বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে যোগদানে তাইওয়ানের ব্যর্থতা ও প্রসঙ্গকথা
2024-05-15 14:24:18

মে ১৫: ৭৭তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন (ডাবলিউএইচও)-র নিবন্ধন-প্রক্রিয়া ১৩ মে শেষ হয়েছে। প্রত্যাশিতভাবেই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করে চীনের তাইওয়ানের ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তাদের এ অপচেষ্ট যথারীতি আবারও ব্যর্থ হয়। এতে আবারও সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত হয়েছে যে, ‘এক-চীন নীতি’-র প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সমাজে দৃঢ় ঐকমত্য রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে তাইওয়ানের অংশগ্রহণকে সমর্থন করার যতই চেষ্টা করুক না কেন, ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি যতই কঠোর চেষ্টা করুক না কেন, এই প্রচেষ্টা বরাবরই একটি প্রহসন হিসেবে আন্তর্জাতিক সমাজে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষ এখনও জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াসে তথাকথিত ‘মহামারীর সতর্কতার ব্যবস্থার ফাঁক’-সহ নানান অজুহাত দেখাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে: তাইওয়ান কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণের যোগ্য? কেন একের পর এক মার্কিন-তাইওয়ান জোটের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ প্রহসন শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে?

প্রথমত, চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি ছাড়া তাইওয়ানের ডাবলিউএইচও’র সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কোনো মর্যাদা বা অধিকার নেই। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাব এবং ডাবলিউএইচও-এর ২৫.১ নম্বর প্রস্তাবের মৌলিক নীতি অনুসারে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারই একমাত্র আইনি সরকার, যা সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং জাতিসংঘ ব্যবস্থার মধ্যে সম্পূর্ণ সার্বভৌম অধিকার ভোগ করে। চীনের একটি প্রদেশ হিসাবে, ডব্লিউএইচও-র প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তাইওয়ানের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও ‘এক-চীন নীতি’ অনুসরণ করতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত, তাইওয়ান অঞ্চল ‘চীনের তাইপেই’ নামে পর্যবেক্ষক হিসেবে ডব্লিউএইচও’র সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিল, যা ছিল তাইওয়ান প্রণালীর দু’তীরের ‘১৯৯২ সালের সম্মতির’ ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত এক বিশেষ ব্যবস্থা। তা ছিল তাইওয়ানের প্রতি চীনের মূল ভূখণ্ডের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।

২০১৬ সালের পর থেকে, ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষ ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ ধারণার নামে বিচ্ছিন্নতাবাদের পথ অনুসরণ করছে এবং ‘১৯৯২ সালের সম্মতির’ দৃঢ় বিরোধিতা করে ডব্লিউএইচও-তে তাইওয়ানের অংশগ্রহণের রাজনৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে, দু’তীরের পারস্পরিক আস্থা ও আলোচনার সঠিক পথ এড়িয়ে বিদেশের ‘সাহায্য ভিক্ষা করার’ মন্দ পথেও যাত্রা করেছে। ‘এক-চীন নীতি’র প্রতি চ্যালেঞ্জের কারণে, এটা অবশ্যম্ভাবী যে, টানা আট বছর ধরে ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষ ডব্লিউএইচও-তে অংশ নিতে ব্যর্থ হয়। বস্তুত, এটা সম্ভব হয়েছে একটি শক্ত আন্তর্জাতিক আইনি ভিত্তির কারণে।

দ্বিতীয়ত, তাইওয়ানকে ডব্লিউএইচও-তে অংশগ্রহণের অনুমতি না-দিলে ‘আন্তর্জাতিক মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থায় একটি ফাঁক’ সৃষ্টি করবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর। চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় তীরের স্বদেশীরা একটি পরিবারের অংশ। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজে তাইওয়ানের অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর তাইওয়ান থেকে মোট ২১ দফায় ২৪ জন ডব্লিউএইচও’র প্রযুক্তিগত কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকার সকল আবেদন অনুমোদন করে। তাইওয়ান অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধান যোগাযোগকেন্দ্র রয়েছে, যেটি সময়মতো ডব্লিউএইচও-কে রিপোর্ট করতে পারে। এতে দেখা যায় যে, বিদ্যমান ডব্লিউএইচও এবং দু’তীরের অবকাঠামোয় মহামারীর বিরুদ্ধে তাইওয়ানের বহুমুখী যোগাযোগ এবং অবহিত করার চ্যানেলগুলো মসৃণ এবং ব্যবস্থা সম্পূর্ণ, তাইওয়ানবাসীদের স্বাস্থ্য অধিকার সম্পূর্ণরূপে সুনিশ্চিত হয়েছে।

তৃতীয়ত, যে-কারণে যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ডব্লিউএইচও-তে তাইওয়ানের অংশগ্রহণকে সমর্থন করে আসছে, তা আসলে তাইওয়ানকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করার অপকৌশল মাত্র। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র যতই গণ্ডগোল পাকাক এবং ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি কর্তৃপক্ষ যতই জনমত গঠনের চেষ্টা করুক না কেন, তাইওয়ানের পক্ষে ডব্লিউএইচও-তে যোগ দেওয়া অসম্ভব। ‘ডব্লিউএইচওয়ের সম্মেলনে তাইওয়ানকে সমর্থন করা’-র বিষয়টি এখন একটি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। (লিলি/আলিম/রুবি)