‘বিজনেস টাইম’পর্ব- ১২
2024-05-10 10:00:13

চীন  চীনের বাইরের দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যঅর্থনীতি-উন্নয়নের হালচাল নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘বিজনেস টাইম

বিজনেস টাইম’ য়ের এই পর্বে থাকছে:

১। বিগত  ৬০ বছরে চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক

২। বিশ্ববাজারে বাড়ছে  চীনা লজিস্টিক পরিষেবা

৩। চীনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এগিয়ে নিতে পারে বিশ্বকে

 

বিগত  ৬০ বছরে চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক

গত ৬০ বছরে চীন ও ফ্রান্সের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য সহযোগিতার প্রসার ঘটেছে। দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সরাসরি পারস্পরিক বিনিয়োগও ক্রমাগত বাড়ছে। একনজরে চীন-ফ্রান্স অর্থনীতি।

চীন-ফ্রান্স এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার এবং বিশ্বে সপ্তম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ফ্রান্স ও চীন তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। বিগত ৬০ বছরে এই দুই দেশের মধ্যে ৮০০টিরও বেশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে।

ফ্রান্সের বেশ কিছু পণ্য যেমন গরুর মাংস, ওয়াইন, জেলি ও পনির চীনে বেশ জনপ্রিয়। অপরদিকে ফ্রান্সের মানুষের কাছে চীনের তৈরি এয়ার ফ্রায়ার, রাইস কুকার, ফ্রিজ ও টিভি জাতীয় গৃহস্থালি পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে।

চীনের আছে ম্যানুফেকচারিং যন্ত্র, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, মেশিনারি যন্ত্রপাতি।

অপরদিকে ফ্রান্সের উচ্চমানের ভোগ্যপণ্য, উড়োজাহাজ প্রযুক্তি ইত্যাদি। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের সূত্রমতে, ২০২১ সালে চীনে ফ্রান্সের বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৮৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার, ২০২২ এ ৮০.৭৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালে ছিল ৭৮.৯৩ বিলিয়ন ডলার। চীনে এখন ফ্রান্সের প্রায় দুই হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৩ লাখ কর্মী কাজ করছে।

 ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে  চীনে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ ফ্রান্স। ৯০০ বেশি ব্যবসার মধ্য দিয়ে ২০২২ এ এশিয়ার মধ্যে ফ্রান্সেই ছিল চীনের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ। দেশটিতে চীনের এফডিআই রয়েছে ৪ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের।

 

।। প্রতিবেদন: শাহানশাহ রাসেল

।। সম্পাদনা:  ফয়সল আবদুল্লাহ

 

বিশ্ববাজারে বাড়ছে  চীনা লজিস্টিক পরিষেবা

বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স বাজার চীন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই বাজার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দেশটির কুরিয়ার পরিষেবার চাহিদা। আর এ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এবং বিশ্ববাজারে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চীনের কুরিয়ার কোম্পানিগুলো তাদের ই-কমার্স লজিস্টিক পরিষেবা আরও উন্নত করছে। পাশাপাশি একটি শক্তিশালী ডেলিভারি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে।

চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপ হোল্ডিং লিমিটেডের লজিস্টিক শাখা সাইনাও গ্রুপ। স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম এবং যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশকিছু দেশে ই-কমার্স লজিস্টিক পরিষেবা প্রদানে বেশ আস্থা অর্জন করেছে এই সাইনাও গ্রুপ। সম্প্রতি কোম্পানিটি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য ডেলিভারির গ্যারান্টি দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইউরোপীয় গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই তাদের এমন উদ্যোগ। এর ফলে আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ডেলিভারি সেবা নিশ্চিত করা যাবে।

গত সেপ্টেম্বরে স্পেন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়ামের চারটি ইউরোপীয় বাজারে ডেলিভারি সেবা শুরু করে সাইনাও গ্রুপ। সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স এবং পর্তুগালে কার্যক্রম বিস্তৃত করছে তারা।

 

বিশ্বব্যাপী লজিস্টিক শিল্পে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করছে সাইনাও।

 

দেশটির কাস্টমস প্রশাসনের তথ্যানুসারে, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিনমাসে চীনের ক্রস বর্ডার ই-কমার্স আমদানি এবং রপ্তানি হয়েছে ৫৭৭ দশমিক ৬  বিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।

এদিকে চীনা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম জেডির লজিস্টিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জেডি লজিস্টিকস। গেল মার্চ মাসে এ কোম্পানিটিও তাদের আন্তর্জাতিক ডেলিভারি পরিষেবা আরও বিস্তৃত করার ঘোষণা দিয়েছে।

।। প্রতিবেদন: শুভ আনোয়ার

।। সম্পাদনা:  শাহানশাহ রাসেল

 

চীনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এগিয়ে নিতে পারে বিশ্বকে

মূলত তিনটি শিল্পখাত চীনের পরিবেশবান্ধব সবুজ প্রযুক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে। এগুলো হলো নতুন জ্বালানির গাড়ি, সৌর প্যানেল ও লিথিয়াম ব্যাটারি। সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে সবেচেয়ে কম খরচেই এগুলো উৎপাদন করছে চীন। এতেই উপকৃত হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ। চীনের কারণে এখন তারাও কম খরচে নিজেদেরকে আরও পরিবেশবান্ধব করার সুযোগ পাচ্ছে।

চায়না ডেইলিকে সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটা বলেছেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাস্টিন ইফু লিন।

লিন বলেন, মন্দা থেকে বেরিয়ে এসে কোনো দেশ যখন তার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে চায়, তখন তার উচ্চমানের পণ্যের পাশাপাশি একটি ন্যায়সঙ্গত বাজারদরও ঠিক করতে হয়। চীনের এ সুবিধাটিই রয়েছে এবং এগুলো নিয়েই চীন বিশ্বব্যাপী উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা কার্যক্রম চালাতে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু দেশ চীনের এই নতুন তিন পরিবেশবান্ধব শিল্পে তথাকথিত ‘ওভারক্যাপাসিটি’র যে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে, সেটা জবাব হিসেবেই মূলত এমনটা বলছিলেন লিন।

সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক লি তাওখুই চায়না ডেইলিকে বলেছেন, পশ্চিমাদের  ওভারক্যাপাসিটির অভিযোগটাই অতিরঞ্জিত এবং বিশ্বায়নের মূলভাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি যে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তা হলো—নতুন দিনের বিশ্বায়নের জন্য চীন তাদের নতুন জ্বালানির পণ্য, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কাঁচামালগুলোকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু এ কাজে পশ্চিমের অনেক দেশ অংশ নিতে চায় না।

 আবার গ্লোবাল কনসালটেন্সি রিস্টাড এনার্জির সিনিয়র বিশ্লেষক মা ইনছিওং বলেছেন, অনুন্নত দেশগুলোর কাছে খরচটাই বড় বাধা। চীনের কাঁচামালের কারণেই কিন্তু তারা পণ্যের উৎপাদন খরচ কমাতে পারছে এবং দ্রুত পরিবেশবান্ধব উৎপাদনে যেতে পারছে।

চীন এরইমধ্যে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পরিবেশবান্ধব নানা প্রকল্পে প্রায় ৩ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ঋণ দিয়েছে। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে এ তথ্য।

তবে এর মাঝে পশ্চিমাদের নানা অভিযোগে যাতে বাদবাকি বিশ্ব বিভ্রান্ত না হয়, সে জন্য চীনের নতুন জ্বালানির গাড়ি প্রসঙ্গে লি তাওখুই বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো চীনের দিকে এক চোখেই তাকিয়ে আছে। তারা এটা জানে না যে, চীনের পরিবেশবান্ধব তিনটি শিল্পখাত বহুমাত্রিকভাবেই এগোচ্ছে।

বিষয়টা বোঝানোর জন্য বেশ মজার একটি উদাহরণ দিয়েছেন লি। তিনি বলেছেন, চীনের পরিবেশবান্ধব উৎপাদনকে যদি একজন জিমন্যাস্টের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে পশ্চিমারা হলো বোকা দর্শক।

তারা ভয় পাচ্ছে, প্রদর্শনীর মাঝপথে না আবার ওই জিমন্যাস্ট পড়ে যায়। কিন্তু এক জিমন্যাস্ট যে অনেক কিছুর ভারসাম্য ঠিক রেখে নিখুঁতভাবে ল্যান্ড করতে পারেন তা তারা জানে না।

 

।। প্রতিবেদন: ফয়সল আবদুল্লাহ  

।। সম্পাদনা:  শাহানশাহ রাসেল

প্রযোজনা ও  উপস্থাপনা: শাহানশাহ রাসেল

অডিও সম্পাদনা: নাজমুল হক রাইয়ান

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: ফয়সল আবদুল্লাহ

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী