আকাশ ছুঁতে চাই ৭০
2024-05-16 14:28:28

 

১. বীর মায়েদের জয়গাঁথা

২. শিশুদের ফ্রান্স সফর

৩. মায়ের জন্য ব্যতিক্রমী উপহার: সবজির তোড়া

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে  স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

বীর মায়েদের জয়গাঁথা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো চীনের মে মাসের দ্বিতীয় রোববারে পালিত হয়েছে মা দিবস। এ উপলক্ষ্যে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে পালিত হয়েছে মায়েদের জন্য বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান। এর পাশাপাশি  মাকে উপহার দেয়া, মাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোসহ বিভিন্নভাবে দিবসটি পালন করেছে সন্তানরা। এ উপলক্ষ্যে চীনের বীর মাতা, দেশের জন্য আত্ম উৎসর্গকারী মায়েদের স্মরণ করা হয়েছে।

যুগে যুগে অনেক মা নিজের জীবন এবং নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, মানবতার জন্য। এমনি একজন নারী হ্য চিহোং। তিনি২০১০ সালে হাইতিতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করার সময় দায়িত্ব পালনে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। যখন মৃত্যু হয় তখন তার বয়স মাত্র ৩৫ বছর। তিনি তার ছোট্ট ছেলেকে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রিয় পুত্র ইয়ুন ইয়ুন, সবসময় মনে রেখো তোমার মা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে এবং নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহৎকাজ সম্পন্ন করছেন। ২০১৫ সালে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এই বীর নারী হ্য চিহোং এর কথা তুলে ধরেন। বর্তমানে হ্য চিহোং এর ছেলে সিনিয়র হাইস্কুলে পড়ছে। সে বলে, বড় হয়ে সে মায়ের মতো হতে চায় এবং যদি পরজন্ম বলে কিছু থাকে সেখানে সে হ্য চিহোংকেই আবার মা হিসেবে প্রত্যাশা করে। আগামি জন্মে সে মায়ের সঙ্গে আরও অনেক বছর কাটাতে চায়।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বিভিন্ন সময়ে দেশের জন্য মায়ের ভূমিকা এবং বীর নারীদের জীবন উৎসর্গের মহান আদর্শ তুলে ধরেছেন।

২০১৩ সালে শানতোং প্রদেশে সফরের সময় তিনি লিনই সিটি পরিদর্শন করেন। সেসময় তিনি ‘ইমেং শহরের বীর নারী’ নামে খ্যাত ওয়াং হুয়ানইয়ুর নাতনি ইয়ু আইমেই এর সঙ্গে দেখা করেন।

১৯৩৯ থেকে ১৯৪২ সালে চীনে জাপানি আগ্রাসনের সময় বীর মা ওয়াং হুয়ানইয়ু গণমুক্তিফৌজের যোদ্ধাদের ৪০ জনের বেশি শিশুর জীবন রক্ষার মহান দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৪৫টি শিশুকে দেখভাল করেন, তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। সকলের জন্য খাদ্য জোগাতে গিয়ে তার নিজের চারজন নাতি অপুষ্টিতে মারা যায়।

প্রেসিডেন্ট সি লিনই সিটির শহীদ বিপ্লবী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অসংখ্য নারীর, মা বোনের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাস তুলে ধরেন।

তিনি ২০১৪ সালে লুকোও সেতুর ঘটনায় বেইজিং এর বীর মা তং ইয়ুফেন এর স্মৃতিচারণ করেন। এই বীর মাতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানী আগ্রাসনের সময় স্বামী ও ছেলেদের উৎসর্গ করেন। শুধু তাই নয়, নিজেও তিনি বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের জন্য খাদ্য তৈরি করেছেন।

সি চিনপিংয়ের মা ছি সিন ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিস্ট কর্মী এবং বিপ্লবী। ছি সিনের জন্ম ১৯২৪ সালে। তিনি ১৯৩৯ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে সিপিসিতে যোগ দেন। তিনি তার পরিবার ও সন্তানের মধ্যে দৃঢ়ভাবে কমিউনিস্ট মূল্যবোধ সঞ্চারিত করেছেন। সি চিনপিংয়ের যখন মাত্র ছয় বছর বয়স তখন তার মা তাকে সং রাজবংশের বিখ্যাত দেশপ্রেমিক যোদ্ধা ইয়ুয়ে ফেইয়ের গল্প সংবলিত ছবির বই কিনে দেন। এই বীর যোদ্ধার দেশপ্রেমের মহান আদর্শ সি চিনপিংয়ের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

২০১৫ সালে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা জানানোর সময় থাং রাজবংশের মং চিয়াওর ‘সং অফ দ্য পার্টিং সান’ কবিতাটির কয়েকটি চরণ উল্লেখ করেছিলেন সি। তাতে ছিল পারিবারিক বন্ধনের ঐতিহ্য ও ইতিহাসের কথা।

সি বলেছেন, ‘চীনা জাতি প্রাচীনকাল থেকেই পরিবারকে মূল্যায়ন করে এবং পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ়ভাবে লালন করে আসছে।’

২০১৬ সালে, প্রেসিডেন্ট সি চীনজুড়ে জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং সামাজিক সম্প্রীতির ভিত্তি হিসেবে পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, পরিবার শুধু বসবাসের জায়গা নয়, এটি একটি জায়গা যেখানে মানুষের হৃদয়ও পড়ে থাকে।

প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, একটি দেশ ও জাতি তখনই ভালো করতে পারে যখন তার পরিবার ভালো থাকে।

চীনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে মায়ের স্থান অত্যন্ত উচুঁতে। মা দিবসকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, মাকে উপহার দেয়া, প্রয়াত মাকে স্মরণসহ বিভিন্নভাবে দিবসটি পালন করেছে চীনের জনগণ।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল

 

শিশুদের ফ্রান্স সফর

 

চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকীতে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক পর্যায়ে বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্যারিসে পাঁচদিনের সফরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় দর্শক মাতায়  চীনা শিশুদের একটি দল। এই শিশুদলের প্যারিস সফর নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে প্রতিবেদনে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সাম্প্রতিক ইউরোপ সফর এবং চীন ফ্রান্সের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬০তম বার্ষিকীতে দুইদেশের মধ্যে পিপল টু পিপল বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি প্যারিস সফর করে চীনা শিশুদের একটি দল। চীনের হাইনান প্রদেশের উচিশান সিটির একটি স্কুল শুইমান। এই স্কুলে লি এবং মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের একটি সাংস্কৃতিক দল প্যারিস সফরে আসে পাঁচদিনের জন্য। ফ্রান্সে এথনিক সংস্কৃতি তুলে ধরে ব্যাপক প্রশংসা পায় তারা। সেইসঙ্গে ফরাসি শিশুদের সঙ্গেও গড়ে ওঠে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব। শিশুরা বলে তারা বিদেশি শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরে দারুণ খুশি।

ফরাসি শিশুদের সাংস্কৃতিক দল প্যারিস পলিসনস কয়্যারের সঙ্গে একত্রে কনসার্টে অংশ নেয় চীনা শিশুরা।

ওয়াং রুহান নামে এক চীনা শিশু বলে এই সফরে সে অনেক কিছু শিখেছে এবং এই পরিবেশনা তাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: ফয়সল

 

মায়ের জন্য ব্যতিক্রমী উপহার: সবজির তোড়া

মা দিবসে সন্তানের পক্ষ থেকে মায়ের জন্য ছোট্ট একটি উপহার মায়ের কাছে পরিণত হতে পারে অমূল্য সম্পদে। যদিও মূল্যমানের দিক থেকে পৃথিবীর কোনো উপহারই মায়ের অবদানের সমতুল্য নয়, এরপরও ছোট্ট উপহার বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারে। এই চিন্তা থেকে মায়ের জন্য সবজি ব্যবহার করে তোড়া উপহার দিলেন চীনের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা । দোকান থেকে না কিনে নিজের হাতে উপহার বানানোর মধ্যে যে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটছে, তাই এখানে প্রধান। বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

মা দিবস মানেই দিনটি ঘিরে নানা আয়োজন সন্তানদের। নতুন কিছু উপহার দেওয়ার মধ্যেই যেন সবটকু আনন্দ খুঁজে পায় তারা।

কেউ দোকান থেকে কিনে কেউবা নিজ হাতে তৈরি করে দিতে আনন্দ পায়। চীনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও দেখা গেল শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তৈরি করেছে মায়ের জন্য উপহার।

মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের লাওহেখোউ শহরের পেইলিয়ান বিদ্যালয়। যেখানকার শিক্ষার্থীরা মায়ের জন্য উপহার তৈরিতে ব্যবহার করেছে, নিজ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই জন্মানো বিভিন্ন সবজি । আর এসব সবজি দিয়ে তোড়া বানিয়েছে তারা।

শিক্ষার্থীরা প্রথমে স্কুলের শ্রম শিক্ষা কেন্দ্রের বাগানে ফুটে থাকা চন্দ্রমল্লিকা, মরিচ এবং সবুজ পেঁয়াজ সংগ্রহ করে। শিক্ষকের পরামর্শে এসব দিয়ে তোড়া বানায় শিক্ষার্থীরা। 

স্কুলের শিক্ষক ওয়াং শুনথিং বলেন, “এই সবজিগুলো বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা রোপণ করেছিল। মা দিবসে, আমরা শিশুদেরকে নিজের পরিশ্রমে উপহার বানাতে উৎসাহিত করেছি যাতে করে তারা উপহার দেওয়ার সময় ভালবাসা অনুভব করতে এবং ভালোবাসা প্রকাশ করা শিখতে পারে”। 

মাঠ থেকে সবজি সংগ্রহ করে শ্রেণীকক্ষে নিয়ে প্রথমে বাছাই, এরপর শিক্ষকদের নির্দেশে বাঁশের লাঠি, কাগজের মোড়ক এবং কাঁচি দিয়ে মনের মতো করে তোড়া বানায়।

মায়ের জন্য তোড়া বানিয়ে ইয়াং ওয়েইবো নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, "আমার মা মাশরুম পছন্দ করেন, তাই এই তোড়া বানাতে মাশরুম ব্যবহার করেছি। আমার মা এটা খুব পছন্দ করবে”।

আরেক শিক্ষার্থী চেন চিয়াই জানায়, "আমার মা সবসময় ব্যস্ত থাকেন। তাই তার যত্ন নেওয়া এবং কাজগুলো করে দেওয়া আমার কর্তব্য। আমি এই সবজির তোড়ার মাধ্যমে আমার মাকে একটি বার্তা দিতে চাই যে, আমি বড় হয়েছি এবং এখন অনেক কিছু করতে পারি"।

এই ছোট্ট প্রয়াসে হয়তো মায়ের ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়, তবে অবাক বনে যাওয়া মায়ের মুখে যে হাসিটা ফুটে উঠেছে তা যে কোনো সন্তানের জন্যই সারা জীবনের পাথেয়।

 

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন ।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ