের জন্য  গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা যায়।

চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠক বিশ্বকে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে। তা হলো- নতুন ঐতিহাসিক সূচনায় দাঁড়িয়ে, চীন ও রাশিয়া সর্বদা তাদের মূল আকাঙ্ক্ষা মেনে চলবে এবং তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য একসাথে কাজ করবে, দুই দেশের আরো কল্যাণ করবে এবং বিশ্ব নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় যথাযথ অবদান রাখবে।

(স্বর্ণা/তৌহিদ/লিলি)