দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু শহরে চলছে ‘ইন্টারন্যাশনাল হর্টিকালচারাল এক্সিবিশন’ বা ‘আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনী, ২০২৪’। ২৬ এপ্রিল শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে সারা বিশ্ব থেকে আসা বিশেষ ফুল, গাছপালা ও উদ্যান-পণ্য।
আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনী হল বাগান ও উদ্যান-শিল্পসংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ স্তরের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। তাই, একে ‘আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনীর অলিম্পিক’-ও বলা যেতে পারে। ২০১৯ সালে বেইজিংয়ের ইয়েনপোইয়েনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ফুল, ঘাস, ও গাছপালার প্রায় সবই এখনও আগের মতোই আছে।
চলতি বছরের প্রদর্শনীর মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে: সবুজ, কম কার্বন, টেকসই সংরক্ষণ, ভাগাভাগি, ও অন্তর্ভুক্তি। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনীর জন্য এবারই প্রথম ‘কম কার্বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রী থেকে শুরু করে শক্তি সরবরাহ পর্যন্ত, ২২টি লিঙ্কে শূন্য-কার্বন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রদর্শনীর মূল ভেন্যু ছেংতু শহরের চিয়াংসি নদীর সবুজ করিডোরের মাঝখানে অবস্থিত। এর আয়তন ৩৬৩৩ একর। প্রদর্শনীতে পাহাড়, হ্রদ, গাছপালা, জলপ্রপাতের সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রদর্শনীর মূল ভেন্যু-তে প্রবেশের সময় তিনটি বড় হিবিস্কাস পাপড়ি দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির উচ্চতা ১৬ মিটার। আসলে, এই পাপড়িগুলো বৃষ্টির জল সংগ্রহকারী। বৃষ্টির জল পাপড়ির কেন্দ্রে সংগ্রহ করা হয়, তারপর পাইপের মাধ্যমে বৃষ্টির জল পরিস্রাবণ ও সঞ্চয়ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো হয়। এভাবে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার ৫ শত টন বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা যাবে। প্রদর্শনীস্থলের ২ হেক্টর সবুজ জায়গার দৈনিক পানির চাহিদা মেটানো যাবে এ জল দিয়ে।
প্রদর্শনীতে অনেক ‘সবুজ জাদু’র দেখা পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, মূল ভেন্যুতে প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল ও আলোর পূর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। গরমের সময় ছায়া এবং শীতের সময় তাপ সংগ্রহের বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। প্রদর্শনীতে একটি সম্পূর্ণ স্পঞ্জ সিস্টেম রয়েছে, যা বৃষ্টির পানি শোষণ, সঞ্চয়, ও বিশুদ্ধ করে। পাশাপাশি, প্রদর্শনীতে সনাতন কেন্দ্রীয় এয়ার কন্ডিশনারের পরিবর্তিতে, বিকেন্দ্রীকৃত এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়েছে।
৬ বছর আগে সি চিন পিং ‘পরিবেশগত সভ্যতা’র ধারণা উপস্থাপন করেন। সবুজ উন্নয়নের জন্য মানবজাতি ও প্রকৃতির সুষম সহাবস্থান এবং প্রকৃতিকে সম্মান করা, প্রকৃতির অনুসরণ করা ও প্রকৃতিকে রক্ষা করার পরিবেশগত সভ্যতার ধারণা বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৯ সালে চীনের খুনমিং শহরে প্রথম আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনী থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের বেইজিং প্রদর্শনী এবং চলতি বছরের ছেংতু প্রদর্শনী পর্যন্ত, সবুজ, কম-কার্বন, টেকসই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। ছেংতু আন্তর্জাতিক উদ্যান প্রদর্শনী আসলে সারা বিশ্বের জন্য পরিবেশগত সভ্যতার ধারণা বাস্তবায়নের সুফলের প্রদর্শনী। (অনুপমা/আলিম/ছাই)