বিজ্ঞানবিশ্ব ৭০তম পর্ব
2024-05-13 15:29:03

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

৭০তম পর্বে যা থাকছে:

 

* কার্বন ক্যাপচার সিস্টেম নিয়ে আসলো চীন

* গ্যাস-সমৃদ্ধ দূরবর্তী একাধিক গ্যালাক্সি খুঁজে পেল চীনা টেলিস্কোপ

 

* তরল হাইড্রোজেন জ্বালানী ব্যবস্থা উদ্ভাবন করলো চীন।

 

কার্বন ক্যাপচার সিস্টেম নিয়ে আসলো চীন

বিশ্বে প্রথমবারের মতো নিঃসৃত কার্বনকে ধরে রাখার ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে চীন। এ পক্রিয়ায় শুধু যে নিঃসৃত কার্বনকে ধরে রাখা হবে এমনটি, সেই কার্বনকে একটি ট্যাঙ্ক বা চেম্বারের মধ্যে জমা করেও রাখা হবে।

ইতোমধ্যেই কার্বন ক্যাপচার এ সিস্টেম কার্গো জাহাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সিস্টেমের আওতায় জাহাজের ধোঁয়া থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ক্যাপচার এবং স্টোর করা হবে, যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

চায়না স্টেট শিপ বিল্ডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিইয়াও এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এ ব্যবস্থাটি উদ্ভাবন করেছে।

গবেষকরা এর নাম দিয়েছে অনবোর্ড কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ সিস্টেম (ওসিসিএস)। সিস্টেমটি জৈব অ্যামাইন ব্যবহার করে কাজ করে। জৈব অ্যামাইন এমন এক ধরনের যৌগ যা গ্রীণহাউস গ্যাসের সংস্পর্শে আসলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করে, ফলে ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ বিশুদ্ধতা পাওয়া যায়।

এ ব্যস্থার সবচেয়ে ভালোদিক হলো এই প্রক্রিয়াটি বিপরীতমুখী। রাসায়নিক বন্ধন তৈরির পর প্রাপ্ত কার্বনকে পুনর্ব্যবহার করা যায়, যেমন নির্মাণ সামগ্রীতে।

চায়না স্টেট শিপ বিল্ডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিইয়াও এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশনের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী লি খে জানান, এ প্রক্রিয়ায় এমন একটি বিশেষায়িত রাসায়নিক শোষক গ্রহণ করা হযেছে, যা নিঃসৃত কার্বনকে বেছে বেছে শোষণ করে। এরপর সেটিকে সিল, পুনর্ব্যবহার এবং পুনঃ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। এই সিস্টেমটি শিপিং শিল্পে গ্রীণহাউস গ্যাস নিঃসরণের সমস্যা সমাধানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, অনবোর্ড কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ সিস্টেম (ওসিসিএস) গড়ে ৮০ শতাংশ কার্ন গ্রহণের হার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৪ টন কার্বন ধরে রাখতে সক্ষম। এর মানে হল যে এই সিস্টেমটি  জাহাজগুলোর প্রথাগত জ্বালানী ব্যবহার করেও কম গ্রীণহাউস গ্যাস নিঃসরণ অর্জন করতে পারে।

জাহাজের মালিকরা যাতে সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারেন এ লক্ষ্যে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

গ্যাস-সমৃদ্ধ দূরবর্তী একাধিক গ্যালাক্সি খুঁজে পেল চীনা টেলিস্কোপ

 

মহাবিশ্বের আকর্ষণীয় এবং রহস্যময় ঘটনাকে পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম একক-অ্যাপারচার রেডিও টেলিস্কোপ ফাস্ট।

 

সম্প্রতি এর সাহায্যে মহাকাশে বিপুল পরিমাণে গ্যাস-সমৃদ্ধ একাধিক গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা, যা মহাবিশ্বের প্রাথমিক পর্যায়ে গঠিত হয়েছিল। এই গ্যালাক্সিগুলো কীভাবে গঠিত হয়েছিল এবং সাথে সাথে কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে তা আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

 

 

গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হয়েছে।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিগুলো থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গ পৌঁছাতে যতটা সময় লেগেছে, আমাদের সৌরজগতের বয়সও প্রায় ততটা। এর আগে চীনের অন্যান্য শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপে খুঁজে পাওয়া সহস্রাধিক গ্যালাক্সিতেও নতুন গ্যালাক্সিটির মতো পারমাণবিক হাইড্রোজেন গ্যাস শনাক্ত করা গেছে।

 

চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির বিজ্ঞানী ও গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক সি হোংওয়েই। তিনি ও তার অস্ট্রেলীয়, মার্কিন ও রুশ সহকর্মীদের সঙ্গে গবেষণায় ছয়টি নতুন হাই-রেড-শিফ্ট গ্যালাক্সির বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছেন।

 

নতুন আবিষ্কৃত এ দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো মহাবিশ্বে শীতল গ্যাসের বিবর্তন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানারা সুযোগ দেবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

 

হাইড্রোজেন মহাবিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ উপাদান। এর নিরপেক্ষ আকারে, এটি মিল্কিওয়ের মতো ছায়াপথগুলোতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।

 

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের বিজ্ঞানী পেং বো জানান, অনেকটা অন্ধের মতোই হাইড্রোজেন অনুসন্ধান চালিয়েছেন তারা। অর্থাৎ ফাস্ট আল্ট্রা-ডিপ সার্ভে চালিয়েছেন। সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলো চীনের তৈরি বিশ্বের বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ ফাস্টের অসাধারণ সংবেদনশীলতারই প্রমাণ।

 

পেং আরও জানান, ফাস্টের জরিপে এখন পর্যন্ত ৫০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ১০০টিরও বেশি নতুন গ্যালাক্সি আবিষ্কৃত হয়েছে। আরও এক হাজার গ্যালাক্সি আবিষ্কারের আশা করছেন তারা।

 

গবেষকরা জানালেন, ৪০০ কোটি বছর আগের গ্যালাক্সিগুলোতে এখনকার গ্যালাক্সিগুলোর চেয়েও বেশি নক্ষত্র-গঠনকারী গ্যাস ছিল এবং সদ্য আবিষ্কৃত পুরনো গ্যালাক্সিগুলোর প্রতিটিতে মিল্কিওয়ের চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি নক্ষত্র রয়েছে, এবং হাইড্রোজেন গ্যাস আছে ১০ গুণেরও বেশি।

 

চীনের ফাস্ট হলো বিশ্বের বৃহত্তম একক-ডিশ রেডিও টেলিস্কোপ, যা ৩০টি ফুটবল মাঠের সমান। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ এটি বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

 

|| প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ

|| সম্পাদনা:  শুভ আনোয়ার

 

তরল হাইড্রোজেন জ্বালানী ব্যবস্থা উদ্ভাবন করলো চীন

বিশ্বে হাইড্রোজেন-চালিত যানবাহনের বিকাশে অগ্রগামী দেশে পরিণত হয়েছে চীন। দেশটিতে বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম হাইড্রোজেন ফুয়েলিং স্টেশন নেটওয়ার্ক রয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে ১ মিলিয়ন হাইড্রোজেন-চালিত যানবাহন রাস্তায় চালানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে দেশটি।

মূলত চীনের পরিবহন খাতকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব করার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এটি। দেশটির সরকার হাইড্রোজেন-চালিত যানবাহনের গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ভারী যানবাহনের জন্য তরল হাইড্রোজেন জ্বালানী ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে চীনের মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্পোরেশন। এই ব্যবস্থাটি পরিবেশবান্ধব এবং প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।

সম্প্রতি ১০০ কিলোগ্রাম ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ তরল হাইড্রোজেন সিস্টেমটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ভাবন করা হয়েছে। নতুন এ সিস্টেমটি ভারী ট্রাকে ব্যবহার করা হবে। এতে একবারের চার্জ দিয়ে ১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে।

চীনের মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কর্পোরেশন একজন বিশেষজ্ঞ জানান, পূর্বের জ্বালানী ব্যবস্থার তুলনায় নতুন এ সিস্টেমটিতে জ্বালানী সংরক্ষণে ২০ শতাংশ জায়গা কম লাগবে এবং জ্বালানী ব্যয় ৩০ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দেবে। ১০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হাইড্রোজেন ধারণক্ষমতাসহ এটি সিস্টেমের গুণমান, হাইড্রোজেন স্টোরেজ ঘনত্ব এবং রিফিলের সময়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই উদ্ভাবনটি ভারী যানবাহন শিল্পে বিপ্লব ঘটাতে পারে, যা পরিবেশ দূষণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে।

হাইড্রোজেনকে মাইনাস ২৫২ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শীতল করলে পাওয়া যাবে তরল হাইড্রোজেন। এটি একটি উচ্চ-শক্তির জ্বালানী, যার বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রকেট, বিমান, গাড়ির জ্বালানী। বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিভিন্ন শিল্প উষ্ণতা প্রদানে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া কিছু মেটাল ঢালাই এবং জোড়া লাগানোর কাজেও ব্যবহৃত হয় তরল হাইড্রোজেন।

 

|| প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

|| সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

 

নতুন আরও তথ্যবহুল ও অজানা বিষয় নিয়ে প্রতি সপ্তাহের সোমবার হাজির হবো আপনাদের সামনে। আগামী সপ্তাহে আবারো কথা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

 

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা- শুভ আনোয়ার

 

অডিও সম্পাদনা- নাসরুল্লাহ রাসু

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী