এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। তিব্বতীয় ঐতিহ্যের তাৎপর্য বহনকারী চীনের সবচেয়ে বড় তিকে সূত্রা ছাপাখানা
২। ঘুরে আসুন ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে
৩। শহুরে জীবনে একটু খানি প্রশান্তি এনে দেয় সিছুয়ানের বাঁশের বন
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৭০তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। তিব্বতীয় ঐতিহ্যের তাৎপর্য বহনকারী চীনের সবচেয়ে বড় তিকে সূত্রা ছাপাখানা
তিনশতক ধরে বছরের পর বছর কারিগরি শিল্পীরা লালন করে আসছেন তিব্বতীয় সংস্কৃতি। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশের গার্চে তিব্বতি জাতির স্বায়ত্তশাসিত দেগে শহরে অবস্থিত সূত্রা ছাপাখানাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৭২৯ সালে।
দিন যত যেতে থাকে সংস্কার হতে থাকে ছাপাখানাটি। কয়েক দফা পরিবর্ধনের পর তিনতলা ভবনটি এখন ধর্মগ্রন্থ মুদ্রণে তিব্বতীয় ঐতিহ্যের আধার। এটি ইউনেস্কোর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ য়ে স্থান করে নিয়েছে।
১০০ ক্যালিগ্রাফ শিল্পী ও ৫০০ কারিগর পাঁচ বছর ধরে চীনা বৌদ্ধ ধর্মগ্রস্থের মূল কাঙ্গিউরের মুদ্রন প্লেট খোদাই করে। দুই লাখ সত্তর হাজার ব্লকে খোদাই করে সংরক্ষণ করা হয়েছে তিব্বতীয় ও সংস্কৃত ধর্ম, ইতিহাস, সাহিত্য, শিল্প, পাটিগনিত,জ্যোর্তিবিদ্যাকে ।
কারিগররা নিজেরাই ছাপার কালি ও কাগজ তৈরি করে সেগুলোকে বইয়ে মুদ্রন করে। ধর্মগ্রন্থ তৈরির প্রধান উপকরণ কাঠের ব্লকগুলো ঘন শক্ত ভূর্জ গাছের তৈরি। ছাপাখানার এই সূক্ষ মুদ্রন প্লেটগুলি তিব্বতীয় ঐতিহ্যকে অবিকল ভাবে ধারণ করে চলেছে বছরের পর বছর। আর এই মুদ্রণগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থকে ঘুরতে আসেন পর্যটকরা।
তিব্বতীয় সংস্কৃতির বিস্তারে শিক্ষা-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে যুব সমাজের কাছে তুলে ধরতে অবদান রাখছে এই ছাপাখানা। পাশাপাশি বিদেশি বিনিময় ও সহযোগিতা মূলক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদন- শাহানশাহ রাসেল
সম্পাদনা- আফরিন মিম
২। ঘুরে আসুন ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে
চীনের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়। কুনমিং শহরে এর দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। দুটি ক্যাম্পাসই পর্যটন স্থান হিসেবেও বিখ্যাত। কুনমিং শহরে যে বাঙালিরা বসবাস করেন তারা এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেড়াতে যেতে পারেন।
ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পুরনো ক্যাম্পাসটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে সুইহু লেক বা গ্রিনলেকের কাছে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ইয়ুনতা নামে বেশি পরিচিত।
ইউননান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ক্যাম্পাস বা তংলু ক্যাম্পাস এবং ছংকুং এ অবস্থিত নতুন ক্যাম্পাস দুটোই পর্যটন স্থান হিসেবে জনপ্রিয়। তংলু ক্যাম্পাসে অনেকে আসেন এখানকার প্রাচীন গিংকো গাছগুলো দেখার জন্য। এখানে একটি দীর্ঘ হাঁটা পথ রয়েছে। শরৎকালে বা ফল সিজনে পুরো হাঁটাপথটি গিংকো গাছের সোনালি পাতায় অনন্য সুন্দর হয়ে ওঠে। এখানে ঝরা পাতার দৃশ্য আলোকচিত্রীদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে। গ্রীষ্মকালে গিংকো গাছের সবুজ ছায়া এবং চেরি ও প্লাম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসেন অনেকে।
তংলু ক্যাম্পাস একটি ছোট টিলার উপর অবস্থিত। কাছেই বিখ্যাত গ্রিন লেক পার্ক। এখানে শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা উড়ে আসে। সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা পাখিরা তংলু ক্যাম্পাসেও আসে। পুরো ক্যাম্পাস এলাকার আয়তন ৪ লাখ ২৬ হাজার ৬শ ৬৯ বর্গ মিটার। এখানকার বিজ্ঞানভবন, গ্রন্থাগার ভবন এবং শিক্ষাভবন দৃষ্টিনন্দন নির্মাণ শৈলীর জন্য বিখ্যাত।
তংলু ক্যাম্পাসে প্রচুর কাঠবিড়ালি রয়েছে। এখানে বাদাম গাছে কাঠবিড়ালির বাসা আছে। শিক্ষার্থীরা কাঠবিড়ালিকে খাবার দেয়। কাঠবিড়ালির খেলা দেখতে এই ক্যাম্পাসে অনেকে আসেন।
ইয়ুননান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস কুনমিংয়ের প্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয় টাউন নামে পরিচিত ছংকুং এলাকায় অবস্থিত। এই ক্যাম্পাসটি বিশাল বড়। এখানে পাহাড়, লেক, অরণ্য এবং গোলাপ ও ল্যাভেন্ডার ফুলের বাগান রয়েছে।
এখানে পাহাড়ের উপর থেকে কুনমিংয়ের বিখ্যাত তিয়ানশি লেক এবং সিশান পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়। ছংকুং ক্যাম্পাসে জাকারান্দা, চেরি ও প্লাম ফুলের শোভা বিখ্যাত। এখানে ল্যাভেন্ডার ফুলের বড় বাগানের পাশে হাঁটাপথ পর্যটকদের কাছে খুব প্রিয়।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। শহুরে জীবনে একটু খানি প্রশান্তি এনে দেয় সিছুয়ানের বাঁশের বন
কর্মজীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃতির কোলে শান্তি খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি আর কিছুই নেই। প্রকৃতির সান্নিধ্য মনকে পরিশুদ্ধ করে, শরীর ও আত্মাকে করে পরিপূর্ণ। আর তাই প্রতি বছর অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায় চীনের সিচুয়ান প্রদেশের বিখ্যাত বাঁশ বনে।
ইট পাথরের জঞ্জাল থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার অসাধারণ সুযোগ করে দেয় এই বন। ১২০ বর্গকিলোমিটারের বিশাল এই বাঁশের সমুদ্রটি চীনের বৃহত্তম প্রাচীন বাঁশের পার্ক। শীতকালে এর গড় তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়।
দেশটির সবচেয়ে সুন্দর ১০টি বনের মধ্যে একটি এই বাঁশ বন। ২০০১ সালে অস্কার-বিজয়ী চলচ্চিত্র "ক্রাউচিং টাইগার হিডেন ড্রাগন" এর দৃশ্য এখানে শুটিং করা হয়েছিল। এরপর থেকে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
এর ঠিক দুই বছর পরে ২০০৩ সালে একটি বিশ্ব-মানের বাঁশ সংরক্ষণাগার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। একই সময়ে বাঁশের বনটি একটি ইকোট্যুর রেটিং পায়। বর্তমানে এটি চীনের চতুর্থ জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য, যাকে গ্রিন গ্লোব ২১ সার্টিফিকেশন দেওয়া হয়েছে।
সিছুয়ানের ইয়িবিনের ছাংনিং এবং চিয়াংআন কাউন্টি জুড়ে এই বাঁশের সমুদ্র বিস্তৃত। এর বিশাল বিস্তার দেখে বিস্মিত হয়ে সং রাজবংশের (৯৬০-১২৭৯) কবি হুয়াং থিংচিয়ান এটিকে ‘বাঁশের ঢেউ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
সিচুয়ানের বাঁশ বন শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ। ব্যস্ত জীবনের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃতির কোলে শান্তি ও নবজীবন লাভের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
প্রতিবেদন- শুভ আনোয়ার
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী