চীনের চলতি বছরের কেন্দ্রীয় এক নম্বর দলিলপত্রে বলা হয়েছে, ‘মহান কৃষি ও মহান খাদ্য ধারণা’ গড়ে তুলতে হবে এবং একাধিক পদ্ধতিতে খাদ্য উত্পাদন করতে হবে; খাদ্যের উত্সের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং হুনান প্রদেশ পরিদর্শনকালে পুনরায় ‘মহান কৃষি ও মহান খাদ্য ধারণা’ বজায় রাখার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। তিনি বলেন, ইতিবাচকভাবে বৈশিষ্ট্যময় কৃষি ও কৃষিপণ্যের উত্পাদন উন্নত করতে এবং কৃষির শিল্পায়নের মান উন্নত করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে: ‘মহান খাদ্য ধারণা’ মানে কী? আসলে, ফুচিয়ান প্রদেশে কাজ করার সময় সি চিন পিং নিজের লেখা ‘দারিদ্র্যবিমোচন’ শীর্ষক একটি গ্রন্থে এ ধারণার কথা প্রথম উল্লেখ করেন।
‘মহান খাদ্য ধারণা’-তে ধান ও গম ছাড়াও, সবজি ও ফল অন্তর্ভুক্ত আছে। এ ছাড়া, মাংস, ডিম, দুধ ও মাছসহ বিভিন্ন পশুখাদ্য এবং অণুজীব, সিন্থেটিক পদার্থ ও অন্যান্য ভোজ্য খাবার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বস্তুত, যেকোনো মানুষের স্বাভাবিক জীবনের চাহিদা মেটাতে পারে ও মানুষের খাওয়ার উপযোগী সবকিছুই খাদ্য বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
চীনা জনগণের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। চীনা মানুষ প্রধান খাদ্যের ব্যবহার কমাচ্ছে এবং অ-প্রধান খাদ্যের গ্রহণ বৃদ্ধি করছে। পাশাপাশি, খাদ্যের ধরন ও পুষ্টির সমন্বয়ের বৈচিত্র্যের দিকেও তাঁরা মনোযোগ দিচ্ছেন। আগে যে খাবারগুলোকে আমরা ‘নন-স্ট্যাপল ফুড’ বা ‘অ-প্রধান খাদ্য’ বলতাম, তা আমাদের প্রধান খাবারে পরিণত হয়েছে। অতীতে খাদ্য উত্পদানের প্রধান উত্স ছিল আবাদি জমি। আর এখন, ১২.৭ কোটি হেক্টর আবাদী জমি ছাড়াও, ২০ কোটি হেক্টর বন, ৪০ কোটি হেক্টর তৃণভূমি ও ৩০ লাখ বর্গকিলোমিটারের সমুদ্রাঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার উত্পাদিত হচ্ছে।
বর্তমানে চীনে খাদ্যশস্যের উত্পাদনের পরিমাণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। চাষের জমি ও জলজ সম্পদের ব্যবহারের ওপর আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জমির আয়তন সম্প্রসারণের মাধ্যমে উত্পাদনের সুযোগ কম। তাই, সীমাবদ্ধ জমিতে ফলন বৃদ্ধি শস্য উত্পাদন বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হয়ে উঠেছে। চলতি বছর ব্যাপকভাবে শস্য উত্পাদনের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে চীন।
খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য এলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি শক্তিশালী হতে পারে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বড় দেশ। খাবারের সমস্যা সমাধান ও খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের ‘মহান খাদ্যের ধারণা’ গড়ে তুলতে হবে; স্থল ও সমুদ্র থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে হবে।
এদিকে খাদ্য উত্পাদন খাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাড়াতে হবে। ঐতিহ্যবাহী কৃষি একটি সম্পদ এবং শ্রম-নিবিড় শিল্প। উত্পাদন-পদ্ধতি, যা নিবিড়ভাবে সম্পদ ও পরিবেশকে শোষণ করে, প্রায়ই টেকসই হয় না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসমাজের চাহিদা ও সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। প্রজনন, শিল্প ও বিভিন্ন মানদণ্ড নিয়ে গঠিত ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই গড়ে তোলা হয়েছে। কৃষি ও খাদ্য খাতে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ এগিয়ে নেওয়া হবে। ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সরবরাহ জোরদার করতে হবে, যাতে ‘মহান খাদ্য ধারণা’ বাস্তবায়ন করা যায়।
‘মহান খাদ্য ধারণা’ অনুযায়ী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে জল, ভূমি সম্পদ ও শ্রমের একক শেকল থেকে মুক্তি পেতে হবে। আমাদের সবুজ ও উচ্চ মানের উন্নয়ন বজায় রাখতে হবে, যাতে টেকসই খাবারের সরবরাহ বাস্তবায়ন করা যায়।
১৪০ কোটি মানুষের খাবার নিশ্চিত করা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমাদের অবশ্যই বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে খাদ্য নিরাপত্তার মর্ম বুঝতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে। খাদ্যের বৈচিত্র্যে বাড়াতে হবে। চীনা বৈশিষ্ট্যময় খাদ্য-নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
সিএমজি, বেইজিং থেকে মুক্তা। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)