‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
৭০ তম পর্বে যা যা থাকছে:
১. মহাকাশ গবেষণায় চীনা তরুণদের অনুপ্রেরণা সি চিনপিং
২. তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য চীনে ক্যাম্পিং সাইট জব ফেয়ার
৩. ঐতিহ্যবাহী চীনা খেলায় আকর্ষণ বাড়ছে তরুণদের
১. মহাকাশ গবেষণায় চীনা তরুণদের অনুপ্রেরণা সি চিনপিং
মহাকাশ অনুসন্ধান ও গবেষণায় দারুণ গতিতে এগিয়ে চলছে চীন। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের দূরদৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার অনুপ্রেরণাতেই চীনের এ প্রচেষ্টায় মেরুদণ্ড হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন দেশটির তরুণরা।
চীনের মহাকাশ প্রকল্পে বেশ বড় সমর্থন আছে প্রেসিডেন্ট সি’র। গত কয়েক বছর ধরে, চীনের মহাকাশ শিল্পের উন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান সি চিনপিং তার শৈশবের পাঠশালা বেইজিং বায়ি স্কুল পরিদর্শন করেছিলেন।
ওই সফরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি দারুণ আবেগ দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন সি।
ওই সময় চু সুন নামের এক তরুণ প্রেসিডেন্ট সি’কে তাদের নকশা করা একটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই চু সুন এখন সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকৌশল বিভাগের ডক্টরেট প্রার্থী। চু বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সি’র সঙ্গে কথোপকথনের কথা তার এখনও মনে পড়ে এবং স্বপ্ন পূরণের এ যাত্রায় তার অনুপ্রেরণায় রয়েছেন সি চিনপিং। তিনি আরও বলেন—
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরাই ওই মডেল স্যাটেলাইট ডিজাইন করেছিলাম। সিনিয়র হাইস্কুল ছাত্রদের প্রথম ব্যাচের একজন হিসেবে ওই প্রকল্পে অংশ নেওয়াটা বড় সম্মানের ছিল। অভিজ্ঞতাটি সত্যিই অবিশ্বাস্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।
চু ও তার সহপাঠীরা সি’কে তাদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা জানিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর, চিঠির উত্তরে সি বলেছিলেন, তিনি ছাত্রদের ডিজাইন করা স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে জেনে খুব খুশি হয়েছেন এবং দেশের স্তম্ভের ভূমিকায় নামার আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
ছোট সেই স্যাটেলাইটটি ছিল চীনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের দ্বারা ডিজাইন করা প্রথম স্যাটেলাইট যা তাইইয়ুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এবং ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর এটি কক্ষপথে পৌঁছেছিল।
নিজেদের তৈরি স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠানো নিয়ে চু বললেন, ‘যখন উপগ্রহটি শেষ পর্যন্ত মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, তখন আমার মনে হয়েছিল আমার মহাকাশ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের বায়ি স্কুল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানের আগ্রহকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
স্কুলটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষক ফু ইউয়েমিং জানালেন, অ্যারোস্পেস পাঠ্যক্রমে, তাদের মূল ফোকাস হলো শিক্ষার্থীদের মহাকাশ সংক্রান্ত পেশার সূক্ষ্ম সব কাজের ওপর গভীর উপলব্ধি প্রদান করা।
২০২২ সালের মে মাসে, চীন মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্পোরেশনে মহাকাশ স্টেশন নির্মাণে কর্মরত একটি তরুণ গবেষক দলের চিঠির জবাব দিয়েছিলেস সি। তার সেই চিঠিও মহাকাশ খাতে নিযুক্ত তরুণ প্রাণগুলোকে উদ্দীপিত করেছিল।
২০১৯ সালে মে ফোর্থ আন্দোলনের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে একটি বক্তৃতায় চীনের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছিলেন চীনের চন্দ্রাভিযান ছাং-এ’র মিশন দল এবং শেনচৌ মিশন দলের গড় বয়স ছিল ৩৩ বছর।
২০১৩ সালের ২৪ জুন বেইজিং অ্যারোস্পেস কন্ট্রোল সেন্টারে কক্ষপথে থাকা মহাকাশ মডিউল থিয়াংকং-১ থাকা তিন শেনচৌ-১০ মহাকাশচারীর সঙ্গে ভিডিও কলেও কথা বলেছিলেন সি। তখন তিনি বলেছিলেন, মহাকাশ কর্মসূচির বিকাশের সঙ্গে চীনা জনগণ মহাকাশে আরও বড় আকারে অনুসন্ধান চালানোর পদক্ষেপ নেবে।
চীনের মহাকাশ অনুসন্ধান যত এগোচ্ছে তত দেশটির তরুণরা ঝুঁকছেন এ বিষয়ে। চাঁদ থেকে শুরু করে মঙ্গল গ্রহ এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের দায়িত্ব এখন তারাই নিচ্ছে।
প্রতিবেদক : ফয়সল আবদুল্লাহ
২. তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য চীনে ক্যাম্পিং সাইট জব ফেয়ার
সম্প্রতি দক্ষিণ চীনের কুয়াংচৌ শহরে একটি তৃণভূমি ক্যাম্পিং সাইট চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়। তরুণ চাকরিপ্রার্থী এবং নিয়োগকর্তাদের জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে এমন আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
তৃণভূমি ক্যাম্পিং সাইট চাকরি মেলাটি কুয়াংচৌ ইউনিভার্সিটি টাউনের তৃণভূমিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩৫টি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় দু’হাজার চাকরির প্রস্তাব দেয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বেশ আকর্ষণ করে।
প্রস্তাবিত শূন্য পদগুলো উত্পাদন শিল্প, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক পর্যটনের মতো খাতগুলোকে কভার করে।
আয়োজকরা জানান, এই ইভেন্ট তরুণ চাকরিপ্রার্থী এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াকে আরও গভীর করেছে।
"জেড জেনারেশনের গ্র্যাজুয়েটদের জন্য, এই চাকরি মেলা একেবারেই নতুন কিছু। সমস্ত সেটিংস প্রকৃতির মাধ্যমে বেষ্টিত এবং এটি আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করায়।’
ঘটনাস্থলে চাকরিপ্রার্থীদের প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। চাকরিপ্রার্থীদের দলগুলো প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার পরে তারা সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে গভীরভাবে যোগাযোগ করার সুযোগ পেতে পারে বলে জানান নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা।
"প্রতিযোগিতাটি আমাদেরকে শিক্ষার্থীরা কীভাবে এটিকে বিশদভাবে পরিচালনা করে তা পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করেছে। প্রায় দুই থেকে তিন মিনিটের জন্য বসে বসে কথা বলার তুলনায়, প্রতিযোগিতা আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও ভালভাবে জানতে সাহায্য করে।"
ক্যাম্পিং সাইটে, চাকরি প্রার্থীদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এবং এক কাপ কফি পান করার জন্য কিছু তাবু স্থাপন করা হয়, যেখানে তারা জীবনবৃত্তান্ত লেখার বিষয়ে পেশাদার পরামর্শ চাইতে পারে।
প্রতিবেদক : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. ঐতিহ্যবাহী চীনা খেলায় আকর্ষণ বাড়ছে তরুণদের
চান ইয়ুং একজন গো খেলোয়াড় হিসেবে অনেক তরুণ-তরুণীর আইডল হয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ বোর্ড গেমের প্রতি তরুণদের আকর্ষণ বাড়াতেও কাজ করছেন তিনি। শৈশব থেকেই চান ইয়ুং গো অনুশীলন শুরু করেছিলেন। ঐতিহ্যবাহী বোর্ড গেমটি প্রথম চালু হয় চীনে।
"আনুমানিক ছয় বছর বয়সে আমি গো খেলা শুরু করি। দুই বছর পর যখন আমার বয়স আট বছর তখন আমার শিক্ষক আমাকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি ভালো খেলোয়াড় হতে পারবো"
১০ বছর বয়সে স্কুল ছাড়তে হয় চান ইয়ুংকে। তবে বসে না থেকে পেশাদার গো প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন । এরপর থেকেই তার জীবনটা যেন সাদা-কালো ও জয়-পরাজয়ের আবহেই ঢাকা পড়ে।
"কীভাবে আমি গো খেলায় জিততে পারবো তা নিয়ে অনেক চাপ এবং উদ্বেগ অনুভব করতাম । শুধু ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির কথা বললেই হবে না, আমি যদি খেলায় জিততে না পারতাম তাহলে কিন্তু চাকরি পেতাম না।’
চীনে প্রায় ৩০০ নিবন্ধিত নারী গো খেলোয়াড় রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হওয়ার জন্য আট বছর প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন চান। কিন্তু পেশাদার খেলার পথ সংকীর্ণ হওয়ায় তিনি এক বছর পর ছেড়ে দেন কারণ বেশিরভাগ প্রো খেলায় তিনি হেরে যাচ্ছিলেন।
হাল না ছেড়ে চান বেছে নেন ভিন্ন এক পথ। অনলাইনে গো খেলা শেখানো শুরু করেন তিনি। কিন্তু তার লাইভ স্ট্রিমিং-এর একটি ভিডিও ভাইরাল হলে প্রায় ভেঙেই পড়েন চান। কারণ ওই ভিডিও দেখে নেটিজেনরা উপহাসই করেছিল বেশি। মোড় ঘুরে যায় এর পরই। কিছু মানুষ চান ইয়ুংয়ের এই হাল না ছাড়া মনোভাবের প্রতি জানাতে শুরু করে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহানুভূতি। এতে উৎসাহ পেয়ে দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ শুরু করেন চান।
‘আমি জানতাম চান ইয়ুং আট বছর ধরে একজন পেশাদার খেলোয়াড়। শত চেষ্টার পরও হাল ছাড়েননি। আমি তার অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম। ফলে আমি গো সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে ও শিখতে শুরু করেছি। এটি এখন আমার শখে পরিণত হয়েছে।’
চান এখন একজন গো ধারাভাষ্যকার। বলতে গেলে চীনা গো খেলার অ্যাম্বাসেডর হয়ে গেছেন তিনি। তার কারণেই ঐতিহ্যবাহী এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে তরুণরা। তার প্রভাবও বাড়ছে দিন দিন। গো খেলার প্রতি চীনাদের এই বাড়ন্ত আগ্রহ দেখে বেশ খুশি চান ইয়ুং। তিনি বিশ্বাস করেন চীনের ঐতিহ্যবাহী খেলার প্রতি সবার ভালোবাসা এমনই থাকবে।
প্রতিবেদক : রফিক বিপুল
সম্পাদক: ফয়সল আবদুল্লাহ
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই। পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। শুভকামনা সবার জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী